টেলিগ্রাম ম্যাসেজিং অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা পাভেল দুরভ জানিয়েছেন, আনুমানিক ১৩.৯ বিলিয়ন ডলার (১০.৩ বিলিয়ন পাউন্ড) সম্পত্তি তার ৬ জৈবিক সন্তান এবং দাতারূপে যে শুক্রাণু দিয়েছেন তা থেকে জন্ম নেয়া শতাধিক শিশুদের মধ্যে ভাগ করে দেবেন। শুক্রবার (২০ জুন) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ এ তথ্য জানায়।
ফরাসি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ল্য পয়েন্ট-কে দুরোভ বলেন, ‘তারা সবাই আমার সন্তান এবং সবার সমান অধিকার থাকবে! আমি চাই না আমার মৃত্যুর পর তারা একে অপরের সঙ্গে লড়াই করুক।’
দুরোভ দাবি করেন, তিনটি ভিন্ন সঙ্গীর সাথে তার ছয়টি সন্তানের দাপ্তরিক পিতা তিনি। কিন্তু ‘যে ক্লিনিকে আমি ১৫ বছর আগে একজন বন্ধুর সাহায্য করতে শুক্রাণু দান শুরু করেছিলাম, তারা আমাকে জানিয়েছে যে ১২টি দেশে এইভাবে ১০০টিরও বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে।’
নির্বাসিত এই রুশ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা আরও বলেন, তার সন্তানরা ৩০ বছর পর্যন্ত তাদের উত্তরাধিকার পাওয়ার সুযোগ পাবে না। তিনি বলেন, ‘আমি চাই তারা সাধারণ মানুষের মতো বাঁচুক, নিজেরা নিজেদের গড়ে তুলুক, আত্মবিশ্বাসী হোক, সৃজনশীল হোক—ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর নির্ভরশীল না হয়।’
৪০ বছর বয়সী দুরোভ বলেন, তিনি এখনই একটি উইল লিখে রেখেছেন। প্রাইভেসি ও এনক্রিপ্টেড মেসেজিংয়ের জন্য পরিচিত তার অ্যাপ টেলিগ্রামের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ১০০ কোটিরও বেশি।
ফ্রান্সে তার বিরুদ্ধে আনা অপরাধের অভিযোগ নিয়েও তিনি কথা বলেন, যেখানে গত বছর অপরাধ কমাতে অ্যাপটি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ না করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
মাদক পাচার, শিশু যৌন নির্যাতন কন্টেন্ট ও জালিয়াতি সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সহযোগিতা না করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। টেলিগ্রাম আগেও বলেছে যে তাদের কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত নয়।
ল্য পয়েন্ট-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগগুলোকে একেবারেই হাস্যকর বলে উল্লেখ করেন। তিনি যোগ করেন, ‘শুধু এই কারণে যে অপরাধীরা আমাদের মেসেজিং পরিষেবা ব্যবহার করে, তা আমাদের অপরাধী করে তোলে না।’
রাশিয়ায় জন্ম নেয়া দুরোভ এখন দুবাইতে থাকেন, যেখানে টেলিগ্রামের সদর দফতর অবস্থিত। তার ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।
তিনি ২০১৩ সালে টেলিগ্রাম চালু করেন এবং অ্যাপটি রাশিয়ায় এখনও জনপ্রিয়। টেলিগ্রামে ২০০,০০০ সদস্য পর্যন্ত গ্রুপ তৈরি করা যায়, যা সমালোচকদের মতে ভুল তথ্য ছড়ানো, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, নব্য-নাৎসি, শিশু যৌন নির্যাতন বা সন্ত্রাস-সম্পর্কিত কন্টেন্ট শেয়ার করা সহজ করে।
যুক্তরাজ্যে, গত গ্রীষ্মে ইংরেজ শহরগুলোর সহিংস বিশৃঙ্খলা সংগঠনে ভূমিকা রাখা ডানপন্থী চ্যানেল হোস্ট করার জন্য অ্যাপটিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
টেলিগ্রাম কিছু গ্রুপ সরিয়ে ফেললেও, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, চরমপন্থী ও অবৈধ কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি বা মেসেজিং অ্যাপের তুলনায় টেলিগ্রামের ব্যবস্থা অনেক দুর্বল।