সাজিয়া আক্তার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাস পর নতুন সংসদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। নতুন সরকার ও সংসদ গঠন করে আওয়ামী লীগ যখন টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনায় তখন দলটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই স্তিমিত। গত একমাসে রাজপথেও সেভাবে দেখা যায়নি দলটিকে। সুনির্দিষ্ট কোন কর্মপরিকল্পনার কথাও জানেন না দলটির নেতা-কর্মীরা। সূত্র : বিবিসি বাংলা
বিএনপির নেতারা বলছেন, আপাতত দল গুছিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকেই নজর দিচ্ছেন তারা।
ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কার্যালয়ের পুরো ভবনটি জুড়েই কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলছে। কার্যালয়ের সামনে দলটির কোন নেতা-কর্মী চোখে পড়লো না। ভবনটির তৃতীয় তলায় বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও কৃষকদলের অফিস। সবকটিই তালাবদ্ধ। এখানেও কোন নেতা-কর্মীকে দেখা গেলো না।
গত একমাসে বিএনপি'র কর্মসূচি বলতে শুধুই এই মানবন্ধন। গত এক মাসে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় অফিসে দলীয় কার্যক্রম বলতে শুধুই প্রেস ব্রিফিং।সেসময় দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী কার্যালয়ে ভীড় করলেও বাকি সময় একরকম নেতা-কর্মী শূণ্যই থাকে পুরো এলাকা। তাহলে কি দলের কার্যক্রম একরকম স্থবির হয়ে পড়লো?
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য, নেতা-কর্মীদের আনাগোনা হয়তো কম। তবে সেটা সাময়িক। এতোবড় একটা ভোট ডাকাতি হয়ে যাওয়ার পর এখন পুরো দেশবাসীই তো স্তম্ভিত, নির্বাক। সেখানে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তো সেভাবে স্বাভাবিক স্বতস্ফুর্ততা থাকার কথা নয়। তারপরও নেতা-কর্মীরা পরবর্তী করণীয় কী হবে তা জানার জন্য খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রথম দিকে একটু কম হবেই, তবে এখন নেতা-কর্মীরা আবারো স্বতস্ফূর্ত হয়ে উঠছেন।
গত একমাসে রাজপথে বিএনপির একমাত্র কর্মসূচি ছিলো ঢাকায় একটি মানববন্ধন। এছাড়া কর্মীদের একটা বড় অংশই একাধিক মামলার মুখোমুখি। কারাগারেও আছেন অনেকে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, আপাতত দল গোছানোর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন তারা। আমরা এই মুহূর্তে সবেচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি কর্মী বাহিনীকে সুসংগঠিত করার উপর। পাশাপাশি বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আইনী লড়াই চলছে। আমরা আপতত: কিছু সফট এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যাচ্ছি আমাদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য। আশাকরি সেটা অচিরেই হয়ে যাবে। এরপরই আমরা আন্দোলনের প্রচলিত কর্মসূচিতে রাজপথে নামবো।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, ইতোমধ্যেই কেন্দ্র থেকে প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা করে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে সেই প্রতিনিধি দলগুলো সাংগঠনিক সফরও করেছে। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি, অঙ্গসংগঠনসহ সবকিছুই এর আওতায় আসবে।
কিন্তু একদিকে পরিস্থিতি নিয়ে নেতা-কর্মীদের হতাশা অন্যদিকে নির্বাচন এবং এর আগে-পরে দলের কর্মকৌশল নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।
যদিও দলের ঐক্য ও ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে দলের মধ্যে কোন বিরোধ নেই বলেই দাবি করছেন বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বিএনপি দল হিসেবে অটুট, ঐক্যবদ্ধভাবে চলছে। বিএনপির নেতৃত্বে কোন সমস্যা নাই। দলীয় সাংগঠনিক কাজও চলছে। কর্মসূচি যখন যেটা প্রয়োজন, সেটা দেয়া হবে। বাংলাদেশে এখন যে সমস্যা, সেটা কোন দলের সমস্যা নয়। এটা জাতীয় সমস্যা।
দলের নেতারা জানাচ্ছেন, বিএনপি ভবিষ্যতে কী কর্মসূচি দেবে তা এখনই বলার সময় আসেনি। তবে এটা নিশ্চিত যে, এসব কর্মসূচিতে তারা সরকারবিরোধী সব দলগুলোকেই কাছে টেনে কার্যকর জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করবেন। তবে তার আগে আপাতত দল গোছানোর উপরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।