হ্যাপী আক্তার: বিশ্ব জুড়ে হেরোইনের বড় একটি অংশ আসে আফগানিস্তানে উৎপাদিত আফিম থেকে। জাতিসংঘের এক নতুন রিপোর্টে বলা হচ্ছে আফগানিস্তানে এ বছরে আফিমের উৎপাদন গেল বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে। তালেবানের মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জন্য তহবিলের যোগানও আসে আফগানিস্তানে আফিম চাষ থেকে। দেশটিতে বর্তমানে শিশুদের মধ্যেও আফিমের ব্যবহার বাড়ছে। সেখানে প্রায় ১ লাখ শিশু মাদকাসক্ত। সূত্র: বিবিসি বাংলা
কাবুলের এক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ক্লাস রুম। আফগানিস্তানের সবচেয়ে অল্প বয়সের শিশুরা আফিম এবং হেরোইন আসক্তরা এই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে এখানে জড়ো হয়েছে। এই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে যে শিশুরা এসেছে তাদের বয়স ৫ বছরের বেশি হবে না।
আফগানিস্তানে মাদকের উৎপাদন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে মাদকাসক্তি আর এই মাদকাসক্তদের অনেকেই হচ্ছেন শিশু। মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ৯ বছরের এক শিশু জানিয়েছে, মাত্র তিন মাস আগে হেরোইনে টান দিতে শুরু করে সে। শিশুটি আরো বলে, আমরা আমাদের খালার সাথে থাকি। একদিন আমার দাঁতে ব্যথা হলো তখন খালা বললেন, এটাতে টান দাও তোমার দাঁতের ব্যথা কমে যাবে। এই ঘটনার পর থেকে সে মাদকাসক্ত হয়ে পরে। একইভাবে তার মা-বাবাও আসক্ত। হেরোইনে টান দেবার পর থেকে শিশুটি জানায় তার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হতো এবং কান্নাকাটি করতো।
কাবুলের কেন্দ্রটি হচ্ছে মাদকাসক্ত শিশু এবং নারীদের সবচেয়ে বড় পুনর্বাসন কেন্দ্র। পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের ৪৫ দিন পর্যন্ত রেখে চিকিৎসা এবং পরামর্শ দেয় হয়।
মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. ফারিমা বলেছেন, এখানে ভর্তি হওয়া নারী ও শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ই চলছে। অনেক শিশু সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে কিন্তু আবারও মাদকাসক্ত হয়ে এখানে ফিরে আসছে।
আফগানিস্তানে প্রায় ১ লাখ শিশু মাদকাসক্ত বলে ধারণা করা হয়। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেবার জন্য কেন্দ্র আছে মাত্র ১০টি। জাতিসংঘের নতুন এক রিপোর্টে বলা হয়েছে আফগানিস্তানে বর্তমানে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে আফিম উৎপাদিত হচ্ছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে সামনে আরো শিশু মাদকাসক্ত হয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় বিক্রির জন্য আরো বেশি হেরোইন যাবে আফগানিস্তান থেকে। বিশ্বের বেশির ভাগ হেরোইন তৈরি হয় আফগানিস্তানে চাষ হওয়া আফিম থেকে।
বেশিরভাগ দরিদ্র চাষির কাছে আফিমই হচ্ছে সহজতম উপায়। আফগানিস্তানে তালেবান গোষ্ঠী উপার্জনে সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে আফিম। আফিমের চাষ দিন দিন বাড়ার পেছনে দায়ী করা হচ্ছে দেশটির অবনতিশীল নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিকে।
বিদ্রোহীরা আরো বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। যার কারণে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আফিম চাষ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আফগানিস্তানের মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপমন্ত্রী জাবেদ আহমেদ কাইয়ূম এটাকে সরকারি ব্যর্থতা হিসেবে স্বীকার রাজি হলেন না। তবে আফিমের যে উৎপাদন বাড়ছে তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানালেন তিনি।
আফগানিস্তানের মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপমন্ত্রী জাবেদ আহম্মেদ কাউয়ূম বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে বলে আসছি যেভাবে আমরা সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করছি সেভাবেই আমাদের আফিম চাষের সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। কাইয়ূম বলেন, সন্ত্রাস ও মাদক এই দুটি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কাজেই আফিমের চাষ যদি বেড়ে থাকে সে বিষয়টি উদ্বেগের বিষয়। হুমায়ূন আরো বলেন, তার মানে বিদ্রোহীরা লড়াই করার জন্য আরো বেশি অর্থ পাচ্ছে।
কাবুলের পশ্চিমের একটি সেতুর নিচে ময়লা ও নোংড়া পরিবেশে হেরোইন সেবীদের আস্তানা। যদি এই সমস্যার মোকাবেলা করা না যায় তাহলে আফগানিস্তানে পরবর্তী প্রজন্মের আরো অনেকের গন্তব্য হবে নোংড়া ও ময়লা পরিবেশের জায়গাটিতে। যুদ্ধ বিদ্রোহে জর্জরিত আফগানিস্তানের সংকট আরো গভীর করছে মাদকাসক্তকে।ি
আনিস/