শিরোনাম
◈ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ইঙ্গিত: রেকর্ডসংখ্যক কোটিপতি ব্যাংক হিসাব ◈ কাতার ও ফিলিস্তিনের প্রতি অবিচল সমর্থন জানালো বাংলাদেশ ◈ দুবাইয়ে বিকৃত যৌ.নাচার ব্যবসার চক্রের মুখোশ উন্মোচন এবার বিবিসির অনুসন্ধানে! ◈ জনপ্রশাসনের ১৭ কর্মকর্তাকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলি ◈ ‘আমার নাম স্বস্তিকা, বুড়িমা নই’ ক্ষোভ ঝাড়লেন স্বস্তিকা ◈ তিন জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার ◈ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আবার বাড়ল ◈ আর্থিক সুবিধা নেওয়ায় কর কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ লড়াই ক‌রে‌ছে হংকং, শেষ দি‌কে হাসারাঙ্গার দাপ‌টে জয় পে‌লো শ্রীলঙ্কা ◈ দুর্গাপূজায় মণ্ডপ পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে আমন্ত্রণ হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের

প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:৩৮ সকাল
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অর্থনৈতিক অঞ্চল বদলে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতি

আমাদেরসময় : দ্রুতই উন্নত দেশের সারিতে নাম লেখাতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য প্রয়োজন শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি, ধারাবাহিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি। এ লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে শক্তিশালী করতে গড়ে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। অর্থনৈতিক নগরী গড়ে তুলে উৎপাদন বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে দ্রুতগতিতে।

বিনিয়োগকারীরা জানান, শিল্প গড়ার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ করছে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বলছে, দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যেই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শেষ করা হবে।

দেশকে শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেন। ২০১০ সালের আগস্টে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন সংসদে পাস হয়।

বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে উন্নয়নশীল দেশের রোলমডেল। দেড় লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনে ১৬ কোটি মানুষের দেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি চ্যালেঞ্জই বটে। আর এখন ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে পথ চলছে বাংলাদেশ। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য বর্তমান সরকার সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে শিল্পায়নের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ। বিনিয়োগকারীরা সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা এই অঞ্চলের মধ্যেই পাবেন। এতে তাদের ব্যবসার খরচ কমবে, সময় বাঁচবে ও যাবতীয় প্রক্রিয়া সহজ হবে। আবার শিল্প-কারখানার বর্জ্যে নদীদূষণ ও বায়দূষণের ঘটনা ঘটবে না। অঞ্চলের মধ্যে অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি করা হবে বনায়ন।

বেজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশে প্রতিবছর ২৭ লাখ মানুষ কর্মের বাজারে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু কাজের সুযোগ না থাকায় তাদের অধিকাংশই বেকার থেকে যান। এখন পর্যন্ত বেকার রয়েছেন ৪ কোটি মানুষ। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কাজের সুযোগ পাবেন ১ কোটি মানুষ। এ ছাড়া এই শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা লিঙ্কেজ শিল্প, অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ইতোমধ্যে ৮২টির প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বেজার গভর্নিং বোর্ড। এর মধ্যে ২৩টি বেসরকারি অঞ্চল এবং বাকিগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যে ১২টি বেসরকারি অঞ্চলের প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর ছয়টিকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দিয়েছে বেজা।
বেজার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, তার সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর্মকা- ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ওই অঞ্চলগুলোয় ১৬ হাজার ৬৭৬ মানুষ কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ২০৬ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৪৭০ জন নারী কাজ করছেন। এই সময়ে বিনিয়োগ এসেছে ২৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার (প্রায় ১৫০ কোটি টাকা)। বাস্তবায়নাধীন অঞ্চলগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগের অনেক প্রস্তাব রয়েছে। এসব প্রস্তাবের এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বেশিরভাগ শিল্পই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। এর ফলে জমি, অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে। এখন পরিকল্পিতভাবে শিল্পনগরী গড়ে তোলার কারণে জমির সঠিক বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এতে জমির অপচয় রোধ হবে; অন্যদিকে ব্যাপক হারে কৃষিজমি বা বনভূমি ধ্বংস হবে না। উল্টো অঞ্চলের মধ্যে বনায়ন হবে। এককভাবে কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অবকাঠামোর খরচ এককভাবে করতে হয়। ফলে খরচ অনেক বেশি পড়ে। পণ্য পরিববহন খরচ বেশি হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হওয়ায় শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সব সেবা মিলবে ওই অঞ্চলেই। ফলে এককভাবে সবাই সুবিধা নিতে পারবেন। পণ্য ওই অঞ্চল থেকেই দেশে-বিদেশে বাজারজাত করা যাবে। ফলে বন্দরগুলোয় অযথা জটের মুখোমুখি হতে হবে না।

বেজার নির্বাহী সদস্য অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব আমাদের সময়কে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সরকারি ও বেসরকারি অঞ্চলগুলোয় জমি বরাদ্দ ও অন্যান্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেক অঞ্চলে শিল্পকারখানা উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। অঞ্চলের আশপাশের মানুষও সরাসরি কারখানা ও একে ঘিরে গড়ে ওঠা কর্মকা-ে অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন।
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্যের একটি হচ্ছে, প্রতিবছর অতিরিক্ত চার হাজার কোটি ডলার রপ্তানি আয় নিশ্চিত করা। এ ছাড়া দেশীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করা। বর্তমানে পণ্য রপ্তানি আয় ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলার। আগামী ১৫ বছরের লক্ষ্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় অবস্থিত কারখানার মাধ্যমে আরও ৪ কোটি ডলার অর্থাৎ বার্ষিক প্রায় ৮ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি আয় করা। এ জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। তাদের জন্য কর অবকাশ, কর রেয়াত, অবকাঠামো সুবিধা, গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে, মানুষের আয় বাড়বে এবং উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি হবে। প্রচুর বৈদেশি মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ রয়েছে।

সরকারের লক্ষ্য বাংলাদেশকে উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। এ জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে নিয়ে যেতে হবে। সব শেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি আরও ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়াতে হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। এই বিনিয়োগকে বেগবান করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল মূল ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি। জ্বালানি সহজলভ্য হওয়ার পাশাপাশি বিশেষ শুল্ক সুবিধা পাওয়ার কারণে এখানে বিনিয়োগে অনেকেই আগ্রহী।

তিনি আরও বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কারখানা না হয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন হবে। ফলে এক স্থান থেকে সব পণ্যের জোগান হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরী তৈরি হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ইতোমধ্যে বিদেশিদের আকৃষ্ট করেছে। সেখানে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে নামকরা সব দেশি-বিদেশি কোম্পানি। চীন, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আসছে বিনিয়োগ প্রস্তাব। এদের কারো প্রস্তাব হাজার কোটি ডলারের, কারো তার চেয়েও বেশি। বিনিয়োগকারীদের কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে, কেউ পর্যটনশিল্পে, আবার কেউ কেউ এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মাণে। এ ছাড়া বস্ত্রশিল্প, মোটরসাইকেল তৈরি, নির্মাণসামগ্রী ও কাচশিল্প স্থাপনেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক বিদেশি কোম্পানি। দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি সমঝোতা স্মারকও করেছে।

কয়েকটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ইতোমধ্যে সফলভাবে কার্যক্রমে এসেছে। যদিও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। ৬টি চূড়ান্ত লাইসেন্সসহ ১৬টি প্রাথমিক লাইসেন্স পাওয়া অঞ্চলগুলোয় ইতোমধ্যে ১২২ কোটি ডলার (প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৮ হাজার জনের। মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বে অর্থনৈতিক অঞ্চল, আব্দুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল, আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত লাইসেন্স নিয়ে বেশ কয়েকটি কারখানায় উৎপাদনও শুরু করেছে। আরিশা, আকিজ ও সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত লাইসেন্স খুব শিগগির পেতে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে এর আশপাশের এলাকাগুলোয়ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। এলাকার রাস্তাঘাট ও গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল, হোটেল, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকা হয়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজের কেন্দ্র।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেজা পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তার সভাপতিত্বে হয় প্রথম পরিচালনা পরিষদের বৈঠক। বর্তমানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ শেষ করতে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প (পর্যায়-১)’ শীর্ষক একটি প্রকল্পও হাতে নেয় সরকার। এরই মধ্যে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নীতি-২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ ও অর্থনৈতিক অঞ্চল বিধিমালা, ২০১৪ সংশোধন করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়