এক.
গণমাধ্যমে দেখলাম, এক ফটোগ্রাফার গাছে উল্টো ঝুলে এক দম্পতির ছবি তোলার চেষ্টা করছেন। পাখির চোখে দম্পতির ছবি তুলতে চেয়েছিলেন তিনি, সেই ফটোগ্রাফারের এমনি ব্যাখ্যা। তবে ব্যাখ্যা যাই থাকুক, পাখির চোখে তোলা ছবির চেয়ে, গাছে ঝুলে তার ছবি তোলার ছবিটাই ভাইরাল গেছে।
এমন চিত্রের সাথে আমাদের সাম্প্রতিক অনেক দৃশ্যপটের মিল রয়েছে। সে হোক রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তিতা কিংবা গণমাধ্যম। এসব ক্ষেত্রে বিষয়টি মূখ্য না সেই বাদুড়ঝোলা ফটোগ্রাফারের মতন বিষয় প্রকাশের ‘ক্যারিকেচারটা’ই মুখ্য দাঁড়িয়েছে। মানুষের চোখে না দেখে পাখির চোখে দেখার চেষ্টাই মূলত সব দৃশ্য উল্টো করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মানুষজনের দৃশ্যময়তায়। আর ¯্রােত ও মতের উল্টো সে চিত্র প্রকাশের প্রাণান্ত চেষ্টাটিও রূপ নিয়েছে ‘ক্যারিকেচারে’।
দুই.
বিশ্বখ্যাত জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ডকে মানুষ গায়েবের কৌশল ফাঁস করতে হবে, এমনি নির্দেশ দিয়েছে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত। কপারফিল্ডের কৌশলিও নানা চেষ্টা করেছেন; বলেছেন, আমার মক্কেলের পেশাগত ক্ষতি যাবে, ‘জাদু’র কোন রহস্য থাকবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া বিচারক মানেননি।
মামলার ঘটনাটা ছিল তেরো জন মানুষকে জাদুর মাধ্যমে অদৃশ্য করা নিয়ে। এই অদৃশ্য হওয়া একজন অভিযোগ করেছিলেন, অদৃশ্য করার প্রক্রিয়ায় তিনি ঘাঁড়ে আঘাত পেয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়েই কপারফিল্ডকে প্রকাশ্য আদালতে তার অদৃশ্য হবার কৌশল প্রদর্শনে রাজী হতে হয়েছে।
আমাদের ‘ফিল্ডে’ও সম্ভবত বেশ কিছু কপারফিল্ড রয়েছেন। মাঝে-মধ্যেই মানুষের অদৃশ্য হবার কথা জানান দেয় গণমাধ্যম। এক্ষেত্রে মুশকিল হলো মার্কিনি কপারফিল্ড দৃশ্যমান, এখানের কপারফিল্ডরা অদৃশ্য। শরীরী হলে হয়তো জাদুর কৌশল প্রকাশের সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেয়া যেত। কিন্তু অশরীরীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভবত কোন বিধান নেই।
তিন.
মহামতি চাণক্য বলেছেন, ‘দারিদ্র্যে বুদ্ধিনাশ হয়’। চাণক্যের কথাটি মনে পড়ে গেলো দুদকের হাতে ঘুষগ্রহণের সময় বমাল আটক দেশের নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর বিষয়ে। বেচারি ঘুষ নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা খেয়েছেন। অথচ এ ব্যাপারে অনেকেই বলছেন-লিখছেন, ‘ধরা পরলেই ঘুষখোর, না পরলেই সাধু’, এমন কথা। ইনারা বোধহয় দরিদ্র, তাই বুদ্ধিনাশ হয়েছে। না হলে এমন ‘বিভীষণ’ ধরণের কথা বলবেন কেন!
কেন জানতে চাইবেন, ঢাকা শহরে যে পরিমান ফ্ল্যাট, অট্টালিকা এমন-কী সুরম্য প্রাসাদ রয়েছে এসবের অধিকারীদের আয়ের উৎসের কথা! তারা কী না, ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পরে ধরা’। এমন বিদ্যায় যারা বিদ্বান তারা তো দরিদ্র নন, তাদের বুদ্ধিনাশও হয় না। উল্টো চাণক্যের ভাষায় যারা দরিদ্র এবং বুদ্ধিনাশ হয়েছে- এমন জনদের দিকে আঙুল উচিয়ে তারা বলেন, ‘সাধু সাবধান’।
ফুটনোট : একটা গল্প বলি। সার্কাসের এক ক্লাউন তার এক নিয়মিত দর্শককে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আমি এত ক্যারিকেচার করি আপনি হাসেন না, শুধু যখন উল্টো হাঁটি তখন হাসেন ঘটনাটা কী?
দর্শক বললেন, আপনি উল্টো হাটলে আপনার ঢোলা পাজামার ঠিক মাঝের সেলাই ছেড়া অংশটা চোখে পড়ে। তখন ‘ইয়ে’ দেখে আপনার আসল অবস্থাটা অনুমান করে হাসি।
ক্লাউন ক্ষেপে গিয়ে বললেন, আপনি মানুষটাতো বড় অভদ্র।
দর্শকের উত্তর, অভদ্র কোথায়, আমিতো কষ্টে হাসি। আপনি যতই রঙবেরঙের কাপড় পরেন না কেন, ভেতরের জিনিসতো পুরানোই।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :