ডেস্ক রিপোর্ট : পূর্ব নির্ধারিত তারিখেই হবে বেসিস নির্বাচন এমনটিই জানিয়েছেন বেসিস এর বর্তমান সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির। তিনি বলেন, ‘বেসিস এর সিনিয়র নেতা মাহবুব জামান, নির্বাচন কমিশনের চেয়্যারম্যান এস এম কামাল এবং শোয়েব আহমেদ মাসুদকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচনের স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করিয়ে ৩১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে এসেছি।’
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মধুমতি টেক, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টদের কাছে এখন আলোচিত নাম। কারণ, বেসিসের নির্বাচনকে বানচাল করার জন্যই এই প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী রকিবুল মিনাসহ ১১ জন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানায়। গত ২১ মার্চ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ ডিটিও বেসিস নির্বাচন বন্ধের আদেশ দেয়। তবে এই ষড়যন্ত্রে থেমে থাকেনি বেসিস সদস্যরা। চিঠি হাতে পাওয়ার দিনই (২৭ মার্চ) বিকেলে বেসিস কার্যালয়ে জরুরি সভার মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দেয়ার প্রত্যয় নেয়া হয়।
সভায় নির্বাচন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া, ৩১ মার্চই নির্বাচন করা এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বহিষ্কারসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান সদস্যরা। সদস্য ও প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী এবং বাণিজ্য মন্ত্রীর সাথে ঐদিনই বৈঠকের মাধ্যমে বেসিস নির্বাচন চলমান রাখার বিষয়ে বৈঠক হয় বেসিস নেতৃবৃন্দের। ২৮ মার্চ ডিটিও থেকে চিঠির মাধ্যমে পূর্বের চিঠি বাতিল ও বেসিস নির্বাচন প্রক্রিয়া চলমান রাখার চিঠি বেসিসকে প্রেরণ করা হয়।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, মধুমতি টেকসহ কারা ঐ ১১ জন, এদের পিছনেই বা কারা? আমাদের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুন মাসে কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হয়। কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ারের চতুর্থ তলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। যদিও কোম্পানি প্রোফাইলে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা কাফরুলের ইব্রাহিমপুরে। আলোচনায় আসার পর বেসিস সদস্য তালিকা থেকে জানা যায়, শাহ আলী টাওয়ারের চতুর্থ তলাতেই বেসিসের পরিচালক ও এবারের নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ফারুকের প্রতিষ্ঠান রেডিসন ডিজিটালের কার্যালয়। দুই প্রতিষ্ঠানের একই ঠিকানা দেখে সদস্যদের মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে কী এটি দেলোয়ার হোসেন ফারুকেরই কাজ?
আরেকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে সদস্যদের কথায়। মধুমতি টেকের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য বেসিসের কোন সদস্য প্রস্তাব করেছেন? আবেদন ফাইল (ও্ ফাইলের একটি কপি আমাদের হাতেও রয়েছে) থেকে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন ফারুকই সদস্যপদ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন।
আমাদের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, নির্বাচন বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকারী ১১টি সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মধুমতি টেক ছাড়া আরও রয়েছে ভার্চুয়াল ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড, আই-সফট কমিউনিকেশন লিমিটেড, বারাশিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোস্টিং হেল্প ২৪ এবং লিওটেক। এর মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ আবেদনে প্রস্তাব করেছেন দেলোয়ার হোসেন ফারুক। এগুলোর ‘অ্যাপ্র“ভাল’ দেন মেম্বারশীপ কমিটির প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। এছাড়া মধুমতি টেক, ভার্চুয়াল ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড, আই-সফট কমিউনিকেশন লিমিটেড এর ঠিকানাও একই অর্থাৎ কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ারের চতুর্থ তলায়, যেখানে দেলোয়ার হোসেন ফারুকের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মধুমতি টেক, আই-সফট কমিউনিকেশন লিমিটেড, বারাশিয়া ইন্টারন্যাশনাল, লিওটেক এর সদস্যপদ আবেদন করা হয় ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে। আর ভার্চুয়াল ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড এর আবেদন করা হয় ২০১৬ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে। আর প্রতিষ্ঠান হোস্টিং হেল্প ২৪ এর সদস্যপদ ২০০৮ সালে করা হয়। উপরোক্ত বিষয়গুলো মাধ্যমে এখন সদস্যরা দেলোয়ার হোসেন ফারুককেই নির্বাচন বন্ধ করার ষড়যন্ত্রের কারিগর দাবি করছেন!
বেসিস নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দেলোয়ার হোসেন ফারুক: অবশেষে বেসিস নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলেন দেলোয়ার হোসেন ফারুক। ইতোমধ্যে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন,‘ আমি এই নির্বাচন থেকে আমি আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছি। নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের মুহুর্তে মাননীয় মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ভাই ও বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাসে কবিরের দৃঢ় নেতৃত্ব ও সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা এক এবং এক থাকবো।’