সাজিয়া আক্তার : বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার সম্প্রতি এক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নতুন করে আরো ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। গত বছর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার। সূত্র : বিবিসি বাংলা
কিন্তু বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল, দীর্ঘ মেয়াদী এবং অনেক ব্যয়বহুল। ক্যান্সারের আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীই দেখা যায় নিম্ন আয়ের পরিবারের নারী এবং পুরুষ। আর চিকিৎসা ব্যয়ের মিটাতে অনেকেদারিদ্র সীমার নীচে নেমে যাচ্ছে।
ক্যান্সারে আক্রান্তদের অনেকে বলেছেন, চিকিৎসা ব্যয় সামলাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি হাসপাতালে খরচ কিছুটা কম। কিন্তু লম্বা সময় ধরে সেটাও সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পুরোপুরি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় হরমোন থেরাপি থেকে শুরু করে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অনেক ঔষধের প্রয়োজন হয়। এর প্রতিটি ধাপেই বড় অংকের অর্থ গুনতে হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রতিবছর অনেক মানুষ চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য দরিদ্র সীমার নীচে নেমে যাচ্ছে। ক্যান্সারের রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবার ব্যাপারে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও গুরুত্ব দিচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত এই ক্যান্সার নিরাময়ের পুরোপুরি ব্যবস্থা না হবে ততদিন পর্যন্ত ক্যান্সার শব্দটা নিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হবেই।
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় একটি মাত্র বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতাল রযেছে হাতে গোনা কয়েকটি। এই রোগের চিকিৎসা সেবা মূলত ঢাকা কেন্দ্রীক।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলছিলেন, ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, সে কারণে রোগীদের সেবা পেতেও সময় লেগে যাচ্ছে। কিন্তু ১ লাখ ৫০ হাজার রোগী যদি নতুন করে আক্রান্ত হয়, তাহলে এতো রোগীর চিকিৎসা ঢাকা শহর কি করে দেবে?
বাংলাদেশের নিজেদের করা বাস্তবসম্মত কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় চিকিৎসা সেবার পরিকল্পনা করাও সম্ভব হচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেই শুধু এ ধরনের পেলিটিভ কেয়ার ইউনিট আছে। সেখানে মাত্র ১৯টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু ক্যান্সার চিকিৎসায় লম্বা সময় লেগে যায়। কেমোথেরাপি দিতে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস এবং রেডিও থেরাপির সিরিয়াল পেতে চার পাঁচ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। অপারেশনেই এরকম সময় লাগে। ফলে ঢাকার বাইরে অন্তত বিভাগীয় শহরে এই চিকিৎসা গড়ে তুলতে না পারলে মানুষের সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।
উচ্চবিত্তরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেই দেশের বাইর যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু নিম্ন আয়ের এবং নিম্ন মধ্যবিত্তরাই দেশে চিকিৎসা করছেন। ফলে চিকিৎসকরা ধারণা করেন, নিম্নবিত্তরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
পুরুষরা খাদ্যনালী এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে বেশি ভোগেন। আর নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি স্তন এবং জরায়ুর ক্যান্সারে। এর মূল কারণ বাল্য বিয়ে এবং অল্প বয়সে বাচ্চা নেয়া। এগুলো প্রতিরোধে আরও জোর দেয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি সরকার চিকিৎসা সেবা বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ক্যান্সার প্রতিরোধের মানুষকে এ বিষয় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়তে হবে।
একেই তো ক্যান্সার একপ্রকার মারাত্মক রোগ, আর এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার বড়অংকের টাকা যোগানের বিষয়টিই তাদের আরও সংকটের দিকে ঠেলে দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :