মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ : আজ ২১ শে সেপ্টেম্বর। আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,
‘নাগিনীরা দিকে দিকে ফেলিছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস ‘
বিগত শতাব্দীতে পরপর দুটি বিশ্ব যুদ্ধে ব্যপক রক্তপাত, হত্যাযজ্ঞে মানুষ শিহরিত হয়ে উঠেছিল। প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল পৃথিবী নামের এই গ্রহের অস্তিত্ব আদৌ থাকবে কি না? সেই ধ্বংসযজ্ঞের উপর দাড়িয়ে সারা বিশ্বের মানবতাকামী মানুষ নতুন করে জাতিসংঘের নীল পতাকার নীচে এক হয়ে দাঁড়ায়। শান্তির পূর্বশর্ত হিসেবে আসে ‘মানুষের অধিকার‘। এই অধিকারকে সার্বজনীণ করতে জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৪৮ সালে প্যারিসে ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন’ ঘোষণা করে। এটিই পৃথিবীর একমাত্র ঘোষণা যেটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৫০০ভাষায় প্রচার করা হয়। সত্তর বছর আগে ঘটে যাওয়া এই মহতী কাজটিকে স্মরণীয় এবং সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এ বছর বিশ্ব শান্তি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ ঞযব জরমযঃ ঃড় চবধপব – ঞযব টহরাবৎংধষ উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃ ধঃ ৭০’।
অন্যান্যবারের মত এ বছর ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে এই দিবসটি জাতিসংঘ সদর দপ্তর এবং এর সদস্য দেশসমূহ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদযাপন করতে যাচ্ছে । আজ সকাল ৯-০০ টায় নিউইয়র্কস্থ ‘পিস গার্ডেন’ এ মহাসচিব এন্থনিও গুতারেস শান্তির ঘন্টা ধ্বনি বাজাবেন । শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই পর্যন্ত যত শান্তিরক্ষী জীবন দিয়েছেন তাঁদের সন্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ ,আলোকিত ব্যক্তিবর্গকে জাতিসংঘের ব্র্যান্ড এমব্যাসেডর ঘোষণা করা হবে । বাংলাদেশেও এই দিবসটি সামরিক এবং বেসামরিক পরিম-লে পালন করা হবে ।
সংগত কারণে প্রশ্ন আসে এই দিবসটি কখন থেকে এবং কেনই বা পালন করা হয়? যুদ্ধ বিহীন বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের সাধারণ পরিষদে গৃহীত নম্বর ৩৬/৬৭ প্রস্তাব অনুসারে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার এই দিবস পালন করা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে গৃহীত ৫৫/২৮২ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে ২০১২ সাল হতে ২১ শে সেপ্টেম্বর এই দিবস পালন করা শুরু হয় ।
আরো কথা থেকে যায়। বিশ্ব শান্তির প্রতিষ্ঠার যে মহান চলমান প্রক্রিয়া ,সেটির প্রায়োগিক বাস্তবতায় এই সময়ে কি কি করনীয়? কতিপয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে মানব সমাজ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিম-লে শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে ।দারিদ্র ,ক্ষুধা,সবাস্থ্য ,শিক্ষা ,জলবায়ু পরিবর্তন ,লিঙ্গ সমতা ,পানি ,পয় নিস্কাশন ,শক্তি ,পরিবেশ এবং সামাজিক বিচার – এই বিষয়গুলিই সময়ের চ্যালেঞ্জ ।
শান্তির অধিকার সন্মন্ধে আর্টিকেল ৩ –এ পরিষ্কার উল্লেখ আছে ঊাবৎু ড়হব যধং ৎরমযঃ ঃড় ষরভব,ষরনবৎঃু ধহফ ংবপঁৎরঃু, । তাই মানুষে মানুষে বৈষম্য অবিচার যতদিন আছে ততদিন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে । আবার , মানুষে মানুষে হানাহানি যতদিন আছে ততদিনই মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইও চালিয়ে যেতে হবে । আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসে তাই আমাদের প্রত্যাশা দারিদ্র , শোষণ এবং ক্ষুধামুক্ত এক নতুন বিশ্ব ।
উপ অধিনায়ক , আর্মড ফোর্সেস ফুড এ- ড্রাগস ল্যাবরটরী