শিরোনাম
◈ গরুর চামড়া ৮০০, ছাগলের ১০ টাকা ◈ সিলেটে ঈদ আনন্দ ভেসে গেল বন্যার জলে ◈ অর্থনৈতিক সংকটে সিংহভাগ মানুষ কোরবানি দিতে পারেনি: জিএম কাদের ◈ সুপার এইটে স্থান, ক্রিকেট দলকে রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন ◈ ফিলিস্তিনসহ সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির ◈ শাসকগোষ্ঠী উল্লাসের ঈদ করছে আর বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় চলছে শোকের মাতম: রিজভী  ◈ কারাগারে গরু ও খাসি কোরবানি, বন্দিদের বিশেষ বিনোদনের ব্যবস্থা ◈ দেশবাসীকে ভয়ভীতি কোরবানি দেওয়ার আহ্বান মির্জা আব্বাসের ◈ এবারের ঈদ দেশের মানুষের কাছে একটা কষ্টের দিন: মির্জা ফখরুল ◈ ঈদুল আজহা উপলক্ষে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৪, ১২:২৯ দুপুর
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৪, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশের জন্য স্বর্ণপদক আনল যে নারী রোবটিক্স দল

বাঁ থেকে নুসরাত জাহান নওরিন, তাহিয়া রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ফাবিন, নুসরাত জাহান সিনহা ও সানিয়া ইসলাম সারা। 

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রযুক্তি বিভাগে 'প্রহরী' নামে বিশেষ ধরনের রোবট তৈরি করে স্বর্ণপদক জিতেছে কোড ব্ল্যাক। গত ১৯ মে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে এ স্বর্ণপদক জিতেন তারা। সূত্র: কালবেলা

কোড ব্ল্যাকের সদস্য মোট ৫জন। তাদের মধ্যে ফাবিন দলনেতা। দলের ম্যানেজার নুসরাত জাহান সিনহা। আর তাহিয়া রহমান প্রজেক্ট ম্যানেজার। বাকি দু'জন নওরিন ও সারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজে পড়াশোনা করছেন। প্রতিযোগিতায় সশরীরে অংশ নেন ফাবিন, সারা ও নওরিন। তাহিয়া ও সিনহা অংশ নেন ভার্চুয়্যালি। সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

২০২৪ সালে এসেও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতির পথে সামাজিক কুসংস্কার ও গৎবাঁধা বিশ্বাস নীরব বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 'কেবল পুরুষরাই এসব ক্ষেত্রের জন্য যোগ্য' বলে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে, তা আসলে অগ্রগতির পথে একটি বাধা।

বাংলাদেশি রোবটিক্স দল টিম অ্যাটলাসের দলনেতা সানি জুবায়েরের হাত ধরে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কোড ব্ল্যাক। ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড রোবটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল টিম অ্যাটলাস।

কোড ব্ল্যাকের দলনেতা জান্নাতুল ফেরদৌস ফাবিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা আনন্দে আটখানা হয়ে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরলাম এবং চারপাশের কিছুই খেয়াল না করে রোবটের মতো মঞ্চের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। উদ্দেশ্য ছিল নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও নিবেদিত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যাতে তারা রোবোটিক্স এবং স্টেমের (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়) অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুশীলন করতে পারেন।'

এ বিজয় দলটির জন্য বিশেষ করে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তরুণ সদস্য সানিয়া ইসলাম সারা ও নুসরাত জাহান নওরিনের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি অর্জন।

সারা বলেন, 'আমি একটি ব্রোঞ্জপদক জিতলেও খুশি হতাম।' 

সানি জুবায়ের বলেন, 'আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নারী সদস্যদের নিয়ে যেতে আমি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কারণ সমাজ থেকে অনেক প্রশ্ন উঠত। তাই আমি একান্ত তাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা করলাম, যাতে তারা আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারেন।' বর্তমানে সানি জুবায়ের কোড ব্ল্যাকের মেন্টর হিসেবে যুক্ত আছেন।

প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে কোড ব্ল্যাকের সদস্যরা তাদের প্রকল্পের বিষয়ে বিভিন্ন আইডিয়া ও রোবটের কনফিগারেশনের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন। এই পর্বে নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের জাকার্তায় ১৩ থেকে ১৭ মে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ডব্লিউএসইইসিতে বিশেষত গণিত, শক্তি এবং প্রকৌশল, পদার্থবিদ্যা, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে প্রতিযোগিতা হয়। এতে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকেন।

প্রজেক্ট প্রহরী:

প্রহরী একটি উদ্ধারকারী রোবট, যা দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

সহজ কথায়- রোবটটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অগ্নি নির্বাপণ। অত্যাধুনিক ইমেজ প্রসেসিং এবং এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সাহায্যে এটি বাস্তব সময়ে ভিজ্যুয়াল ডেটা বিশ্লেষণ, বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও বিপজ্জনক অবস্থার মূল্যায়ন করতে পারে। এটি বৈরী পরিবেশে নির্ভুলভাবে চলাচল করতে পারে।

রোবটটি জীবিতদের শনাক্ত করতে, বিপজ্জনক অবস্থার মূল্যায়ন করতে এবং দক্ষতার সাথে বৈরী পরিবেশে চলাচলের জন্য বিভিন্ন সেন্সর ব্যবহার করে। এছাড়াও এটি উদ্ধার অভিযানের সময়  অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 

পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের 'নকশী কাঁথার মাঠ' বই থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে রোবটটি তৈরি করা হয়েছে।

ফাবিন বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আরও বেশি ঘটছে। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড সবচেয়ে সাম্প্রতিক ও গুরুতর উদাহরণ। একজন অগ্নি নির্বাপণকর্মীকে বাইরের দিক থেকে আগুন নেভানো শুরু করতে হয়। তিনি আগুনের মধ্যে ঢুকতে পারেন না, কিন্তু আমাদের রোবট 'প্রহরী' সেটি পারে। এটি আগুনের মধ্যে ঢুকে যতটা সম্ভব ধোঁয়া শোষণ করে এবং প্রথমে আগুনের উৎস বন্ধ করার চেষ্টা করে।'

রোবটটির দেহের বাইরের অংশ এর বাইরের শরীর অ্যালুমিনিয়ামের সংমিশ্রণ  দিয়ে তৈরি। এটি ১২৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম। চারপাশের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য এটির সঙ্গে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরতে পারে এমন একটি ক্যামেরা যুক্ত করা হয়েছে। এর আল্ট্রাসনিক সেন্সর সামনে কোনো বাধা থাকলে সেটিও শনাক্ত করতে পারে। এটি টানা আট ঘণ্টা কাজ করতে পারে।

২০১৯ সালে প্রহরীর আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়। সময়ে সময়ে এর সঙ্গে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এটি প্রহরীর চতুর্থ সংস্করণ এবং এটি সম্পন্ন করতে দুই মাস লেগেছে।

দলটির দু'জন সদস্য ফাবিন ও সিনহা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের আর্থিক ও মানসিকভাবে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে। রোবটটি তৈরি করতে গবেষণা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়েই চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। খরচের একটি অংশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। পাওয়ার স্পন্সর ও কিছু ভোগ্যপণ্য দিয়ে সহায়তা করেছে আরএফএল।

দেশজুড়ে কোড ব্ল্যাকের ৫০ জনেরও বেশি সাধারণ সদস্য রয়েছেন। তারা প্রতিটি বড় ইভেন্টের আগে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে পৃথক একটি দল গঠন করেন।

ফাবিন জানান, তাদের সদস্যদের বিভিন্ন রোবোটিক্স ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশজুড়ে তাদের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করতে চান। সেই সাথে তাদের এই যাত্রায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিকে তারা স্বাগত জানান। 

এর আগে ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন ফেস্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন তারা। আর ২০২২ ও ২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ পদক।   

দলের আরেক সদস্য নুসরাত জাহান সিনহা বলেন, 'সমস্ত বাধা অতিক্রম করে স্টেমের ক্ষেত্রগুলোতে নারীদের অগ্রগতিকে উৎসাহিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা নিয়মিত কর্মশালা ও ইভেন্টের আয়োজন করি যাতে আমাদের সদস্যদের বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখাতে পারি। এর মাধ্যমে তাদেরকে প্রযুক্তি, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং আইওটি-তে সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে পারি।'

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দলটি কৃষিকাজে প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে কাজ করছে। তাদের গবেষণাগার রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে।

এ বছর ইন্দোনেশিয়ান ইয়াং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইওয়াইএসএ)  ডব্লিউএসইইসি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। জাকার্তার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১৮টি দেশ থেকে ৩১০টি দল এতে অংশ নেয়। 

স্বর্ণপদক জয়ী দলের সদস্য তাহিয়া রহমান বলেন, 'এটি আমার প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল। প্রত্যাশা কম ছিল। কিন্তু আমরা এখানে সবকিছু অর্জন করেছি। যখন আমি স্বর্ণপদক ঘোষণার সময় আমাদের দলের নাম দেখলাম, তখনকার অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ।'

এইচএ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়