শিরোনাম

প্রকাশিত : ২০ মার্চ, ২০২৩, ০৮:৪৮ রাত
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২৩, ০১:৪২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানুষের টাকায় নোবেল পুরস্কার কিনেছেন ড. ইউনূস: হানিফ 

মাহবুব-উল-আলম হানিফ

ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর ৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, এবি ব্যাংকের স্মার্ট কার্ডে যে টাকা আপনারা বরাদ্দ পাবেন সেটা বাসায় টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল না কিনে শুধুমাত্র কৃষিখাতে ব্যয় করবেন। তাহলে দেখবেন আপনাদের আরো বেশি আয় ও সাফল্য হবে। এই স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে ৪ শতাংশ সুদ দিতে হবে। যেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে যারা অর্থ নিয়েছিল তাদেরকে দিতে হয়েছিল প্রায় ২৪%। 

ড. ইউনুস শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিভাবে যে উনি শান্তির নোবেল পেলেন আমার বোধগম্য নয়। আসলে উনি দেশে কোন শান্তি স্থাপন করেছেন সেটা আমার জানা নেই। উনি যে লোন দিতেন গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে সেটি প্রতি মাসে প্রায় দুই শতাংশ হারে লভ্যাংশ নেয়া হতো। বছরে ২৪ শতাংশ হারে সেই লোন গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হতো। তাদের কাছে লোন নিয়ে কোন কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

তাদের কাছে লোন নিয়ে অনেকেই ভিটা মাটি ছাড়তে হয়েছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। ঢাকা শহরে প্রায় একশত রিকশাওয়ালার সাথে আমার কথা হয়েছে যারা এই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আজকে ঢাকায় এসে রিক্সা চালাচ্ছে। তাদের ভাগ্যের চাকার কোন পরিবর্তন ঘটেনি বরঞ্চ তারা আরো দেনা গ্রস্ত হয়েছে, সর্বশান্ত হয়ে অনেকেই পথে বসেছে। সেই দিক থেকে আজকে এবি  ব্যাংক কৃষকদের স্মার্ট কার্ড বিতরণ করছে তার সুদের হার মাত্র চার শতাংশ।

এদেশের মানুষের টাকায় বিদেশে গিয়ে নোবেল পুরস্কার কিনেছেন ড. ইউনুস। তিনি এখন বিশাল অর্থনীতিবিদ। এবি ব্যাংক আজকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে আপনাদেরকে যে লোন দেবে। সেখানে চক্রবৃদ্ধি হারে লোন নেওয়া হবে না। কৃষক ভাইদের কোন ভয় নাই। গ্রামীণ ব্যাংকের মতন টাকা-পয়সা দিতে  না পারলে আপনাদের টিনের চাল খুলে নেওয়া হবে না। টাকাটা শুধুমাত্র কৃষিখাতে ব্যায় ও ব্যবহার  করবেন। যদি পরিশোধ করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।

এবি ব্যাংকের আয়োজনে সোমবার (২০ মার্চ) দুপুর ১টায় কুষ্টিয়া শিল্পকলার অডিটোরিয়ামে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের এবি ব্যাংকের স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

হানিফ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কারণ এই বাংলাদেশে স্বাধীনতা পূর্ববর্তীতে  আমরা দেখেছি বাংলাদেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ ছিলেন কৃষি কাজের সাথে জড়িত। আমাদের  খাত একটাই ছিল সেটি হচ্ছে কৃষির খাত। বাংলাদেশে আজকের মতন এত শিল্পকল কারখানা ছিল না। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানেরা এ দেশের (পূর্ব পাকিস্তানের) সকল সম্পত্তি নিয়ে গেছিল। তাদের দেশে পাকিস্তানে। সেই সময় আমাদের জন্য বরাদ্দ থাকতো এক চতুতাংশ। এখানে শিল্প কলকারখানা বলতে কিছু পাটকল ছিল। সেগুলো আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে গেছে। কৃষি খাতই ছিল আমাদের মূল। এইজন্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে এবং কৃষককে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কৃষককে বাঁচানোর জন্য এবং কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে সরকার গঠন করে কৃষকদের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।১৯৭০ সালে এদেশের জনগণ ছিল সাড়ে সাত কোটি। সেই সময় এবং এখন আমাদের ভূখণ্ডের আয়তন একই আছে। ষাটের দশক এবং ১৯৭০ সালে সেই সময় ফসল উৎপাদন করে দুইবেলা বেশি তিন বেলার খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। সে সময় বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হতো ৫ থেকে ৬ মণ। এখন এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ মন ধান উৎপাদন হচ্ছে। ১৯৭২ সালে আমাদের ফসল উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১২ লক্ষ মেট্রিক টন। এদেশে মোট জনগণ সরকারী হিসাবে সাড়ে ১৬ কোটি থাকলেও আমার মনে হয় ১৮ কোটির বেশি হবে। জনসংখ্যায় বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের আবাদি জমি কমে গেছে প্রায় এক তৃতীয় অংশ আবাদি জমি কমে গেছে। প্রতিবছর এক লক্ষ ৩৩ হাজার একর জমি আবাসন খাতে চলে যাচ্ছে। এরপর শিল্প কার কারখানা হওয়ার কারণে আমাদের আরো আবাদি জমি কমে গেছে। এরপরেও আমাদের নিজের উৎপাদনে ফসল এই ১৮ কোটি মানুষ ৩ বেলা খাচ্ছি। এটা সম্ভব হচ্ছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। বাংলাদেশে এই প্রথম দেখছি এত কমে কৃষকদের জন্য বছরের মাত্র ৪% হারে লনে কৃষি লোন দিচ্ছে এ বি ব্যাংক। এর আগে কখনো এত কম সুদে কাউকে লোন দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু কৃষি উপকরণ দিয়ে কৃষি খাতে বিপ্লব এনেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে এই সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ সামনে রেখে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই পদক্ষেপগুলোর ধারাবাহিকতায় আজকের বাংলাদেশকে এই জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু উপকূল অঞ্চলে জমিতে বাধ দিয়ে ১৮ লক্ষ হেক্টর জমি ফসলে জমিতে রূপান্তরিত করেছিলেন।

হানিফ আরও বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা শুনেছিলেন। আসলে সেটি দুর্ভিক্ষ ছিল না। সে সময় একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এরপরে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাজারে চালের দাম ১০ টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় অনেকেই বাশেঁ এবং ফুলের বাগানেও ধান লাগিয়েছিলেন। প্রতিটা ইঞ্চি আমাদের ফসল লাগানোর ফলে ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের দিকে মাত্র আড়াই টাকা থেকে পৌনে তিন টাকা চলে আসলো মাত্র। 

অনুষ্ঠানে এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া ১ আসনে সংসদ সদস্য আ: ক: ম: সরওয়ার জাহান বাদশাহ্, কুষ্টিয়া ৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার উপ- পরিচালক ডা. হায়াত মাহমুদ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাধন কুমার বিশ্বাস, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষি অফিসার গৌতম কুমার শীল।

সভাপতির বক্তব্যে এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল বলেন, কৃষকের জীবনযাত্রার মান এবং কৃষি উন্নয়নের জন্য আজকে আমাদের এই স্মার্ট কার্ড কৃষকদের মাঝে প্রধান করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনার দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা স্বল্প সুদে আজকে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে সহায়তা করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি এই ঋণ আপনারা নিজেদের ফসল উৎপাদনের জন্য, নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এবং দেশকে আরও উন্নত করার জন্য কাজে লাগাবেন।

আমাদের  ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টঙ্গীপাড়া থেকে এরপর গোপালগঞ্জ পাবনা, বরিশাল, আবার গোপালগঞ্জ, টঙ্গীপাড়া, চট্টগ্রাম হয়ে আমরা কুষ্টিয়ায় এসেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী  ফারুকুজ্জামান, শেখ হাসান মেহেদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাযহারুল আলম সুমনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া সদরের প্রায় ১ হাজার ৪শত কৃষকের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। ধরনবিশেষে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে একজন কৃষক ৫০ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তারা খরচ করতে পারবেন।

প্রতিনিধি/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়