ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: তাবেঈ হযরত হারিস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি (কুফার) মসজিদে বসা লোকদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম লোকেরা- বাজে গল্প-গুজবে মেতে রয়েছে। আমি হযরত আলীর কাছে হাযির হলাম। আমি তাঁকে অবহিত করলাম যে, লোকেরা এভাবে মসজিদে বসে বাজে গল্প-গুজব করছে। তিনি বললেন, বাস্তবিকই লোকেরা তাই করছে? আমি বললাম- হ্যাঁ। তিনি বললেন- আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ খবরদার, অচিরেই এমন যুগ আসবে যাতে বিপর্যয় শুরু হবে। আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, এই বিপর্যয় থেকে বাঁচার উপায় কি? তিনি বললেন- আল্লাহর কিতাব ( এই বিপর্যয় থেকে আল্লাহর কিতাবের মাধ্যমে আত্মরক্ষা করা সম্ভব )। তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি সমূহের কি অবস্থা হয়েছিলো তাও এই কিতাবে আছে। তোমাদের পরে আসা লোকদের উপর কি অতিবাহিত হবে তাও এ কিতাবে আছে। তোমাদের যাবতীয় ব্যাপারে ফায়সালা করার বিধানও এতে বিবৃত হয়েছে। এই কুরআন হচ্ছে সত্য মিথ্যার- মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালাকারী কিতাব। এটা কোন হাসি ঠাট্টার বস্তু নয়। যে অহংকারী তা পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তাঁকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি এই কুরআন পরিত্যাগ করে অন্যত্র হেদায়াত তালাশ করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এই কুরআন হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার মজবুত রশি এবং প্রজ্ঞাময় যিকির ও সত্য সরল পথ। তা অবলম্বন করলে প্রবৃত্তি কখনো বিপথগামী হয় না। তা যবানে উচ্চারন করতে কষ্ট হয় না। জ্ঞানীগণ কখনো এর দ্বারা পরিতৃপ্ত ও বিতৃষ্ণ হয় না। একে যতই পাঠ করে তা পুরাতন হয় না। এর বিস্ময়কর তথ্য সমূহের অন্ত নেই। এটা শুনে জীনেরা স্থির থাকতে পারেনি, এমনকি তারা বলে উঠলো- “আমরা এমন এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি যা সৎ পথের সন্ধান দেয়। অতএব আমরা এর উপরে ঈমান এনেছি।[সূরা জীন: ১, ২ ]
যে ব্যক্তি কুরআন মোতাবেক কথা বলে সে সত্য কথা বলে। যে ব্যক্তি তদানুযায়ী কাজ করবে সে পুরস্কার পাবে। যে ব্যক্তি তদানুযায়ী ফায়সালা করবে সে ন্যায়ানুগ ফায়সালা করতে পারবে। যে ব্যক্তি লোকদের এই কুরআন অনুসরনের দিকে ডাকে সে তাঁদের সরল পথেই ডাকে। [তিরমিযি, দারেমী]
নবী সাল্লালালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে কুরআন মাজীদের সর্বপ্রথম সৌন্দর্য এই বলেছেন যে, কুরআনে এটাও বলা হয়েছে যে, অতীত জাতিসমূহ কল্যাণ ও মঙ্গলের পথ অনুসরন করার কারনে তাঁদের পরিনাম কিরূপ হয়েছিলো এবং পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যে যারা ভ্রান্ত পথে চলেছিল তাঁদেরই বা কি পরিনতি হয়েছিলো। কুরআনে এও বলা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে ভ্রান্ত পথের অনুসারীদের কি পরিনতি হবে এবং সঠিক পথের অনুসারীদের ভাগ্যে কি ধরনের কল্যাণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। কুরআনে একথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমাদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে এর মীমাংসা কিভাবে হওয়া উচিৎ। ‘হুয়াল ফাসলু’- বাক্যাংশের অর্থও হচ্ছে, কুরআন মাজীদ চূড়ান্ত ফায়সালাকারী কথা বলে এবং পূর্ণ গাম্ভীর্যের সাথে বলে, এর মধ্যে হাসি-ঠাট্টা ও উপহাস মূলক এমন কোন কথা বলা হয়নি, যা মানা বা না- মানায় কোন পার্থক্য সূচিত হয় না।অতঃপর বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথা থীক হেদায়াত লাভের চেষ্টা করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এর অর্থও হচ্ছে- এই কিতাব ছাড়া আর কোথাও থেকে এখন আর হেদায়াত লাভ করা যেতে পারে না। যদি অন্য কোন উৎসের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে গোমরাহি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। আরো বলা হয়েছে- এই কুরআন হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার মজবুত রশি। অর্থাৎ কুরআন হচ্ছে- বান্দাহ এবং তাঁর প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম। যে ব্যক্তি কুরআনকে শক্তভাবে ধারন করবে, খোদার সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হবে। যে ব্যক্তি কুরআনকে ছেড়ে দিলো, সে আল্লাহ তায়ালার সাথে নিজের সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেললো।কুরআনের প্রজ্ঞাময় যিকির হওয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, এটা এমন এক নসীহত যার গোটাটাই হিকমত, প্রজ্ঞা ও জ্ঞানে পরিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করে।