শিরোনাম
◈ সমমনাদের অসন্তোষ বাড়ছে, আসন বণ্টনে বিএনপি-র কঠিন সমীকরণ ◈ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাড়ছে দারিদ্র্য—সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা ◈ ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ: ১২ গ্রুপে ৪৮ দল, একনজরে দেখুন কে কার প্রতিপক্ষ ◈ অবশেষে ‘শান্তি’ পুরস্কার পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে পাকস্থলীর রক্তক্ষরণ ◈ নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির নিজস্ব ইচ্ছা: প্রেস সচিব ◈ লা‌তিন - বাংলা সুপার কা‌পে ব্রাজিলের কাছে পরা‌জিত বাংলাদেশ ◈ ব্রিটেনে অবৈধ ডেলিভারি ড্রাইভার অভিযানে ৬০ জনকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশিও রয়েছেন আটক তালিকায় ◈ শেখ হাসিনার দুঃশাসনে খালেদা জিয়ার ওপর নেমেছিল নিপীড়নের ঝড়: তারেক রহমান ◈ মনোনয়ন পেলেন বিএনপির ১১ নারী প্রার্থী, কে কোন আসনে?

প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:১৩ দুপুর
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

২৭২টি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হলো, শরিকদের জন্য কী রইলো?

এল আর বাদল : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম দফায় ২৩৭টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর ফাঁকা থাকা আরও ৩৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। সব মিলিয়ে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭২টি আসনেই দলটির প্রার্থীদের নাম সামনে এলো।

আগে ঘোষিত ২৩৭টি আসনের মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী মনোনয়ন স্থগিত করেছিল বিএনপি, আজ সেখানে প্রার্থী পরিবর্তন করে নতুন একজনকে দেওয়া হয়েছে।

প্রথম দফায় ফাঁকা রাখা অনেক আসনে এবার বিএনপি প্রার্থী দেওয়ায় তাদের জোট বা আন্দোলনের শরিকদের ভাগ্যে কী জুটছে এই আলোচনা সামনে আসছে। ---- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী জোট হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে গুঞ্জন ছিল সেটিও।

এছাড়া দলটিতে সদ্য যোগ দেওয়া রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে আলোচনায় থাকা ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনে বিএনপির নিজের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি ঘিরেও কৌতূহল রয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভবিষ্যতে কোনো জোট বা সমঝোতা হলে যেসব আসনে বিএনপি নিজের কর্মীদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলো সেখান থেকে নাম বাদ পড়তে পারে কি না?

অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, যে আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে সেগুলোতে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

বাকি আসন কি শরিকদের জন্য?

বিএনপি ২৭২টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণার পর বাকি থাকা ২৮টি আসন জোট শরিকদের জন্য ফাঁকা রাখা হলো কি না এমন প্রশ্ন সামনে আসছে।

কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনেও বিএনপির সঙ্গেই থাকবে বলে আলোচনা রয়েছে।

এমনকি প্রথম তালিকা ঘোষণার পর অনেকগুলো আসনে জোট ও মিত্রদের মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছিলেন, "আমাদের (বিএনপির) সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যে সমস্ত আসনে তারা আগ্রহী, সে সমস্ত আসনগুলোতে আমরা কোনো প্রার্থী দিইনি। আমরা আশা করছি তারা তাদের নাম ঘোষণা করবেন, তখন আমরা চূড়ান্ত করব।"

যেমন ঢাকায় ছয়টি আসন ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। এর মধ্যে নতুন তালিকায় চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও ফাঁকা রাখা হয়েছে ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন।

বিএনপির কাছ থেকে 'গ্রিন সিগন্যাল' নিয়ে ঢাকা-১৩ আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। আর ঢাকা-১৭ আসনে সক্রিয় আছেন বিএনপির শরীক দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আন্দালিব রহমান পার্থ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনেও প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এই আসনে জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনায় রয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। নতুন ঘোষিত তালিকায়ও ফাঁকা রাখা হয়েছে সংসদীয় আসন বগুড়া-২ এবং চট্টগ্রাম-১৪।

এই দুই আসনে বিএনপির নির্বাচনী জোটের প্রার্থী হয়ে লড়তে পারেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক।

বিএনপি এবারও প্রার্থী দেয়নি পটুয়াখালী-৩ এবং ঝিনাইদহ-২ সংসদীয় আসনে। এই দুটি আসনে জোটভুক্ত বা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনায় রয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

এছাড়া জোট ও মিত্র দলগুলোর মধ্যে পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম প্রার্থী হতে পারেন। নতুন তালিকায়ও এই আসনগুলো ফাঁকা রেখেছে বিএনপি।

তবে ঢাকা-৭ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকের নাম আলোচনায় থাকলেও নতুন তালিকায় আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি।

অবশ্য জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ধর্মভিত্তিক আটটি দলের পাঁচ দফার আন্দোলনে যুক্ত আছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও।

এছাড়া কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং ঝালকাঠি-১ আসনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলেও নতুন তালিকায় এই আসনগুলোতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বিবিসি বাংলাকে জানান, এখনো ২৮টি আসন খালি রাখা হয়েছে। এরমধ্যে শরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে যতটা দেওয়া সম্ভব দেওয়া হবে। বাকি আসনগুলোতে বিএনপি নিজস্ব প্রার্থী দেবে।

কয়েকটি আসন নিয়ে আলোচনা

বিএনপির দ্বিতীয় দফার তালিকা ঘোষণার পর কয়েকটি আসনের প্রার্থী নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-১০, হবিগঞ্জ-১ এবং খুলনা-১ সংসদীয় আসন ঘিরেই বাড়তি কৌতুহল।

ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনটি বেশ আলোচনায় রয়েছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঘিরে। তিনি বিএনপির হয়ে এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা ছিল রাজনৈতিক মহলে।

বিশেষ করে কুমিল্লার মুরাদনগরের বাসিন্দা হয়েও ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজের ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার পর এই আলোচনা বাড়তি মাত্রা পায়।

যদিও এই আলোচনা এবার অনেকটাই বন্ধ করলো বিএনপি। নতুন ৩৬টি আসনের প্রার্থী তালিকায় ঢাকা-১০ আসনে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে অংশ নেওয়ার আলোচনায় ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

তেসরা নভেম্বর ঘোষিত প্রথম তালিকায় এই আসনটি ফাঁকাও রেখেছিল বিএনপি। কিন্তু নতুন তালিকায় এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রার্থী করেছে দলটি।

এদিকে বিএনপিতে যোগ দিয়েই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। হবিগঞ্জ-১ আসনে থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন তিনি।

এছাড়া খুলনা-১ সংসদীয় আসনে সনাতন ধর্মাবলম্বী কৃষ্ণ নন্দীকে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে 'চমক' দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর ফলে ওই আসনটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে দেশজুড়ে। প্রথম দফায় এই আসনে কোনো প্রার্থী না দিলেও এবার আমির এজাজ খানকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।

ফাঁকা ৩৬ আসনে প্রার্থী হলেন যারা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম আগেই জানিয়েছিল বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফাঁকা থাকা আরও ৩৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলো দলটি।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আব্দুস সালাম, দিনাজপুর-৫ আসনে এ কে এম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলু, নাটোর-৩ আসনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

যশোর-৫ আসনে এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মো. মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনে আমির এজাজ খান, পটুয়াখালী-২ আসনে মো. শহিদুল আলম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন, ঝালকাঠি-১ আসনে রফিকুল ইসলাম জামাল।

ময়মনসিংহ-৪ আসনে মো. আবু ওয়াহাব আখন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মজিবর রহমান ইকবাল।

মানিকগঞ্জ-১ আসনে এস এ জিন্নাহ কবির, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান, ফরিদপুর-১ আসনে খন্দোকার নাসিরুল ইসলাম, মাদারীপুর-১ আসনে নাদিরা আক্তার, মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান।

ঢাকা-৭ আসনে হামিদুর রহমান, ঢাকা-৯ আসনে হাবিবুর রশিদ, ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-১৮ আসনে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজীপুর-১ আসনে মো. মজিবুর রহমান, রাজবাড়ী-২ আসনে মো. হারুন অর রশীদ।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম, সিলেট-৪ আসনে আরিফুল হক চৈধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে রেজা কিবরিয়া।

কুমিল্লা-২ আসনে মো. সেলিম ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নাজমুল মোস্তফা আমীন ও কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়