শিরোনাম
◈ রিটার্ন না দেওয়া টিআইএনধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের নির্দেশ ◈ সকালে উঠেই এক লিটার পানি পান: কতটা উপকারী? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? ◈ তারেক-জুবাইদার দুর্নীতির মামলায় ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার’, পূর্ণাঙ্গ রায়ে খালাস হাইকোর্টে ◈ বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই তরুণীকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ (ভিডিও) ◈ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের প্রকম্পিত ঢাবি (ভিডিও) ◈ পর্যাপ্ত অর্থ ও হোটেল বুকিং না থাকায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ৯৬ বাংলাদেশি আটক ◈ বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে বসে চোখের পানি ফেলছেন, ছেলের বিরুদ্ধে মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডের লর্ডসে ডুবলো ভার‌তের রণতরী, সিরিজে এ‌গি‌য়ে গে‌লো ইং‌রেজরা ◈ কানাডার টরন্টো শহরে ইসকনের রথযাত্রায় ডিম নিক্ষেপ, ঘটনায় ভারতের গভীর উদ্বেগ (ভিডিও) ◈ একটি দল লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা ও হাদিয়া নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ করে না: মির্জা আব্বাস

প্রকাশিত : ২৫ জুন, ২০১৮, ০২:৪৭ রাত
আপডেট : ২৫ জুন, ২০১৮, ০২:৪৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুর্নীতির রাস্তা থেকে সরতে হবে

মোমিন মেহেদী : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামসুল হক সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু অর্থ ব্যয় করেই সড়ক-মহাসড়কের উন্নতি করা সম্ভব নয়। সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ধারণাটা খুব খারাপ। প্রতিবছর বর্ষার পর রাস্তা সংস্কারে যেতে হয়। পৃথিবীর আর কোথাও এই সংস্কৃতি নেই। সেখানে ১০-১২ বছর পর সংস্কার হয়। আমাদের দেশে বছর বছর এ খাতে অর্থ ব্যয় হচ্ছে অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এর কারণ পানিবদ্ধতা এবং ওভারলোডিং। বাস্তবে এটি যে কেউ প্রত্যক্ষ করেছেন যে, আমাদের দেশের সড়কগুলো যে মাত্রায় লোড বহনের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে, এখন ট্রানজিটের কারণে ভারতীয় অধিক পরিবহনে সক্ষম বাস ও ট্রাকগুলো চলাচলের কারণে অনেক সড়ক সহজেই বেহাল দশায় পতিত হচ্ছে। অন্যদিকে সড়ক মেরামতের ঠিকাদারিতে নানা দুর্নীতি বিরাজ করছে।

সে ক্ষেত্রে কাজ হয় শুধু কাগজে-কলমে। এসব বাস্তবতা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন তো হয়নি, কোনো লক্ষণ রয়েছে বলেও মনে হয় না। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। অন্যদিকে সড়কের বেহাল দশার জন্য দেশের পরিবহনেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে পরিবহন খাতে প্রচুর পরিমাণে কর দিতে হয় অথচ সড়কের উন্নয়নে কোনো কার্যকর নজর নেই। এভাবে বাংলাদেশে সমস্যার জাল বুনে বুনে নির্মমতায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে দুর্নীতিবাজরা। শুধু কি সড়ক পথেই দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা! না, সারাদেশের সকল সড়ক পথের পাশাপাশি ও রেলপথেও নেমে এসেছে অন্ধকার। বাংলাদেশে ঝুঁকি নিয়ে চলছে রেল।

ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়াসহ ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় বিপুল প্রাণহানি ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সর্বত্রই দায়িত্বে অবহেলার চিহ্ন। কিছু দিন আগে স্টেশন মাস্টারের গাফিলতির কারণে টঙ্গীতে একটি ‘কমিউটার ট্রেন’ লাইনচ্যুত হলে ৪টি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ে। এরপর রেল কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও তিন হাজার কিলোমিটার রেল লাইনের দিকে তাকালেই দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠছে। কেন্দ্রে রেল নিয়ে তোড়জোড় চললেও মাঠপর্যায়ে বেহাল দশা। রেল লাইনে পাথর থাকা অপরিহার্য হলেও মাইলের পর মাইল রেল লাইনে পাথর নেই, চুরি হয়ে যাচ্ছে।

সারা দেশে ২২ লাখ ঘনফুট পাথর থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট। লাইনের ইলাস্টিক রেল ক্লিপ (প্যান্ডেল), নাট-বল্টু চুরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রেলের একটি সূত্র বলছে, প্রতি বছর ক্লিপ-ই চুরি যাচ্ছে ৫ লাখ পিস, টাকার অংকে এর পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রেল লাইনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে (জোড়া) হুক খোলা দেখতে পাওয়া যায়। যথাযথ মেইনটেন্যান্স না করার কারণে প্রতি মাসে ৯০-১২০টির মতো ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ ট্রেন লাইনচ্যুত হয় যথাযথভাবে লাইন মেইনটেন্যান্স না করার কারণে। অথচ লাইনে পথর দেয়ার জন্য বছরে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে রেলের। লাইনচ্যুত বগি ও ইঞ্জিন উদ্ধার এবং লাইন মেরামতে বছরে ব্যয় হচ্ছে ৯৬ কোটি টাকা।

তবে বাংলাদেশেরই শুধু নয়; সারা বিশ্বের রেল হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ বাহন। সরকার রেলের উন্নয়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তা সম্পূর্ণ হলে বদলে যাবে রেল। কিন্তু মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইনে প্রয়োজনীয় পাথর থাকবে না, ক্লিপ, নাট-বল্টু খোলা থাকবে এটা কি করে সম্ভব। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু হয়েছে, দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের রেল লাইন আমাদের দুর্নীতি আর অন্যায়ের কারণে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, বছরে কমপক্ষে ৫ লাখের বেশি ক্লিপ চুরি বা ভেঙে গেলেও এর মধ্যে ২ থেকে সোয়া দুই লাখ ক্লিপ সরবরাহ করা হয়।

সাপ্লাই দেয়া এসব ক্লিপের সব লাগানোও হয় না। ফলে বছরের পর বছর ক্লিপবিহীন লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। এসব ক্লিপে ‘বিআর’ (বাংলাদেশ রেলওয়ে) লেখা থাকলে চুরি রোধ করা অনেকাংশে সহজ হতো। একটি ক্লিপ বাইরে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে চুরির ঘটনা কমে এসেছে। তবে লাইনে পাথর আছে কিনা কিংবা যন্ত্রাংশ খোলা রয়েছে কিনা তা রেল পুলিশের দেখার কথা নয়। লাইন পাহারায় পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ ও আধুনিক ক্লিপ লাগানো নিশ্চিত করা গেলে এসব চুরি রোধ সম্ভব। মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, যেখানেই লাইনের ক্লিপ খোয়া যাবে, দ্রুত তা লাগাতে হবে। গত বছর ১ লাখ ৬৫ হাজার নতুন ক্লিপ চুরি ও তারপর লাগানো ঘটনা ঘটেছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা না এলে চুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। রাতের আঁধারে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। বছরে প্রায় ৫-৬ লাখ হুক চুরি হচ্ছে। লাইনে বছরে ৫ শতাংশ হারে নতুন করে পাথর দেয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

সড়ক পথে অন্যায়, রেল পথে অন্যায়। এই অন্যায়ের রাস্তা থেকে সরে আসার জন্য নিরন্তর এগিয়ে চলতে হবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদেরকে। অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতি থেকে সরে আসতে তৈরি হতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মীদেরকে। কেননা, দেশের ২১ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে একটি রাস্তাও শতভাগ ভালো নেই। ঢাকা-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম-খুলনা দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ তিন সড়কের বিভিন্ন স্থান খানাখন্দ আর ভাঙাচোরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৭০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তার অবস্থা করুণ। ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম বিভাগসহ অন্তত ১০ জেলার রাস্তা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

একদিকে অন্যায়ের রাজত্ব নির্মাণের চেষ্টা; অন্যদিকে পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলায় সেতুমন্ত্রীর অসহায়ত্ব। তার প্রমাণ উঠে এসেছে তাঁর কথায়। দেশের পরিবহন খাত নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমি নিজেও অসহায়, অসহায়ত্ব আমার মধ্যেও কাজ করে।’ দেশের মন্ত্রী যখন ঠিকাদারদের দুর্নীতিগ্রস্থতার জন্য অসহায়; তখন নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে কেবল বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, জনগন সকল অন্যায়ের হাত থেকে মুক্তি চায়। দুর্নীতির হাত থেকে মুক্তি চায় আমাদের সাধারণ মানুষ; মুক্তি চাই আমরাও। আর এজন্য নিবেদিত থেকে কাজ করতে হবে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি নিজে পদক্ষেপ নিলে দুর্নীতি মুক্ত হবে দেশ, সড়ক-রেল-নৌ ও আকাশ পথ হবে নিরাপদ...

মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি ও প্রতিষ্ঠাতা, সেভ দ্য রোড/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়