আমিনুল ইসলাম হুসাইনী : উৎসবপ্রিয় বাঙ্গালীদের জন্য শীতকাল একটি আদর্শ ঋতু। তাই শহর নগর ও গ্রামাঞ্চলে শীত এলে আয়োজন করা হয় নানান উৎসবের। তবে সকল উৎসবেই মুসলমানদের জন্য ঢালাওভাবে অংশগ্রহণ করা সমীচীন কি? এই যেমন উৎসবের নামে নারী-পুরুষের অবাধ অংশগ্রহণে যাত্রাপালা, গ্রামীণমেলা, বাউল গানের মতো গুনাহের আসর।
একটা সময় ছিল যখন মুসলমানগণ না বুঝে এসব গুনাহের কাজে শামিল হতো। আলহামদুলিল্লাহ! মানুষজন এখন সেসব গুনাহের কাজ আঞ্জামের পরিবর্তে নেক আমলের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এখন তারা গ্রামে গ্রামে আয়োজন করছেন ওয়াজ মাহফিলের। এতে করে মুসলমানগণ তাদের ঈমান-আকিদা ও আমল সংশোধন করার যেমন সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি পাচ্ছেন পরকালের পাথেয় সংগ্রহের সহজপন্থাও।
ওয়াজ মাহফিল নিঃসন্দেহে আল্লাহভুলাদের আল্লাহর সঙ্গে জুড়ানোর অন্যতম মাধ্যম। তাই এর গুরুত্ব তুলে ধরে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নিজেই বলেন- ‘তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে। (সূরা তাওবা : ১২২) তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ওয়াজ-মাহফিল যেন আড়ম্বরপূর্ণ ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে না হয়। এই মাহফিলগুলো যেন হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও হেদায়াতের মাইলফলক। (দ্রষ্টব্য : সূরায়ে তাওবা, ১২২, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২২৪, বাইহাকী হাদীস নং ১৬৬৬)
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এখনকার ওয়াজ-মাহফিলগুলো যেন উৎসব বৈ আর আর কিছুই নয়। মাহফিল যেন আজ প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৬৮ হাজার এই গ্রাম বাংলার এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে প্রতিবছরই ওয়াজ-মাহফিল হচ্ছে না। এমনও গ্রাম রয়েছে, যেখানে বছরে দশ থেকে বারোটি পর্যন্ত ওয়াজ-মাহফিল হয়ে থাকে!
এই যে এতো এতো টাকা খরচ করে শত শত মানুষ জমায়েত করা হয় মাহফিলে তাদেরকে যদি দ্বীনের কিছু নির্যাসই না দেয়া যায়, তাহলে কী লাভ এসবের? আমরা মাহফিল করি নেক আমলের জন্য; অথচ আমাদের কিছু ভুলের কারণে এই মাহফিলগুলো হয়ে ওঠছে গুনাহের উপলক্ষ।
চুক্তি করে ওয়াজ করে এমন বক্তাকে দাওয়াত না দেয়াই উত্তম। আল্লাহ পাক বলেন- ‘অনুসরণ কর তাদের, যাঁরা তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় কামনা করে না। অথচ তাঁরা সুপথ প্রাপ্ত।’ (সূরা ইয়াসিন : ২১) হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা কর। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। (মুসনাদে আহমদ : ১৯৯১৭) অন্যত্র এসেছে- ‘যে ভাষার প্রাঞ্জলতা শিখে মানুষের অন্তরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোনো ফরজ ও নফল ইবাদতসমূহকে কবুল করবেন না।’ (মিশকাত : ৪১০)
ওয়াজ মাহফিল যেন অপচয়ের ক্ষেত্র না হয় সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। ওয়াজের নামে ভিত্তিহীন কিচ্ছা-কাহিনী বলে মূল্যবান সময় যেন নষ্ট না হয় সেজন্য ওয়ায়েজদের উচিৎ কুরআন-হাদিসের সমন্বয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা। ইদানিং মাহফিলে এই বক্তা ওই বক্তার কুৎসা রটানো, কাফের বলে ফতোয়া দেয়া, জনসাধারণকে ভুল বুঝিয়ে মুসলমানদের মধ্যে ফাটল ধরানোর মতো সাঙ্ঘাতিক ফেতনাও ছড়িয়ে থাকেন। যা মুসলমানদের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার, মাহফিল মানেই লোক জমানো নয়। মাহফিল হচ্ছে বেহেশতের বাগান। তাই আমাদের মাহফিল হোক লৌকিকতা মুক্ত।
আপনার মতামত লিখুন :