শিরোনাম
◈ পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তি কিছুটা কমেছে, জনবল বাড়ানোর তাগিদ  ◈ কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকার পরামর্শ দূতাবাসের ◈ কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: সাহায্য চাইলেন বাংলাদেশিরা  ◈ সংসদ ভবন এলাকায় দুই প‌ক্ষে‌র সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত ◈ আবারও বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১১৮৪৬০ টাকা ◈ ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে: এডিটরস গিল্ড ◈ দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপি’র মাথা খারাপ হয়ে গেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ যুক্তরাষ্ট্র স্মার্ট প্রাণিসম্পদ প্রকল্পে ৩৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিবে ◈ সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কাঁচাবাজারে দাম কমবে: সাঈদ খোকন ◈ নরসিংদীতে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজন নিহত

প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল, ২০২৪, ০৪:০৫ দুপুর
আপডেট : ০৫ এপ্রিল, ২০২৪, ০৪:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি

লেখক: মো. জাহিদুল ইসলাম

[২] বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্যের আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হলো নেটওয়ার্কিং। নেটওয়ার্কিং এই শব্দটার সঙ্গে বিশ্বের প্রায় সব মানুষই পরিচিত। নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে এমন এক নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় যার মাধ্যমে আজ পুরো পৃথিবীর মানুষ তাদের নিত্যদিনের কাজকে সহজ ও সরল করে তুলেছে। তথ্যের আদান-প্রদান করার জন্য নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত করা হয়। ইন্টারনেট হলো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্ক। কখনো কখনো নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য তারের (Cable) প্রয়োজন হয়।

[৩] আবার কখনো তার (Cable) ছাড়াই ওয়ারলেস অর্থাৎ তারবিহীন  (Wireless Network) তৈরি করা হয়।আধুনিক যুগের বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় অবাধ প্রবাহ একটি অনিবার্য জীবনানুষঙ্গ। জীবনের সর্বস্তরে তথ্য শেয়ারের এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছোট-বড় নানা ধরনের অজয় কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রচলিত আছে। এ সব নেটওয়ার্কের সাথে বিপুল পরিমাপ কম্পিউটারসহ আরো অনেক আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও সংযুক্ত থাকে। 

[৪] বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কিং।সমগ্র ক্যাম্পাস জুড়ে শুধু ইন্টারনেট সরবরাহ করাই ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কের মূল লক্ষ্য নয়। সমগ্র ক্যাম্পাসকে নেটওয়ার্কে আওতাভুক্ত করে  নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারের সরবরাহ করার পাশাপাশি যে সকল স্থানে তথ্য আদান প্রদানের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োজন সে সকল স্থানে নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি ব্যবহার করাই হচ্ছে ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কিংয়ের আসল উদ্দেশ্য।

[৫] যখন একটি ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কিং এর পরিকল্পনা করা হয় তখন এর মধ্যে সবকিছু যেন তথ্যপ্রযুক্তির সেবাগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে সেভাবেই পরিকল্পনা করতে হবে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ক্যাবল কানেকশন সহ ওয়ারলেস কানেকশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। বর্তমান সময় ওয়ারলেস কানেকশনই সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্ট প্রযুক্তি। তাই এই ওয়ারলেস প্রযুক্তির  ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। 

[৬] রাউটার অর্থাৎ এক্সেস পয়েন্ট গুলো এমন ভাবে স্থাপন করতে হবে যেন এর ফ্রিকোয়েন্সি (তরঙ্গ) গুলো  ব্যবহারকারীদের সীমানার মধ্যে থাকে। এরকমভাবে স্থাপন করা ঠিক হবে না যেন ফ্রিকোয়েন্সি (তরঙ্গ) গুলো ব্যবহারকারীদের বিপরীতমুখী হয়ে কাজ করে।যোগাযোগের জন্য আইপি ফোনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

[৭] নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সিসি ক্যামেরা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি  শিক্ষক,  শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রাখা সহ বিভিন্ন তথ্যের ডাটাবেজ সংগ্রহ করা যেতে পারে। এর সাথে আরো কিছু যোগ করা যায় যেমন সিটিজেন চার্টার গুলো ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে কন্ট্রোলিং করার ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ তথ্য আদান-প্রদানের যে বিষয়গুলো রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে যেসব জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব সেসব স্থানে প্রযুক্তি নির্ভর নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করাই হচ্ছে সবচেয়ে সহজ এবং সুন্দর পদ্ধতি।

[৮] ক্যাম্পাস বলতে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বুঝি। আর নির্দিষ্ট কোন ক্যাম্পাস বা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম করবার জন্য যে ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় সেটিকে ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক (CAN - Campus Area Network) বলা হয়। এই ধরনের নেটওয়ার্ক কোন প্রতিষ্ঠান বা ক্যাম্পাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই ধরনের নেটওয়ার্ক শুধুমাত্র সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ক্যাম্পাসের ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যবহার করতে পারেন।এই ধরনের নেটওয়ার্ক লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN- Local Area Network) এর অন্তর্গত। 

[৯] কোন নির্দিষ্ট এরিয়ায় নির্দিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য যে ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় তাকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলা হয়।এই ধরনের নেটওয়ার্কে কোন প্রধান সার্ভার থাকে যেখানে, নির্দিষ্ট এরিয়ার সমস্ত ডেটা গুলি স্টোর বা জমা করা হয়। এবং সেই সার্ভারের সাথে বাকি কম্পিউটারগুলোর কানেকশন তৈরি করে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হয়। ল্যান (LAN) এর টপোলজি সাধারণত স্টার, বাস, ট্রি ও রিং হয়ে থাকে। এই ধরণের নেটওয়ার্কে তার মধ্যম হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল এবং তারবিহীন মাধ্যম হিসেবে রেডিও ওয়েভ ব্যবহৃত হয়। 

[১০] অনেক ল্যান (LAN) -এর সমন্বয়ে ক্যান (CAN) গঠিত হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন, স্টুডেন্ট সেন্টার, আবাসিক হলসমূহ, জিমনেসিয়াম এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত ভবনে স্থাপিত ল্যান (LAN) গুলোকে সংযুক্ত করতে ক্যান (CAN) ব্যবহার করা হয়। এর বিস্তৃতি ১ থেকে ৫ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত হতে পারে।ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক একটি সীমিত ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে কাজ করে। একটি এমন নেটওয়ার্ক টপোলজি যা একাধিক বিল্ডিংকে বিস্তৃত করে। 

[১১] একটি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণত একটি ডিস্ট্রিবিউটেড স্টার টপোলজি ব্যবহার করে। এই ধরনের নেটওয়ার্ক ডিজাইনে একটি কেন্দ্রীয় নোড (একটি প্রধান বিল্ডিংয়ে) সার্ভার রুম থাকে যার সাথে অন্যান্য সমস্ত নোড (অতিরিক্ত বিল্ডিংগুলি) সংযুক্ত থাকে। ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত এবং কোনো কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। তাই একে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলে। কেউ ইচ্ছা করলেই এই নেটওয়ার্কে অ্যাকসেস করতে পারে না।

[১২] এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ও তত্ত্বাবধানে। এর সিকিউরিটি সিস্টেম মজবুত এবং এতে ট্রাফিক নেই বললেই চলে। ডেটা আদান-প্রদানে ডিলে (Delay) কম হয়। ক্যান  (CAN) একটি কম ব্যয়বহুল টেকসই নেটওয়ার্ক ।তবে ল্যান ইনস্টল করার প্রাথমিক ব্যয়টি বেশ বেশি। এটি এমন এক নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি প্রদান করে যা একাধিক ক্যান (CAN) ডিভাইসকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে । এটি একটি প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, সুতরাং বাইরের কোন সংস্থা কখনই এটি নিয়ন্ত্রণ করে না। 

[১৩] হার্ড-ডিস্ক, DVD-ROM এবং প্রিন্টার এর মতো কম্পিউটার রিসোর্সগুলো ল্যান শেয়ার করতে পারে। ফলে এটি হার্ডওয়্যার ক্রয়ের ব্যয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।  ক্যান  (CAN) নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় এডমিন যদি ল্যান এর কেন্দ্রীয় ডেটার নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয় তাহলে অননুমোদিত ব্যবহারকারীরা একটি প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রিয় ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে।ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কের জন্য একটি দীর্ঘস্থায় এবং শক্তিশালী পরিকল্পনা করতে হবে।

[১৪] পরিকল্পনা এভাবে করতে হবে যেন প্রযুক্তি যতটুকু আপডেট অর্থাৎ বিস্তর হবে সেটা যেন পরবর্তী প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। সাংঘর্ষিক না হয় । প্রযুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রদান করা সহ গবেষণার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর ফলে  যখনই নতুন প্রযুক্তি আসবে সে প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া যাবে। সার্ভার রুমে যে সকল ডিভাইস স্থাপন করা হবে প্রতিটি ডিভাইসেরী ব্যাকআপ ডিভাইস রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি দুই ধরনের সার্ভার ব্যবহার করতে হবে। 

[১৫] সার্ভার রুমের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক ডিভাইস হিসেবে পরিচিত প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি, ফায়ারওয়াল, ডিস্ট্রিবিউশন সুইচ, ব্যাটারি কেবিনেট, রাউটার সহ প্রয়োজনীয় ডিভাইস সমূহের মধ্যে সর্বক্ষণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটারের সাহায্যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সার্ভার রুমে প্রতিটি নেটওয়ার্ক ডিভাইসের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের রাখার জন্য সার্বক্ষণিক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) ব্যবস্থা রাখতে হবে। 

[১৬] কারণ প্রতিটি ডিভাইসের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা থাকে ।এই তাপমাত্রা অধিক উন্নীত হলে  ডিভাইসটি তার কর্মদক্ষতা হারিয়ে ফেলে। তাই সব সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী। এছাড়াও সার্ভার রুম ব্যতীত  বাহিরে অন্যান্য যে সকল স্থানে সুইচ,  রাউটার সহ প্রয়োজনীয়প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক ডিভাইস স্থাপন করা হবে সেখানকার তাপমাত্রা যেন নিয়ন্ত্রিত থাকে এরকম স্থান বেছে নেওয়া সবচেয়ে উত্তম।

[১৭] মূলত একটি ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কের জীবনচক্রের মধ্যে অন্ততপক্ষে পরিকল্পনা এবং প্রোগ্রামিং, স্থাপনা এবং বাস্তবায়ন, অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ এবং নেটওয়ার্ক সিস্টেমের নেটওয়ার্ক অপ্টিমাইজেশনের পুরো প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে।

লেখক: মো. জাহিদুল ইসলাম 
আইসিটি সেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়