মুফতি শাহেদ রহমানি : রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো—এ মাস মাগফিরাতের মাস। এ মাস ক্ষমার মাস। এ মাস মুক্তির মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে রমজান। এটি বরকতময় মাস। এ মাসে আল্লাহ তোমাদের সচ্ছলতা দান করেন। এ মাসে রহমত নাজিল হয়। গুনাহ মাফ করা হয়। দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ তোমাদের পরস্পরে ইবাদতের অগ্রগামিতা দেখেন ও ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে নিজের ইবাদতের অগ্রগামিতা দেখাও। কেননা যে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত, সে দুর্ভাগা।’ (তাবরানি, মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস : ৪৭৮৩)
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শুরু ও শেষ পেল অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, সে ধ্বংস হোক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
রমজানের প্রথম রাতেই ক্ষমা : আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার বলেন, ‘সুবহানাল্লাহ! তোমাদের কাছে কী উপস্থিত হয়েছে এবং তোমরা কিসে উপনীত হয়েছ?’ উমর (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কোনো অহি নাজিল হয়েছে, নাকি শত্রু এসেছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ রমজানের প্রথম রাতেই সব মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১৮৮৫) রোজায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা : হজরত আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে বক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮)
শবেকদরে ক্ষমা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে বক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০১)
সাহরির সময় ক্ষমা : হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) সূত্রে বার্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সাহরি খাওয়ায় বরকত রয়েছে, তাই তোমরা তা কখনো ত্যাগ করো না, যদিও এক ঢোক পানি দিয়েই হোক। কেননা আল্লাহ সাহরি আহারকারীদের ওপর রহম করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১০৮৭)
রমজানে জিকিরকারী ক্ষমাপ্রাপ্ত : হজরত উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানে জিকিরকারী আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত।’ (মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৪৭৯১)
রমজানের শেষ রাতে ক্ষমা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উম্মতকে রমজানে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের ঘ্রাণ থেকেও প্রিয়। ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকেন। তার জান্নাতকে আল্লাহ প্রতিদিন সুসজ্জিত করেন, অতঃপর বলেন, আমার বান্দা শিগগিরই কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে এতে প্রবেশ করবে। রমজানের প্রথম রাতেই দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়, অন্য সময়ের মতো ছাড় পায় না। আর শেষ রাতে রোজাদারকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সাহাবারা আরজ করেন, হে আল্লাহর রাসুল! তা কি শবেকদরে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, না, বরং সব মজুর তার মজুরি শেষেই বিনিময় পেয়ে থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯১৭)
লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
সূত্র : কালের কন্ঠ