সাজিয়া আক্তার: দেশজুড়ে বেড়ে চলা সড়ক দুর্ঘটনার কারণে চাপ বাড়ছে রাজধানীর অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে। প্রতিদিন সেখানে চিকিৎসা নিতে আসে ২৫০ থেকে ৩০০জন রোগী, যাদের বেশির ভাগই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। বর্হিরবিভাগের চাপ আরো বেশি, এতো বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। অনেক সময় বাধ্য হয়ে যেতে হয় ভিন্ন হাসপাতালে।
পাঁচ মাস আগে বাসে চড়ে যাত্রাবাড়ি থেকে মতিঝিল যাচ্ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়া। গন্তব্যে পৌঁছার আগেই আরেক বাসের ধাক্কায় হঠাৎ বদলে যায় সবকিছু। দুর্ঘটনার পর থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে।
আহত ইসহাক মিয়া বলেন, বাসের ড্রাইবার বার বার বাসটিকে ব্রেক মারে, এই দুর্ঘটনায় শুধু চালকেরই দোষ ছিল। এখন আমার পা কেটে ফেলেছে, এখন আমি কী করে চলবো? পা থাকলে আমি আগের মত স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতাম।
একই হাসপাতালে চিকিৎসারত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আলমের গল্পটা একটু অন্যরকম। ফুটপাতে হাঁটার সময় হঠাৎ এক বাসের ধাক্কায় পুরোটাই পালটে যায় তার জীবন।
আহত আলম বলেন, জনগণ যেখান দিয়ে হাঁটবে সেখান দিয়েই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে গাঁয়ের উপর উঠিয়ে দিল। তাহলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় কিভাবে নিরাপদে হাঁটবে, জনগণের আস্থা কোথায়?
ইসহাক আর আলমের মত অনেকেরেই ঠিকানা ৫০০ শয্যার এই বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে। আর দুর্ঘটনার আহতের সংখ্যা বাড়ায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে।
জাতীয় আর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবদুল পণি মোল্লা বলেন, আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে যে রোগী আছে তার ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার রোগী। এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় হাজার রোগী আসে। দেড় হাজার রোগীর মধ্যে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার রোগী আসে সবচেয়ে বেশি। আর এসব রোগীর মধ্যে আমরা ১০জন রোগী ভর্তি করতে পারি।
এমন পরিস্থিতিতে অনেককেই চলে যেতে হয় বেসরকারি কোনো হাসপাতালে। আবার অনেক সময় দুর্ঘটনায় জখম অনুযায়ী রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
এতকিছুর পরও আশার কথা জানালেন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, শুরু হয়েছে হাসপাতাল সম্প্রসারণের কাজ। তবে চিকিৎসকরা বলছেন দেশের সব হাসপাতালের অর্থোপেডিক হাসপাতাল আর একটু উন্নত করতে পারলে রাজধানীতে রোগীর চাপ কমবে।
একাত্তর টিভি অবলম্বনে