স্পোর্টস ডেস্ক : ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে শিশুদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট গ্রহণের পর এক আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বলেন, গাজায় যা ঘটছে, তা তাঁর হৃদয়কে গভীরভাবে ব্যথিত করছে এবং এই দৃশ্য দেখে তাঁর ‘হৃদয়ে রক্তক্ষরণ’ হচ্ছে।
৫৪ বছর বয়সী গার্দিওলা তাঁর বক্তৃতায় বলেন,‘গাজায় যা ঘটছে, তা খুব কষ্টের। পুরো শরীরে যন্ত্রণা লাগে।’ তিনি এই যুদ্ধকে আদর্শবাদ বা কে ঠিক, কে ভুল তার ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানান। গার্দিওলা বলেন,‘এটা জীবন ভালোবাসা, আর পাশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়েই কথা।’ তিনি বিশেষভাবে শিশুদের মৃত্যুর ওপর জোর দিয়ে বলেন,‘চার-পাঁচ বছরের শিশুদের হাসপাতালে বা বোমায় মরতে দেখে আমরা ভাবি, এটা আমাদের বিষয় না। হ্যাঁ, ভাবতেই পারেন। কিন্তু সাবধান, পরেরটা আমাদেরই হতে পারে।’ প্রতিদিন সকালে নিজের তিন সন্তান মারিয়া, মারিউস আর ভ্যালেন্টিনাকে দেখে তাঁর গাজার শিশুদের কথা মনে পড়ে এবং তিনি অত্যন্ত ভয় পান বলেও জানান।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে গত ২০ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত ৫৪,৮৮০ জন নিহত হয়েছেন, যেখানে হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
গার্দিওলাকে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে গত ৯ বছরে ১৮টি ট্রফি জেতা এবং তাঁর পারিবারিক ফাউন্ডেশন ‘গার্দিওলা সালা ফাউন্ডেশন’-এর সমাজকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করা হয়।
তাঁর বক্তৃতায়, গার্দিওলা একটি ছোট পাখির গল্পের মাধ্যমে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেন। একটি বনে আগুন লাগলে যখন সব প্রাণী ভয়ে দৌড়াচ্ছিল, তখন একটি ছোট পাখি সমুদ্র থেকে ঠোঁটে করে জল এনে আগুনে ঢালছিল। সাপের উপহাসের জবাবে পাখিটি বলেছিল,‘জানি না হবে না। কিন্তু এটা আমার দায়িত্ব, আমি আমার কাজ করছি।’ এই গল্পের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে একজনের সামান্য উদ্যোগও অনেক বড় পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন,‘সবকিছুর শুরু হয় ছোট একটা সিদ্ধান্ত থেকে চুপ না থেকে কথা বলাটাই সবচেয়ে জরুরি।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে পেপ গার্দিওলা একা নন, এর আগেও অনেক ফুটবলার এই বিষয়ে সরব হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে লিভারপুল ও মিশরের তারকা ফরোয়ার্ড মোহামেদ সালাহ বিশ্বনেতাদের কাছে নিরীহ মানুষের রক্তপাত বন্ধে একসঙ্গে কাজ করার আবেদন জানান। একই মাসে ডাচ উইঙ্গার আনোয়ার এল ঘাজির প্রো-প্যালেস্টাইন পোস্টের কারণে মেইনৎস তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। পরবর্তীতে ঘাজি জানিয়েছিলেন, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া ৫ লাখ ইউরো তিনি গাজার শিশুদের সহায়তায় দান করবেন।
এছাড়া, কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষেও গার্দিওলা পূর্বে সরব হয়েছেন। ২০১৮ সালে কাতালান রাজনীতিবিদদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হলুদ রিবন পরার কারণে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাকে ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করেছিল। এর এক বছর আগেই বার্সেলোনায় কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে একটি বড় বিক্ষোভে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। তথ্যসূত্র, চ্যানেল২৪
