বিশ্বের দেশে দেশে রাজনৈতিক নেতাদের জীবন-সংগ্রাম-কর্মের ইতিহাস খুব একটা সুখকর থাকে না। আবার কোনো কোনো নেতার জীবন কাহিনির পরতে পরতে লেখা আছে কষ্ট-যন্ত্রণা-জেল-জুলুম-মামলা-হামলা-হুলিয়া-দেশান্তর-দ্বীপান্তর ইত্যাদি। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তেমনই একজন নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর জন্য তার সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে ঘাতকের হাতে তিনি শহীদ হন। সেসময় বিদেশে অবস্থান করায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘদিন শেখ হাসিনা বিদেশে নির্বাসিত থাকার পর দেশে এসে নানান রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে হাল ধরেন এশিয়ার প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগের। গৃহবধূ থেকে তাকে দল ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার এই দীর্ঘ সংগ্রামী অভিযাত্রাকে এবার ফ্রেমে বন্দী করে জনসমক্ষে আনার একটি মহতী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এই মহতী কার্যক্রমের সফল রূপায়ণ হচ্ছে তথ্যচিত্র ‘শেখ হাসিনা দ্য লিডার’।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ঘটনাবহুল ইতিহাসের সেই সব সময়ের ডিজিটাল চিত্র রূপায়ন করেছেন তরুণ নির্মাতা ফয়েজ রেজা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে বাংলাদেশে যখন সামরিক শাসন জেঁকে বসে, তখন দুই সন্তান ও বোন শেখ রেহানাসহ দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
পরিবার হারানোর এই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে অতি সাধারণ এক বাঙালি বধূ থেকে রাজনীতির মাঠে নেমে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। এ যেন অন্ধকার অমানিশায় এক চিলতে আশার আলো। প্রথমে ১৯৯৬-২০০১, তারপর ২০০৮ থেকে টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রসার, বিনামূল্যে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি বই বিতরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়সহ অসংখ্য মানবিক উদ্যোগে তিনি বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। একই সাথে বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হয়েছে। বিশ্বে বেড়েছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। বেড়েছে মাথা পিছু আয়, রেমিটেন্স আয়, রির্জাভ, গড় আয়ু প্রভৃতি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রসঙ্গে ফয়েজ রেজার বক্তব্য হচ্ছে, তথ্যচিত্রটির শুরুতেই দেখানো হয়েছে ১৯৮১ সালে ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে কীভাবে দলকে পুনরায় গড়ে তুললেন, তার চিত্র। এরপর সাধারণ মানুষের ভাত-কাপড়ের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিয়ে রাজপথে শেখ হাসিনার আন্দোলন, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ১৯৯৬ সালে ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের চিত্র।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দারিদ্রকে দেশের মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য কীভাবে সংগ্রাম ও পরিশ্রম করেছেন, তাও উঠে এসেছে এতে। এরপর দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০১৪ সালে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কীভাবে অর্থনীতির উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে গেলো সেসব ঘটনার বিবরণ। শেখ হাসিনাকে নিয়ে নির্মিত ১১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের এই তথ্যচিত্রের গবেষণায় ছিলেন সাজিদ রায়হান, ধারা বর্ণনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম, শব্দবিন্যাস করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন তামান্না তাসমিয়া তুয়া।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘শেকড়ের সন্ধানে’ মেগাকনসার্টে ইতোমধ্যে তথ্যচিত্রটি দেখানো হয়েছে রংপুর জেলা স্কুল মাঠ, রাজশাহীর এ এইচ এম কামরুজ্জামান স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, বরিশালের বিভাগীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম এবং ঢাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। দেশে উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধি-শান্তি ও মানবতার যে মহাযজ্ঞ শুরু করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে দেশবাসী নৌকা প্রতীকে, স্বাধীনতার প্রতীকে, উন্নয়নের প্রতীকে রায় দেবেন সেই নিবেদন রইলো। আশা করছি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র, ‘শেখ হাসিনা দ্য লিডার’ জনমনে স্থান করে নেবে।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
motaherbd123@gmail.com