শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:২৫ রাত
আপডেট : ০৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:২৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কেনায়ও লাভ, বেচায়ও

বিভুরঞ্জন সরকার : কলার মোচা ঘণ্ট অথবা মোচা বেটে বড়া বানিয়ে রসা আমার খুব প্রিয় খাদ্য। সবজির মধ্যে কলার মোচা বেশি পছন্দ হওয়ায় চোখের সামনে পেলে কেনার চেষ্টা করি। কলার মোচা নিশ্চয়ই কারো অপরিচিত নয়। গাছে থাকা কলার কাঁদির একেবারে শেষ প্রান্তে থাকা না-ফোটা ফুলের কুড়ির নাম মোচা। মোচার অগ্রভাগ সূঁচালো। সারা বছরই বাজারে কলার মোচা পাওয়া যায়। এটা দেখতেও সুন্দর, খেতেও। কলার মোচার পুষ্টি ও ঔষধি গুণ অনেক বেশি। মোচায় লৌহ থাকায় এটা খেলে অ্যানিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় দেহ গঠনের কাজে সাহায্য করে।

ক’দিন আগে শান্তিনগর মোড়ে সকালে যে কাঁচা বাজার বসে সেখানে কলার মোচা দেখে দাম জিজ্ঞেস করলাম। একটা মোচার দাম হাঁকা হলো ৪০ টাকা। মুলামুলি করে ৩০ টাকায় রফা হলো। দুটি মোচা কিনে বাসায় গিয়ে পড়লাম বিপদে। গিন্নি বললেন, কারওয়ানবাজারে একসঙ্গে পাঁচটি মোচা কিনলে লাগে ৫০/৬০ টাকা। অর্থাৎ একটি মোচার দাম ১০/১২ টাকার বেশি হয়। আমার তো চোখ ছানাবড়া। বলে কি! কারওয়ানবাজার থেকে শান্তিনগর মোড় আসতে একটি কলার মোচার দাম তিন/চার গুণ বেশি হয়?

হ্যাঁ, পাঠক তাই হয়। শুধু কলার মোচা হয়, যেকোনো কৃষিজাত পণ্য বা সবজি কারওয়ানবাজারে যে দামে পাওয়া যায়, অন্য বাজারে দাম তারচেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ/ তিনগুণ বেশি। দামের এই বিপুল তারতম্যের কারণ কী? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, একশ্রেণির ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজিতেই সবজিসহ সব কৃষিপণ্যের বাজার অনিয়ন্ত্রিত। কৃষক বা উৎপাদকের কাছ থেকে কেনা হয় কম দামে, আর ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করা হয় অস্বাভাবিক বেশি দামে। কৃষক বঞ্চিত হয় ন্যায্য দাম থেকে আর ভোক্তাকেও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। মধ্যস্বত্বভোগীরা কম দামে কিনে এবং বেশি দামে বেচে- উভয় ক্ষেত্রেই লাভ করেন।

গত জুন মাসে একদিন ঢাকার বাজার থেকে লটকন কিনলাম একশ চল্লিশ টাকা কেজি। আর লকটন যেখানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ হয়, সেই নরসিংদী গিয়ে দেখলাম লটকনের কেজি মাত্র ত্রিশ টাকা।

লাভের জন্যই নিশ্চয়ই ব্যবসা করা হয়। কিন্তু লাভটা যদি কৃষক এবং ভোক্তার গলা কাটা হয় তাহলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সবজি বা ফল জাতীয় পণ্য, যেগুলোকে কাঁচামাল বলা হয়, যেগুলো দ্রুত পচনশীল, সেগুলোর বাজার খেয়ালখুশি মতো ওঠা-নামা করায় একটি বিশেষ গোষ্ঠী। এরা দ্রুত সম্পদশালী হয় কিন্তু বঞ্চিত হয় কৃষক বা উৎপাদক। আর পকেট কাটা যায় সাধারণ ভোক্তা-ক্রেতাদের। রাজধানীর আশেপাশের জেলাগুলোতে যেসব সবজি বেশি চাষ হয় সেগুলো চাষীরা পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিছু কিছু সবজি ক্রেতার অভাবে ফেলে দেওয়ার খবরও গণমাধ্যমে দেখা যায়। তো, কোনো কোনো জায়গায় যে সবজি ফেলে দেওয়া হয়, ঢাকায় এসে তা এতো মূল্যবান হওয়া সত্ত্বেও এসবের বিপণন ও বাজারজাতকরণ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় না কেন?

উৎপাদক ও ভোক্তার স্বার্থ দেখার তেমন কোনো কার্যকর সংগঠন না থাকায় ব্যবসার নামে ‘লুটপাট’ অব্যাহত থাকছে। ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার মতো অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি আছে কিন্তু কৃষক বা উৎপাদক এবং ক্রেতা বা ভোক্তার অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য তেমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? এই যে ভোটের রাজনীতির ডামাডোল, সংলাপ-আলোচনা নিয়ে এতো কথা হচ্ছে, টিভি সেট গরম হচ্ছে, কই এসময় সম্পদবৈষম্য কমিয়ে আনা কিংবা গলাকাটা মুনাফা করতে না দেয়ার দাবি কেউ তুলছেন না কেন? আসন্ন নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়গুলো তুলে ধরবে কি?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়