ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় মঞ্চ যদি একটি হয়, তবে সেটি নিঃসন্দেহে লর্ডস। ইংল্যান্ডের এই ঐতিহাসিক মাঠকে বলা হয় ‘হোম অব ক্রিকেট’ — যেখানে পা রাখাটাই বহু ক্রিকেটারের আজন্ম স্বপ্ন। আর সেখানে সেঞ্চুরি বা পাঁচ উইকেট পেলে নাম ওঠে অনার্স বোর্ডে, যা ক্রিকেটারদের জীবনের অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচিত।
কিন্তু কেমন হয়, যদি সেই লর্ডসেরই এক চিলতে ঘাস আপনার শো-কেসে বা অফিস ডেস্কে জায়গা করে নেয়? এবার সেটাই সম্ভব হচ্ছে। কারণ, লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের আসল ঘাস এখন বিক্রি হচ্ছে সাধারণ ভক্তদের জন্য।
লর্ডস কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, মাঠের আউটফিল্ড নতুন করে বসানোর কারণে মূল মাঠের ঘাস কেটে ফেলা হবে, আর সেই ঐতিহাসিক ঘাসের ছোট ছোট টুকরো বিক্রি করা হবে সমর্থকদের কাছে।
ঘাসের প্রতিটি অংশের আকার হবে ১.২ মিটার বাই ০.৬ মিটার, আর দাম ধরা হয়েছে ৫০ পাউন্ড — যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮,১৬৪ টাকা।
লর্ডসের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে,"এই শরতে আমরা ঐতিহাসিক লর্ডসের আউটফিল্ড নতুনভাবে বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর তাই মাঠের মূল ঘাসের একটি অংশ ভক্তদের ঘরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছি। সংখ্যা সীমিত। ঘাস সংগ্রহ করা যাবে ২৯ বা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কেউ মিস করবেন না!"
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, আউটফিল্ডের ঘাস অনেক জায়গায় উঠে আসছে ফিল্ডারদের ডাইভ দেওয়ার সময়। মাঠের স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এবার পুরনো ঘাস কেটে ফেলে নতুন বীজ বপন করে পুরো মাঠে নতুন ঘাস বসানো হবে।
ক্রিকেটভক্তদের জন্য এ এক অনন্য সুযোগ। ঘাস তো শুধু ঘাস নয়, বরং এতে লেগে আছে শচীন টেন্ডুলকার, ওয়াসিম আকরাম, জ্যাক ক্যালিস, কুমার সাঙ্গাকারা থেকে শুরু করে বেন স্টোকস, জো রুটদের স্পাইক জুতার চিহ্ন। এই মাঠেই শোনা গেছে বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাস, টেস্টের ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
লর্ডসের মালিক প্রতিষ্ঠান মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) জানিয়েছে, ঘাস বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তাদের ফাউন্ডেশন ও মাঠের উন্নয়ন খাতে ব্যবহার করা হবে।
এমসিসি সদস্যদের কাছে পাঠানো এক নোটিশে বলা হয়েছে, "ভবিষ্যতের উন্নয়ন তহবিল সংগ্রহ এবং ভক্তদের কাছে ঐতিহাসিক মুহূর্তের টুকরো তুলে দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ।"
২০১৯ সালে লর্ডসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ইংল্যান্ড। ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাকিস্তান জয় পায় এই মাঠেই শহীদ আফ্রিদির অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে।
যারা লর্ডস ঘুরে দেখার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য এবার একটা ঘাসের টুকরোই হয়ে উঠতে পারে স্বপ্নের স্মারক। শুধু একটা ঘাস নয় — এটা এক টুকরো ইতিহাস, এক টুকরো আবেগ।