বিভুরঞ্জন সরকার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় তার সহকর্মীদের কথাবার্তায় সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সবাইকে অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সতর্ক বাণী নতুন মন্ত্রীরা মেনে চলবেন বলে আমরা আশা করি। কারণ মন্ত্রীদের অতিকথন সরকারের জন্য অনেক সময় ভালো হয় না। অতীতে দেখা গেছে, দু-চারজন মন্ত্রীর অসংলগ্ন অথবা বেফাঁস কথাবার্তার জন্য সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনও দেখা গেছে যে, বিরোধী দল সরকারকে চাপে ফেলতে না পারলেও কোনো কোনো মন্ত্রীর অসংযত বা বেফাঁস কথায় সরকার বেশি চাপে পড়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদে সরকারি দলের ‘ব্রুট মেজরিটি’ গণতন্ত্রের জন্য একটি নাজুক অবস্থা তৈরি করেছে। শক্তিশালী বিরোধী দল গণতন্ত্রের একটি কার্যকর উপাদান। কিন্তু বর্তমান সংসদে বিরোধী দলের অবস্থান খুবই দুর্বল। কারা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবে, সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রীকেই নির্দেশনা দিতে হচ্ছে। তবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার বাইরে নেই বলেই সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ অবারিত থাকবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তারা তাদের সমালোচনা যথাযথভাবে করতে পারবেন। এখানে আমরা কোনো বাধা সৃষ্টি করবো না’।
প্রধানমন্ত্রী এখন শুধু আওয়ামী লীগের প্রধান নন, তিনি সরকার প্রধান হিসেবে কার্যত দেশের সব মানুষের অভিভাবক। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণেও তিনি এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। দলের ঊর্ধ্বে উঠতে পারাটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না বলেই সমস্যা তৈরি হয়, জটিলতা দেখা দেয়। বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের সরকার না হয়ে সব মানুষের সরকার হতে পারলে দেশের রাজনীতি থেকে বিদ্বেষ কমার অবস্থা তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সহকর্মীদের কাজের তদারকি, তাদের ওপর নজরদারি অবশ্যই করবেন। তবে তার ওপর সব কিছুর জন্য নির্ভরতা একটি গতিশীল সরকারের উদাহরণ সৃষ্টি করবে না। মন্ত্রীদের দায়িত্ববান হতে হবে, প্রশংসিত হতে হবে, সমালোচনা মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
যে পরিবারে একজন আয় করেন, অন্যরা ব্যয়, অপব্যয় এবং অপচয় করেন সে পরিবারে যেমন স্থায়ী সঞ্চয় গড়ে ওঠা কঠিন, তেমনি যে সরকারকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর সুনাম-উপার্জনের ওপর ভরসা করতে হয়, সে সরকারেরও স্থায়ী সঞ্চয় ও আমানত গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে, চিন্তা দিয়ে যে সুনাম দিয়ে অর্জন করছেন তা যদি তারই কিছু অমিতচারী সহযোগী-সমর্থকের কারণে ধরে রাখা না যায় তাহলে একসময় গিয়ে সঞ্চিত পুঁজিতে টান পরবে।
নতুন যাত্রায় পুরাতন ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই দেশের মানুষ আশা করেন।
লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়
আপনার মতামত লিখুন :