শিরোনাম
◈ ডোনাল্ড লু’র ছয়দিনের সফর শুরু, ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ আসছেন ১৪ মে ◈ লোহাগড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু ◈ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস  ◈ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা চার জয় বাংলাদেশের ◈ বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের তথ্য-ছবি ফাঁস ◈ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আন্দোলন ঠেকাতে দমনপীড়ন, নিন্দা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ গাজার রাফাহজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও বোমাবর্ষণ ◈ কোনো ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে উড়োজাহাজের মূল্য পরিশোধ করছে বিমান ◈ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে: ওবায়দুল কাদের ◈ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা শেষ, এখন চলবে ফাইজার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪৬ রাত
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিজয় দিবসের বিশেষ নাটক “ব্যানার”

আবু সুফিয়ান রতন : ব্যানার লিখায় ব্যস্ত শিবান্দ বাবু শিবুদা (৭০) সহকারী কিশোর বিট্টু (১০) রেল লাইনের পাশে অন্যান্য ছোট্ট একটি জায়গায় সাইন বোর্ড লিখার দোকান করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। স্ত্রী শৈলানী দেবী (৬০) কলেজ পড়ুয়া মেয়ে মাটি ও,টোকাই বিট্টুকে নিয়ে তার সংসার।

ছাত্র জীবনে মেধাবী হলেও, ছাত্র রাজনীতির সাথে গভীর ঘনিষ্ঠ থাকায়, পার্টির ব্যানার, ফেষ্টুন,চিকা লিখতে লিখতে কখন যে জীবনের মূল্যবান সময়টুকু পার করে দিয়েছে, আজ ইচ্ছে করলেও মনে করতে পারেনা। ছাত্র জীবনে ভাল আকিয়ে ছিল শিবুদা। তাই পোষ্টার, ব্যানার, চিকার দ্বায়ীত্ব ছিল তার উপর। নিষ্ঠার সাথে দ্বায়ীত্বটা পালন করতে গিয়ে চাকরীর বয়েসটাও কখন পার করে ফেলে শিবুদা জানেনা। পরের জীবনে শৈলানী দেবীর ভালোবাসার কাছে হার মেনে শিবুদা জীবন সংসারে পা রেখে বুঝতে পারে বাস্তবতাটা কত কঠিন। কোথাও ভাল একটা চাকরী জোগাড় করতে না পেরে, স্বাধীনচেতা শিবুদা প্রয়োজনের তাগিদে ব্যানার লিখে সংসারের খরচ মিটাতে থাকে। শত চেষ্টা করেও শিবুদা ব্যানার লেখার গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এরই মধ্যে কন্যা সন্তানের জনক হওয়ায় দ্বায়ীত্বটা আরও ভারী হয়ে শিবুদার ঘাড়ে চেপে বসে। এভাবেই চলছে শিবুদার সংসার জীবন।

সাহসী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবুদা স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অনেক অবদান থাকলেও মুক্তিযুদ্ধকে পুজি করে কোন বাড়তি সুবিধা না নেয়ার দলের একজন। মানসিক দিক দিয়ে যেমনি উদার, তেমনি একজন সাদা মনের মানুষ। বয়েসের ভারে নুইয়ে গেলেও, এখনও যে কোন মানুষের বিপদ আপদে পাশে থাকার অভ্যাসটা ত্যাগ করতে পারেনি। দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও দেশপ্রেম লালন করায় - ঐ ঘরনার সমস্ত কাজই শিবুদাকে দিয়ে করিয়ে নিলেও পারিশ্রমিকটা কোন কালই শিবুদা ঠিক মতো বুঝে নিতে পারেনি - যার ফলে আর্থিক সচ্ছলতার দেখা শিবুদা কোন দিনই দেখেনি। এ নিয়ে শিবুদার কোন হায় হুতোসও নেই। স্বল্পভাষী শিবুদা অভাব অনটন নিয়ে তার কোন কালেই মাথা ব্যাথা আগেও ছিলনা, এখনও নেই।
স্ত্রী শৈলানী দেবীও শিবুদার সংসারের দারিদ্রতাকে জয় করে, মেয়ে নিয়ে হাসিমুখে নিঃশব্দ সংসারের হাল ধরে আছে । কোন অভিযোগ নেই ভালবাসার মানুষ শিবুদার প্রতি। যখন যে রকম সে রকমই মানিয়ে নিয়ে এতটা বছর পার করে দিয়ে এসছে। দুজনের বুঝাপড়াটা অনেকটা রবোটিক। এরা ইশারায় চলতে অভ্যস্থ। দুজনের প্রতি দুজনের মমত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রকাশ্যে না থাকলেও প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠজনদের অবাক করে।

অন্যদিকে বিজয় দিবসের দিন এগিয়ে আসায় সহপাঠি ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা প্রতিবারের ন্যায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে শিবুদার সাথে আলোচনার এক পর্য়ায় এবারের বিশেষ অতিথী ও প্রধান অতিথী কাদের নির্বাচন করবে এ বিষয় পরামর্শ চায়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান আছে এমন উপযুক্ত ব্যাক্তিকেই প্রধান অতিথীর আসনটিতে বসানো উচিৎ বলে সবাইকে বিদায় করে।

প্রধান অতিথীর জন্য উপযুক্ত একজন মানুষকে খুঁজে বের করা যে এ সমাজে কত কঠিন। সেটা খুঁজতে গিয়ে বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের কর্মীরা একসময় হাঁপিয়ে উঠে। অনেক খুঁজাখুঁজির করে উপযুক্ত কাউকে খুঁজে না পেয়ে সবাই হতাশ হয়ে পাড়ার ক্লাবের অফিসে বসে ভাবতে থাকে - এমন সময় হাফিজ আচমকা সবার উদ্দেশে বলে ওঠে পেয়েছি ...... শিবুদা উচ্চশিক্ষিত , সাহসী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সুখ - দুখে মানুষের পাশে থাকা একজন সাদা মনের দেশ প্রেমিক মানুষ। বিজয় দিবসের প্রধান অতিথীর জন্য এই মানুষটির বিকল্প নেই । সবাই এক সাথে বিষয়টি সমর্থন করে শিবুদাই এবারের বিজয় দিবসের প্রধান অতিথী সিদ্ধান্ত হয়ে যায় শিবুদার অগোচরে।

এদিকে - মানসিকভাবে দেশপ্রেমিক ও সাংস্কৃতিমনা শিবুদা দেশের প্রতিটি উৎসবই মনে প্রানে পালন করতে অভ্যস্থ। বছরের শেষ দিক - বিজয় দিবস এগিয়ে আসছে। কাজের চাপ ও বাড়তে থাকে। অন্যান্য কাজের মধ্যেও, বিজয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কাজ গুলো - মনে প্রানে স্বাধীনতার চেতনা লালনকারী শিবুদা ফিরিয়ে দিতে পারেনা। ফলে কাজের চাপ বাড়তে থাকে যেমন, তেমনি মেয়ে মাটির সেমিষ্টার ফির টাকা জমা দেয়ার দিনও ঘনিয়ে আসে। মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম ও মেয়ে মাটির সেমিষ্টারের টাকা শিবুদাকে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে দূর্বল করে দিতে থাকে। আজ রাত বারটা এক মিনিট থেকে বিজয় দিবসের দিন শুরু হবে। বিজয় দিবসের কাজগুলো শেষ করতে মরিয়া শিবুদা। বিকাল থেকেই শিবুদার শরীরটা ভাল লাগছিলোনা - মাঝে মাঝে বুকে পেইন অনুভব করে। চা - আর সিগারেটে অভ্যস্থ সিবুদা, বিষয়টি পাত্তা দিতে চায়না। এক সময় - বিজয় দিবসের ব্যানার লিখতে লিখতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় দিবসের ব্যানারের উপরই ঢলে পড়ে ,উপযুক্ত মানুষটির প্রধান অতিথীর আসনে বসা হয়ে ওঠেনি এ ভাবেই - গল্পটি শেষ হবে .........

অভিনয়ে: মামুনুর রশীীদ, শেলি আহসান, পিরজাদা হারুন, উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মহসিন পলাশ, কাঞ্চন প্রসাদ, রুপম চেীধুরী, সাজু মাহাদী, শেলজুক তারিখ,মাহমুদ আলম,জাহিদ চেীথুরী, আবু বক্কর , নুর হাসান, লিটন এবং এক ঝাক মঞ্চ শিল্পী, তানভির, গেীরী ও মারিন,সোবা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়