সমকাল : রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। দুর্ঘটনা ও যানজট কমাতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং সড়কে যান চলাচলের শৃঙ্খলা ফেরাতে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নয়নে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে ২৯টি প্রস্তাবনা দিলে তাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দেয়। এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হলেও ৬ মাসের মধ্যেই থেমে গেছে তা। ভাটা পড়েছে উদ্যোগে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৯ প্রস্তাবনার মধ্যে মাত্র একটি বাস্তবায়ন হয়েছে। একটি প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও ৬টির কার্যক্রম বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ২১টি আংশিক বাস্তবায়ন হলেও তা পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় কোনো সুফল মিলছে না। এতে ঢাকায় যেমন ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরেনি, তেমনি কমেনি যানজট। শৃঙ্খলার অভাবে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে। শুধু গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিহত হয়েছেন অন্তত চারজন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর ২৯ প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, রাজউক, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থা সম্পৃক্ত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ সংস্থাগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হলেও তা থেমে গেছে। ফলে পুরো বিষয় তুলে ধরে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
যে ৬ প্রস্তাবনার অগ্রগতি নেই : প্রস্তাবনাগুলোর অন্যতম ছিল ভবন নির্মাণের সময় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। যাতে করে যানজট নিয়ন্ত্রণে ওই ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। প্রস্তাবনায় এটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে নাম রয়েছে দুই সিটি করপোরেশন।
কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি নেই। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন বাসরুট ফ্র্যাঞ্চাইজ করার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তার বাস্তবায়নেও অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে স্কুলবাসের প্রস্তাবনায় পুলিশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বাস্তবায়নের জন্য বলা হলেও এরও অগ্রগতি নেই। পুশ-বাটন পদ্ধতিতে পথচারী চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশনকে এলাকা চিহ্নিত করে দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি তা। এ ছাড়া এলিভেটেড পার্কিং ব্যবস্থা এবং ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং ব্যবস্থার প্রস্তাবনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
যে ২১ প্রস্তাবনা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে : প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে বাস স্টপেজ উন্নতকরণ, অনস্ট্রিট পার্কিং, রোড ডিভাইডার ঊর্ধ্বমুখীকরণ, গণপরিবহনের শৃঙ্খলা, রোড মার্কিং নিশ্চিতকরণ, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা, দক্ষ চালক তৈরি করা, বিভিন্ন সড়ক রিকশামুক্ত করা, রাইড শেয়ারিং যাচাইকরণ, যানবাহন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা, বিআরটিসির নতুন বাস দিয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতকরণ, কমিউটার ট্রেন ব্যবস্থার উন্নয়ন, উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহূত নির্মাণ সামগ্রীর অপ্রয়োজনীয় অংশ দ্রুত অপসারণ, আধুনিক করিডোর, পূর্ব-পশ্চিম বরাবর সড়ক চালুকরণ, অংশীজনদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করা, ইন্টারসেকশন ব্যবস্থাপনা, ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার, হর্ন ব্যবহার সীমিত ও হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করা, মেট্রোরেল কাজ চলাকালে ডিএমপি ও মেট্রোরেলের সঙ্গে বৈঠক, ডিএনসিসি প্রস্তাবিত ইউলুপ নির্মাণ কাজ।
গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ, বিআরটিসি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্নিষ্ট সংস্থায় চিঠি দিয়ে এসব প্রস্তাবনা পুরোপুরি বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছেন।
শুধু সম্পন্ন হয়েছে ট্রাফিক কারিগরি ইউনিটের ব্যবহার : ২৯টি প্রস্তাবনার মধ্যে ট্রাফিক কারিগরি ইউনিটের ব্যবহার সম্পন্ন হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে ডিএমপির ট্রাফিক কারিগরি ইউনিটে ৩৯ জন জনবল মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমটি চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম সমকালকে বলেন, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এর সঙ্গে আরও নানা সংস্থা জড়িত। তাই সমন্বিতভাবেই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য কোন সংস্থার কতটুকু দায়িত্ব রয়েছে, কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা জানিয়ে সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে ট্রাফিক শৃঙ্খলায় দৃশ্যমান পরিবর্তনও হয়েছে।