শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:২০ সকাল
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:২০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে কোনো রূপান্তরের অন্তত দুটো শর্ত লাগে

ফিরোজ আহমেদ : এক বন্ধু সংশয় নিয়ে জানতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির ভাগ সকলে কি করে পেতে পারেন? গণসংহতি আন্দোলন সকলের জন্য সমৃদ্ধি কথা বলে কি বোঝাতে চাইছে? এটা সম্ভব প্রগতিশীল ও কার্যকর কর ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। এমনকি উনিশ শতকেও ইউরোপীয় বিপ্লবী গণতন্ত্রীরা ও সমাজতন্ত্রীরা এটা জানতেন, তাদের মহত্তম কাজগুলোতে ‘ক্রমোন্নতিশীল কর-ব্যবস্থা’ কার্যকর করার কর্মসূচি তারা দিতেন। তাদের সেই সংগ্রামের ফল হলো বেশিরভাগ পুরনো গণতান্ত্রিক দেশে কম কিংবা বেশি আকারে এটা অনেকটাই কার্যকর হয়েছে।

এই ক্রমোন্নতিশীল করব্যবস্থার মোদ্দা কথাটা হলো, সকলে সমান কর দেবে না। যে যতো বেশি আয় করবে, সে ততো বেশি হারে কর দেবে। যার আয় যতো কম, সে দেবে ততো কম কর। আমাদের দেশে যেটা হয় একেবারে উলটো, গরিব মানুষই এখানে রাষ্ট্রের যে আয়, তার প্রধান অংশটা দেয়। যেমন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর থেকে আয় ৩৫ ভাগের মতো, পরোক্ষ কর থেকে আয় ৬৫ ভাগের কাছাকাছি। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের আয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ দিয়েছে সাধারণ মানুষ! অথচ সম্পদের বেশির ভাগ মালিক তারা নন। ধনীদের আয়ের ওপর কর আরোপ এবং আদায় দুটোই খুবই কম বলেই গরিব মধ্যবিত্তের কেনা সব পণ্যের ওপর কর বসানো হচ্ছে। পরোক্ষ করের বোঝা ক্রমাগত বাড়ছেই। ধনীদের কাছ থেকে আদায় করা আয়করের দিক থেকে আমরা দুনিয়ার মাঝে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটা। মিলিয়ে নিতে পারেন ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ তো বটেই, মালয়েশিয়া কিংবা ভারতের সাথেও। অথচ জনসংখ্যার অনুপাতে কোটিপতির সংখ্যা আমাদের দেশে খুব কম নয়।

শুধু আয়কর না। আরও নানান কর আদায়ের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধির ভাগ সকলে পেতে পারেন। যিনি আলো জ্বালান সন্তানের পড়াশোনার জন্য, আর যিনি আলো জ্বালান আলোকসজ্জার জন্য, দুজনের জন্য বিদ্যুতের দাম আলাদা করতে হবে। যিনি কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্যই কেবল গ্যাস ব্যবহার করেন, আর যিনি ঘুরতে যাবার জন্য, তার জন্য আলাদা করে। গাড়ি ধোঁয়ার পানি আর খাবার পানির দাম কি করে এক হয়? অর্থাৎ বিদ্যুৎ তেল-গ্যাস যিনি যতো কম ব্যবহার করবেন, তার জন্য ততো কম হবে, ন্যূনতম ব্যবহারের জন্য এর দাম খুব কমিয়ে দিয়ে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে যিনি যত বেশি বিলাসের জন্য তা ব্যয় করবেন, তত বেশি তার ওপর কর আরোপ করে। এর জন্য এর নাম হলো ক্রমোন্নতিশীল কর।

এই বাড়তি করের অর্থ যাবে রাষ্ট্রীয় খরচে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-যাতায়াত ব্যবস্থার মান ভালো করতে। সেগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে। খেয়াল করবেন, সমৃদ্ধির ভাগ সবাইকে দেয়া মানে সকলকে এখনই সমান করে দেয়ার ধোঁকা নয়।

বহু বন্ধু সমাজের আমূল রূপান্তর ঘটাতে চান। যেকোনো রূপান্তরের অন্তত দুটো শর্ত আছে। প্রথমত, ইতিহাস সেই নির্দিষ্ট পর্যায়ে কোন কোন রূপান্তরের জন্য বাস্তবতা তৈরি করেছে, সেই শর্তের ভিত্তিতেই পরিবর্তনের কর্মসূচি হতে হবে। পাঠ্যপুস্তক থেকে তা সবসময় মিলবে না। দ্বিতীয়ত, রূপান্তরের জন্য লাগবে জনগণের সমর্থন। বিপ্লবের বিমূর্ত ধারণা দিয়ে তা তৈরি হতে পারে কেবল অল্প কিছু মধ্যবিত্ত অসুখী চিত্তের মাঝে। জনগণের মাঝে জনসমর্থন তৈরি হতে গেলে চাই জনগণের মূর্ত চাহিদাগুলো মেটাবার কর্মসূচি এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় সেগুলো কীভাবে পূরণ সম্ভব, তা হাতে-কলমে দেখাবার সংগ্রামে যুক্ত থেকে জনগণের কাছ থেকে নৈতিক বৈধতা অর্জন।

লেখক : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়