এক সভাপতির পদ ছাড়া ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা-পর্ষদে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন নির্বাচনের পর আমিনুল ইসলাম বুলবুল ফের সভাপতি হয়েছেন। ফারুক আহমেদ, খালেদ মাসুদ পাইলট, আবদুর রাজ্জাকের মতো সাবেক ক্রিকেটাররাও আছেন বোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর এটাকে ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন।
দীর্ঘ ১২ বছর বিসিবি সভাপতির পদে থাকার পর নাজমুল হাসান পাপন গত বছর পদত্যাগ করেছেন। তিনি পদত্যাগের পরের ১৪ মাসে বোর্ডপ্রধান পরিবর্তন হয়েছে দুইবার। ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট বিসিবি সভাপতি হয়েছেন ফারুক। তাঁর পরিবর্তে বুলবুল এ বছরের মে মাসে বিসিবি সভাপতি হয়েছেন। এমনকি নির্বাচনের পরও বুলবুল সভাপতির দায়িত্বে আছেন। ফারুক ও মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন হয়েছেন সহসভাপতি। শাখাওয়াতের মতো চমক হয়ে বোর্ডে এসেছেন আসিফ আকবর। গায়ক থেকে তিনি বনে গেলেন বিসিবির পরিচালক। পেয়েছেন বিসিবির বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের দায়িত্ব। খালেদ মাসুদ পাইলট হয়েছেন এইচপির চেয়ারম্যান। আবদুর রাজ্জাক নারী ক্রিকেটের দায়িত্বে এসেছেন।
সাবেক ক্রিকেটাররা বিসিবিতে আসায় দেশের ক্রিকেটে অনেক উন্নতি হবে বলে মনে করেন আসিফ আকবর। বর্তমান সভাপতি বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কী কথাবার্তা হয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তরে মিরপুরে আজ সাংবাদিকদের আসিফ বলেন, ‘বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। এখন তো বোর্ডে ক্রিকেটাররা আসছে। রাজ্জাক, পাইলট এসেছে। ট্যাকটিকাল দিকগুলো উন্নত হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বের হয়ে ক্রিকেটাররা বোর্ডে আসছে। যারা সংগঠক, ক্লাব কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করেন, আমি মনে করছি নতুন একটা জোয়ার তৈরি হবে। সংগঠকেরাই তো আসল। তারা অর্থনৈতিক ব্যাপারে সাপোর্ট দেবেন। অনেকে মাঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাদের মাঠমুখী করার চেষ্টা থাকবে অবশ্যই।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসে আজই মিরপুরে এলেন আসিফ আকবর। দীর্ঘ ২২ বছর পর এখানে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বুলবুল প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিসিবির বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের প্রধানের দায়িত্বে থাকা আসিফ স্মৃতিরোমন্থন করেছেন। সাংবাদিকদের এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান যে বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে একটা সময়. . অনেক বড় ক্রিকেটার বুলবুল ভাই। আমি অনেক ছোট। প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলেছি। বুলবুল ভাই এক দলে। আমি আরেক দলে। বুলবুল ভাইকে দেখার সুযোগ হয়েছে ছোটবেলা থেকে। তখন আমি ক্লাস টেন-ইলেভেনে পড়ি। নান্নু ভাই কিংবা ফারুক ভাইকে দেখার সুযোগ হয়েছে ছোটবেলা থেকে। পক্ষে ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, জাভেদ ওমর বেলিম, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, জাকারিয়া, জাহাঙ্গীর।’
বয়সভিত্তিক দলে কাজ করতে কী উদ্দীপনা কাজ করছে আসিফ আকবরের—সেই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের গানের ক্যারিয়ারের কথা উল্লেখ করেছেন। মিরপুরে সাংবাদিকদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই গায়ক বলেন, ‘বাচ্চাদের ব্যাপারটা কী? বাচ্চাদের চিনি না। তারা দেশের ভবিষ্যৎ। আর জ্যেষ্ঠ নাগরিকেরা একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে চলে গেছেন বা এখনো আছেন। বাচ্চাদের ব্যাপারটা হচ্ছে আপনারা যদি আমার গানের ক্যারিয়ার দেখেন, বাংলাদেশের সব তরুণ গায়ক-গায়িকা-পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করে এসেছি। তরুণদের সঙ্গে থাকাটা মূলত নিজের তারুণ্য ধরে রাখা।’
বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, রবীন্দ্র জাদেজার মতো তারকারা গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন। তবু ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের পারফরম্যান্সে কোনো ভাটা পড়েনি। অভিষেক শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল, শুবমান গিল, তিলক ভার্মারা খেলছেন দুর্দান্ত। বাজে পারফরম্যান্স করলে তো বটেই, এমনকি দারুণ খেলার পরও পরের ম্যাচে একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে থাকা অনিশ্চয়তা। ভারতীয় ক্রিকেটের পাইপলাইন যেখানে এত শক্তিশালী, সেই তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা অনেক বাজে।
বয়সভিত্তিক দলে কাজ করেই দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন শক্তিশালী করতে চান আসিফ আকবর। মিরপুরে সাংবাদিকদের আজ তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা খেলবে। বাচ্চারা ভবিষ্যতেই বড় ক্রিকেটার হবে। বয়সভিত্তিক দলে কাজ যারা করেন, তারা ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তৈরি করবেন। সেখানে আমাদের বর্তমান ক্রিকেটার, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থাকবে যাতে পাইপলাইনে মাত্র একজন ক্রিকেটার না থাকে। একটা স্থানের জন্য চার-পাঁচ ক্রিকেটার না থাকলে হবে না।বয়সভিত্তিক পর্যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভালো একটা কাজ পেলাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দরকার।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা