আমিন মুনশি : প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে টঙ্গির তুরাগ পাড়ে রাজধানী ঢাকার জন্য এটি সৌভাগ্যই বলতে হয়। বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বাৎসরিক এই মিলনমেলায় অংশ নেয় ধনী-গরীব নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অনেক দুর্নাম/নেতিবাচক প্রচার থাকলেও বিশ্ব ইজতেমার কল্যাণে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয় । পরিচিতি পায় সুশৃঙ্খল, সম্প্রীতিময় এক শান্তিময় দেশ হিসাবে। তাই বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের জন্য আল্লাহর রহমতস্বরূপ। এদেশের সাড়ে ষোলো কোটি মানুষের জন্য গৌরবের বিষয় । বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনা লক্ষ করা যায় সেটি অন্য কোন উৎসবে বা আনুষ্ঠানিকতায় চোখে পড়েনা। পবিত্র হজের পর মুসলিম বিশ্বের সবচে’ বড় জমায়েত এই বিশ্ব ইজতেমায় মানুষ ছুটে আসে প্রাণের টানে। হৃদয়ের আহবানে। বাংলাদেশের সরকার, বিরোধীদল সবাই বিশ্ব ইজতেমার ব্যাপারে আন্তরিক।
গণমানুষের এই ঈমানী ¯স্রোতে তারাও শরীক হওয়ার চেষ্টা করে নিজ গরজে। প্রথম দিনের সর্ববৃহৎ জুমার নামাযে অথবা আখেরী মোনাজাতে হলেও সবার চেষ্টা থাকে এই বিশাল সমাবেশের সাথে মিলিত হতে। বরকতের ভাগিদার হতে। স্কুল, কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও সোৎসাহে অংশ নেয় বিশ্ব ইজতেমায়। এ এক অন্যরকম দৃশ্যের দেখা মেলে প্রতিবছর টঙ্গির তুরাগ তীরে । বিশ্ব ইজতেমার প্রাণ হচ্ছে বয়ান। যে বয়ান আলো ছড়ায় হেদায়েতের। নিস্তেজ হয়ে পড়া ঈমানকে করে উজ্জীবিত। আল্লাহর হুকুম মান্য করা, তাঁর রাসুলের আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করার প্রেরণা যোগায় মুসলিম উম্মাহকে। দেশি-বিদেশি লাখ লাখ মুসল্লির এই প্রাণের মেলায় এলে দেখা যায় বিনয়-উদারতা আর সম্প্রীতি কাকে বলে! নতুন যে কেউ এখানে আসলে অবাক হয়। অপার্থিব ভালবাসার মেলবন্ধনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে অজান্তেই। কান্নায় ভেঙে পড়ে বহু গুনাহগারের অন্তর। সঠিক পথের সন্ধান পায় পথভোলা মুসাফির।
বাংলাদেশের ধর্মীয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিশ্ব ইজতেমার গুরুত্ব অপরিসীম। দাওয়াত ও তাবলীগের এই অনাড়ম্বর আয়োজনের যথাযথ মূল্যায়ন করা গেলে উপকৃত হবে দেশ। সুনাম বাড়বে এ জাতির। সীমাবদ্ধতার অজুহাতে বিশ্ব ইজতেমার এই নেয়ামত যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সকলের। গৌরব ধরে রাখার বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে সবার।