মতিনুজ্জামান মিটু : বছরে লাগে প্রায় ৭৪ লাখ, দেশে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার বেল তুলা। আমাদানি কমাতে আগামী সাত বছরের মধ্যে দেশে ৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানিকারক ও তৃতীয় ব্যবহারকারি। এখানে ৫০০০ এর বেশি তৈরী পোষাক কারখানা এবং ৪৫০টি স্পীনিং মিল রয়েছে। যেখানে এই তুলা ব্যবহার হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে দেশে প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ৭২ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়েছে। এ সময়ে দেশে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৫৬ হাজার বেল। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
আমদানি কমাতে ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্য পূরণে উন্নত জাতের হাইব্রিড প্রজাতির তুলা চাষসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাইব্রিড জাতের তুলার ফলন (স্থানীয় জাতের চেয়ে দ্বিগুণ) ও মান অনেক ভাল। এই তুলা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা বিঘায় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা নিট লাভ করতে পারে। এতে কৃষকরা আবারও তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এই চাষে কৃষক আঁশতুলা ছাড়াও বীজ পেয়ে থাকে। তুলা বীজ থেকে উন্নত মানের ভোজ্য তেল ও খৈল পাওয়া যায়। খৈল পশু ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২০১৭ সালে দেশে উৎপাদিত তুলার বীজ থেকে ৭০০ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল ও ৩২০০ মেট্রিক টন খৈল উৎপাদন হয়। ২০১৮ সালে এর উৎপাদন আরো বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তুলা থেকে আঁশতুলা এবং ফ্রেশ তেল উৎপাদনের জন্য কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে বেসরকারি পর্যায়ে ১৫ টি জিনিং শিল্প ও ১টি রিফাইনারি গড়ে উঠেছে। কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। যার অধিকাংশই মহিলা। প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পেলে দেশে সর্বোচ্চ ১০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন করা সম্ভব। জমি সংকটের কারণের বাংলাদেশে এর বেশি তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়।
দেশে তুলা চাষ সম্প্রসারণে আরো গবেষণা ও প্রয়োজনীয় জনবলসহ আর্থিক সহায়তা দরকার। খাদ্য বিশেষ করে ধান উৎপাদনের জন্য জমি ছেড়ে দিয়েই দেশে তুলা উৎপাদন করতে হয়। আবাদি জমির ৭০ ভাগই ধান উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। দেশের উচু জায়গা যেখানে পানি জমেনা এমন ২. ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়।
বর্তমানে দেশের কম খাদ্য উৎপাদনশীল বরেন্দ্র, পাহাড়, চর ও দক্ষিণাঞ্চল এবং তামাকের জমিতে তুলা চাষ করা হচ্ছে। আবাদী জমির পুরোটাই বেসরকারি পর্যায়ের। তুলা চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে সময় (৬মাস) বেশি লাগে। এই ৬মাসে অন্যান্য ফসল ২বার হয়ে থাকে। এই হিসেবে যে ফসলে লাভ বেশি হয় কৃষক তাই আবাদ করে। দেশের তুলার একটি হাইব্রিড জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে চীন থেকে আমদানী করা হাইব্রিড জাত ভাল ফল দেয়।