শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৮:২৮ সকাল
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৮:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুপারম্যান, তুমি কোথায়?

আবদুশ শাকুর ওয়াহেদ : এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের একটা ছবি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ ছাপা হয়েছে (<http://www. thedailystar. net/country/question-for-ssc-english-2nd-paper-exam-leaked-too-1531249>)। ছবিটির কল্যাণে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা বোঝার সুযোগ হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের অনাকাঙ্ক্ষিত উপকার আর কি! প্রশ্ন ফাঁস না হলে পত্রিকায়ও আসত না, আমারও দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণাটা সেকেলেই রয়ে যেত।

ফাঁসকৃত প্রশ্নের দুটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশ ব্যাকরণ আর দ্বিতীয় অংশ গঠনমূলক রচনা নিয়ে। ব্যাকরণে সর্বোচ্চ নম্বর ৬০ আর রচনামূলকে ৪০। কাজেই ধরে নেওয়া যায়, বরাদ্দকৃত ৩ ঘণ্টা সময়ের সাকল্যে ১ ঘণ্টা ১২ মিনিট সময় বরাদ্দ রয়েছে রচনামূলক অংশের জন্য। এখন চলুন দেখি কী প্রশ্ন আছে এই অংশে।

রচনামূলক অংশের প্রথম প্রশ্নটি এ রকম

‘মেঘনা ব্যাংকে কিছু হিসাবরক্ষণ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে। তুমি, মনির/মনিরা এ পদে যোগ দিতে খুবই আগ্রহী। এই চাকরিতে দরখাস্তের নিমিত্তে একটা জীবন-বৃত্তান্ত এবং একটি কভার লেটার তৈরি কর।’

জনাব প্রশ্নকর্তা কিংবা আপনারা যাঁরা পাঠ্যক্রমটি তৈরি করেছেন দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য, তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, দশম শ্রেণি পাস করা ছাত্র কি বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে দরখাস্ত করার যোগ্যতা রাখে? একজন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার যে গুণাবলি আবশ্যক, তা কি দশম শ্রেণিতে পড়া একজন ছাত্রের জানার কথা?

একটি খালি পদে আবেদন করার জন্য সেই পদ সম্পর্কে, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা কি আবশ্যক নয়? আপনারা কী শেখাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের? একটা পদের নাম এবং একটা ব্যাংকের নাম জেনেই সে কভার লেটার লিখে ফেলবে? কার বরাবর সে চিঠিটি লিখবে? কোন মাধ্যমে সে এই কর্মখালির সংবাদটি পেয়েছে? তার কী কী গুণ আছে, যেটা পদের দায়িত্বের সঙ্গে মিলে যায়; সে কারণে সে এই পদে দরখাস্ত করতে আগ্রহী হয়েছে—কীভাবে সে তার বর্ণনা দেবে?

তারপর আপনারা তাকে বলেছেন একটা জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করতে। পরীক্ষার হলে বসে জীবনবৃত্তান্ত লেখা? ধরণি দ্বিধা হও! বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যারিয়ার সার্ভিস বিভাগ রয়েছে, যাদের কাজ হচ্ছে তাদের ছাত্রদের শেখানো—কীভাবে চাকরি খুঁজতে হয়, কীভাবে কভার লেটার লিখতে হয়, জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করতে হয়। এখানে পিএইচডির ছাত্ররা যে জীবনবৃত্তান্ত আর কভার লেটার লেখে, তা তাদের উপদেষ্টাদের ঠিক করে দিতে হয় অহরহ!

ছাত্রদের তাদের কোর্সওয়ার্কের বাইরে সময় খুঁজে এসবের জন্য ট্রেনিং নিতে হয়। এত সবের পরও আমরা যখন কোনো পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত চাই, নতুন পাস করা ছাত্রদের কভার লেটার আর জীবনবৃত্তান্তে ভুল থাকে হরহামেশা। আর আপনারা দশম শ্রেণির ছাত্রদের পরীক্ষা নিচ্ছেন পরীক্ষার হলে বসে কভার লেটার আর জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করার? শাবাশ! এই প্রশ্নের জন্য নম্বর ধরা হয়েছে ৮। এর মানে হচ্ছে, ৭২ মিনিটের রচনামূলক পরীক্ষায় যেহেতু সব মিলিয়ে ৪০ নম্বর, সেহেতু এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে ১৪ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে। তা-ও আবার বিদেশি ভাষায়! ও সুপারম্যান, তুমি কোথায়?

পরের প্রশ্ন তিনটি এ রকম

‘ধরো, তুমি, সুমন/সুমনা জামালপুর জেলা স্কুলের শিক্ষার্থী। তোমাদের স্কুলে কোনো ক্যানটিন নেই বলে তোমাদের টিফিন খেতে অসুবিধা হয়। তোমাদের স্কুলে একটা ক্যানটিন স্থাপনের জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবর একখান দরখাস্ত লেখ। (নম্বর ১০)’

‘“চন্দ্রালোকিত রজনী”-এর ওপর একটি অনুচ্ছেদ লেখ। (নম্বর ১০)’

‘“তোমার প্রিয় শখ”-এর ওপর একটি রচনা লেখ। (নম্বর ১২)’

এখন আপনি চিন্তা করুন। ইংরেজি, যেটা আমাদের মাতৃভাষা নয়, সেই ভাষায় আমাদের দশম শ্রেণিতে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আমরা এতগুলো রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর আশা করছি ১ ঘণ্টা ১২ মিনিটের মধ্যে। এই পরীক্ষাব্যবস্থার ফলাফল আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ছাত্ররা ১০-২০টা করে অন্যের লেখা রচনা, অন্যের লেখা শ খানেক ভাব অন্যের হাতে সম্প্রসারিত হওয়ার পর মুখস্থ করে রচনা আর অনুচ্ছেদ লিখছে, জনৈক অভিজ্ঞ হেডমাস্টারের লেখা গাইড বইয়ের দরখাস্ত মুখস্থ করে এসে নিজের বলে পরীক্ষার হলে উগরে দিচ্ছে। এত কিছু মুখস্থ করার পরও সে পরীক্ষার হলে এসে খারাপ করছে, কারণ সে আপনাদের দেওয়া সময়ের মধ্যে সেটা উগরে দিতে পারছে না। তারপর আমরা তাদের দোষারোপ করছি মুখস্থের জন্য। আর যারা মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী নয়, তারা ছুটছে প্রশ্নের পেছনে আর আমরা তাদের দোষারোপ করছি তারা প্রশ্নের পেছনে ছুটছে বলে।

আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে একটা অলিখিত নিয়ম আছে। যিনি প্রশ্ন তৈরি করবেন, তাঁকে প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে হবে। সমাধান করতে তাঁর যে সময় লাগবে, তার দুই থেকে তিন গুণ সময় বেশি দিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। কারণ, আপনি প্রশ্ন তৈরির পেছনে যে ভাবনা ভেবেছেন, তারা তা ভাবেনি। তাদের সেই ভাবনার জন্য সময় দিতে হবে।

জনাব প্রশ্নকর্তা, আপনাকে কিছু করতে হবে না। এই ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাটিই আপনিই দিয়ে দেখুন না একবার! ৭২ মিনিটের মধ্যে রচনামূলক অংশ শেষ করুন তো? দেখি আপনি প্রথম প্রশ্নটি শেষ করতে পারেন কি না?

প্রশ্নকর্তাগণ, নীতিনির্ধারকগণ, ভাবুন একটু আমাদের ছাত্রদের আপনারা যা শেখাচ্ছেন, যেসব জিনিস তাদের পরীক্ষার হলে বসে উগরে দিতে বলছেন, তা তাদের কী কাজে আসছে? মাধ্যমিক লেভেলে ইংরেজিতে কভার লেটার আর জীবনবৃত্তান্ত লেখা শেখার উদ্দেশ্যটা আমাকে কেউ একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?

লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের প্রাণ-পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক

তথ্যসূত্র : প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়