ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম : আহমেদ ইসমাম : ২০১৭ সালের প্রাপ্তি সরকারের ভাষ্য মতে, জিডিপির গ্রোথের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তারা যেটা ঘোষণা দিয়েছে, ১০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি গ্রোথ হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ, তার আগের বছর ছিল ৭.১১ শতাংশ। তার আগের বছর ছিল ৬.৫৫ শতাংশ, তবে এই সংখ্যাটা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের যে হিসাব সেটা ৭ শতাংশের নিচে হয়েছে। আমি একটা হিসাব করেছিলাম, তাতে দেখা যায় ৬.৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং এই হিসাবটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছাকাছি বলা যায়। এটা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব ভালো প্রবৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ অর্থবছরের অর্থনীতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম এই সব কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে একটা জিনিস এখনো ধারাবাহিকভাবে আছে, সেটা হচ্ছে দারিদ্র। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দারিদ্র্য পিছু ছাড়েনি। বার্ষিক হারে দারিদ্র্য কমে আসছে, এটা একটা ভালো দিক। ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ছিল গড়ে ছিল ১.৮ শতাংশ, যা কমছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ১.৭ শতাংশ হারে কমছে যা ২০১৬ সালে ১.২ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা একটা মিশ্র প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি। একদিকে দারিদ্র্য বিমোচনের হার কমে আসছে, তবে যে হারে কমছে তার মাত্রাটা কম দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রপ্তানি খাত একটি বড় ভূমিকা রাখে। গেল বছর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৭২ শতাংশ। এটা সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি বলা যায়। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা আছেন, তারা আমাদের অর্থনীতিতে একটা বড় ভূমিকা রাখছে, যা এই বছরেও একটা নেতিবাচক ভূমিকায় ছিল। সাম্পতিককালে কিছু ঘটনা আছে, যা উদ্বেগজনক। ব্যাংকিং খাতের যে অস্থিরতা ও সংকট বিরাজ করছে, যা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। অন্য দিকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করার প্রবণতা বেড়েছে, আমদানি-রপ্তানি করার যে ভারসাম্য সেটা ভবিষ্যতে যে অর্থনীতির অগ্রগতি বজায় রাখার যে ভিত্তি, সেটা ভালো অবস্থায় নেই।জিডিপি বাড়ার কারণে সারা দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সেই সাথে আয় বৈশম্য কিছুটা বেড়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ভাল করেছে। এ ছাড়াও ছোট ছোট বিষয়গুলোর ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে দেখা যাচ্ছে। কিছু দিন আগেও অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া অমর্ত্য সেন একটি বই লিখেছেন, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও বেশি।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের যোগাযোগ খাতে কিছু সমস্যা আছে, যার কারণে এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না। এখানে বিভিন্ন প্রকল্প আছে, সেটা অদক্ষতার কারণে। যে কারণে হোক, প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা দেরি করে, এতে ব্যয়ের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। সম্প্রতি একটা রিপোর্ট বের হয়েছে, ১ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বাংলাদেশে ব্যয় হয় ভারতের থেকেও বেশি। এর মূল কারণ হচ্ছে, আমরা কোনো প্রকল্প সময়মতো শেষ করতে পারি না। আবার অনেক সময় এমনো দেখা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের রেট কম করে দেখানো হয়, যাতে কাজের অনুমোদন পাওয়া যায়। কিন্তু কাজ শুরু করার পর তারা নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করে, যাতে নতুন করে অর্থ বাড়ানো হয়।
তিনি বলেন, যে ব্যাংকগুলো বর্তমানে সমস্যার সমুখীন হয়েছে, সেই ব্যাংকগুলোর গুরুত্ব কতটুকু আছে সেটা যদি খতিয়ে দেখা হয়, দেখা যাবে ওই ব্যাংকগুলোর-ই খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। এটা ক্রমেই সংক্রামকের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা শক্ত অবস্থানে আছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে কোনো সমস্যা সৃষ্ঠি হওয়ার আগেই যদি নির্ণয় করা যায়, আগেই সমাধান করা যাবে। আর এখন যেটা হচ্ছে, ঘটনা ঘটার পর তার সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এতে করে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বোশ হচ্ছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া লুটপাটের দায় নিজ নিজ ব্যাংককেই নিতে হবে। এখানে তাদের গঠন করা বোর্ড কতটুকু কাজ করেছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন
আপনার মতামত লিখুন :