মুফতি মাহফূযুল হক : আপনি অন্য নামাজ যেভাবে পড়েন, ঈদের নামাজও সেভাবেই পড়বেন। কেননা, অতিরিক্ত ছয় তাকবির ছাড়া ঈদের নামাজের বাকি সব নিয়ম অন্য নামাজের মতোই।
তাই ঈদের নামাজ শুরু করার আগে আপনাকে জানতে হবে, অতিরিক্ত ছয় তাকবির কখন কিভাবে দিবেন। আপনাকে আরও জানতে হবে, যদি কোনো কারণে আপনার রাকাত ছুটে যায় বা পরে এসে ঈদের জামাতে শরিক হোন তখন কিভাবে এ ছয় তাকবির আদায় করবেন।
নিয়ত
প্রথমেই আসা যাক নিয়ত প্রসঙ্গে। মুসল্লিদের অনেকেই ঈদের নামাজের নিয়ত নিয়ে খুব অস্থিরতাবোধ করেন। অথচ নিয়ত নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছুই নেই। নিয়ত মুখে বলা জরুরি নয়। নিয়ত হলো মনের ইচ্ছা ও পরিকল্পনার নাম। নামাজ শুরু করার পূর্ব মুহূর্তে আপনার মনে যদি ঈদের নামাজ পড়ার ইচ্ছা জেগে উঠে, আপনি কী কাজ এখন শুরু করতে যাচ্ছেন, তা যদি আপনার জানা থাকেই তাহলেই আপনার নিয়তের ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
প্রথম রাকাতের অতিরিক্ত তিন তাকবির
দু’হাত কান পর্যন্ত তোলার পর ঈদের নামাজ পড়ার ইচ্ছা মনে মনে জাগ্রত করে নিয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধবেন। নিঃশব্দে সানা (সুবহানাকা...) পড়বেন। অতঃপর তিন বার তাকবির বলবেন। প্রথম দু’বার হাত কান পর্যন্ত তোলার পর আল্লাহু আকবার বলে হাত ছেড়ে দেবেন। তৃতীয়বার হাত কান পর্যন্ত তোলার পর আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধবেন। এবার ধ্যানমগ্ন হয়ে দিলের কানে ইমামের কোরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করতে থাকুন।
দ্বিতীয় রাকাতের অতিরিক্ত তিন তাকবির
অন্য নামাজের মতো যথারীতি প্রথম রাকাতের রুকু, সিজদা শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে শুরুতেই মনোযোগ দিয়ে ইমামের কোরআন তেলাওয়াত শুনুন। অতঃপর তিন বার তাকবির বলবেন। দ্বিতীয় রাকাতের অতিরিক্ত তিন তাকবিরেরের প্রত্যেকবারই হাত কান পর্যন্ত তোলার পর আল্লাহু আকবার বলে হাত ছেড়ে দেবেন।
এবারে চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে যাবেন, এই তাকবির কিন্তু অতিরিক্ত কোনো তাকবির নয়। বরং রুকুতে যাওয়ার নিয়মতান্ত্রিক তাকবির।
নামাজের অবশিষ্ট কাজটুকু অন্যান্য নামাজের মতো করেই শেষ করুন।
ইমামের ভুল হলে কী করবেন
নামাজ পড়ানোর সময় ইমামের ভুল হতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তাই আপনার ইমামের কোনো ভুল হলে বিচলিত হবেন না। ইমাম সাহেব যদি যোগ্য হন (যথাযোগ্য হওয়াই স্বাভাবিক) তবে ভুল ধরা পরার পর কিভাবে নামাজ সমাধা করতে হবে, তা অবশ্যই তিনি জানবেন। তাই সর্বাবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় ইমামকে অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য জরুরি একটা কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে। তা হলো-
যদি ইমাম অতিরিক্ত তাকবিরসমূহ ভুলবশতঃ না বলেন অথবা সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার মতো কোনো কাজ ইমাম থেকে সংঘটিত হয়ে যায় বা কোনো কাজ বাদ পড়ে যায় আর ঈদের জামাত অনেক বড় হয়, তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। সুতরাং ইমাম কিন্তু সেক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু করবেন না। আবার ভুল হওয়া সত্ত্বেও নামাজ হয়ে যাবে। আর যদি এমন হয় যে, উপস্থিত সকলেই সিজদায়ে সাহু সম্পর্কে অবগত হতে পারে তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। ঈদের বড় জামাতে সবার অবগত থাকা বাস্তবে অসম্ভব একটি বিষয়।
অতিরিক্ত তাকবির শেষ হওয়ার পর জামাতে শরিক হলে করণীয়:
ইমামের অতিরিক্ত তাকবির বলা শেষ হওয়ার পর কেউ যদি ঈদের জামাতে শরিক হয় তাহলে যদি অনুমিত হয় যে, ইমাম রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই হাত কান পর্যন্ত তোলে তোলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলা যাবে তাহলে তা-ই করবে।
আর যদি অনুমিত হয় যে, ইমামের রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই অতিরিক্ত তিন তাকবির দাঁড়িয়ে বলে শেষ করা যাবে না তাহলে রুকুর তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবে। আর রুকুতে থাকা অবস্থায়ই অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত তাকবিরসমূহে হাত কান পর্যন্ত তোলবে না।
প্রথম রাকাত ছুটে গেলে করণীয়
প্রথম রাকাতের রুকু শেষ হওয়ার পর কেউ যদি জামাতে শরিক হয় তাহলে যথারীতি ইমামের নামাজ শেষ হওয়ার পর দাঁড়িয়ে প্রথমে সানা, সূরা ফাতেহা, অন্য সূরা পড়বে। অতঃপর হাত কান পর্যন্ত তোলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। অতঃপর রুকুর তাকবিরে বলে রুকুতে যেয়ে যথারীতি নামাজ শেষ করবে।
নামাজান্তে মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাই নামাজের সময় কথা বলা থেকে, নিঃশব্দে যে কোনো ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো ভালো কাজও তখন করা যাবে না। অন্যকে চুপ করতেও বলা যাবে না। কাউকে কোনো ভালো কাজ করতে বলা যাবে না। কোনো মন্দ কাজ করতে বারণ করাও যাবে না। সম্পূর্ণ পিনপতন নিরবতায় খুতবা শোনা জরুরি। ইমামের খুতবার আওয়াজ কান পর্যন্ত না পৌঁছলেও নিরব থাকা অপরিহার্য। বার্তা২৪
আপনার মতামত লিখুন :