হুম্মাম কাদের চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন আমার মায়ের অনেক আত্মীয় বর্তমান সরকারেও আছে। আমার পরিবার অনেক বড়। কোন সরকার পার পাই নাই যেখানে আমার বা আমার পরিবারের সদস্য নেই। আমরা কোন সময় কারো কাছে ভিক্ষা চাইতে যাইনি। আমরা সবসময় গিয়ে বলেছিলাম যেটা নেয় সেটার পক্ষে যেন তারা দাঁড়ায়। অনেকেই চেষ্টা করেছিল। এখানে আমি আপনাদের সকলের সামনে বলে দিতে চাই। এখানে আমার আত্মীয়স্বজন যারা ছিল সকলেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওই যে শেখ হাসিনা তার সামনে কিছুই টিকে না।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে বিচারিক হত্যার শিকার হয়েছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। শেখ হাসিনার লক্ষ্য ছিলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ধানমন্ডির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা। এসময় তার স্ত্রী, দুই ছেলে এবং মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে (সাকা চৌধুরী) বিচারিক হত্যা বা জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। তিনি নির্দোষ ছিলেন, এই বিষয়টি প্রমাণের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে চারজন আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ষড়যন্ত্র করে তাদের দেশে আসতে বাধা দিয়েছিল বলে জানান তিনি।
এই বাধা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ এবং ওই সময়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা দায়ী, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাকা চৌধুরীর পরিবার।
সাক্ষীদের বিদেশ থেকে আসতে না দেওয়ার সাইফার মেসেজসহ অন্যান্য মেসেজ উদ্ধার ও এর সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশের দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিগ্যাল নোটিশ দেবে তার পরিবার। আগামী রোববার এই নোটিশ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে হুম্মাম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাবা (সাকা চৌধুরী) পাঞ্জাব বিশ্বদ্যিালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। এই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে চারজন বিদেশী সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে আসার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। তারা হলেন- মুহিব আরজুমান খান, আম্বার হারুন সায়গাল, ইসহাক খান খাকওয়ানী এবং রিয়াজ আহমেদ নূহ। কিন্তু, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন বার্তার মাধ্যমে ওই চারজন সাক্ষীকে দেশে আসতে বাধা দেয়া হয়েছিল। তাদের ভিসা প্রাপ্তিতেও বাধা দেয়া হয়েছিল।
সেই সাক্ষীদের আসতে না দেওয়ার পেছনে তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু সাইফার মেসেজ জড়িত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে অনেক মানুষ এখন কথা বলতে, সাহস দেখাতে শুরু করেছেন। অনেকেই প্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। এগুলোর মধ্যে একটা বড় জিনিস আমাদের হাতে পৌঁছেছে। এটি হলো, বাংলাদেশের ফরেন মিনিস্ট্রি যখন বিদেশি দূতদের কাছে কোনো মেসেজ পাঠায়, এই মেসেজগুলোকে সাইফার মেসেজ বলা হয়। এই সাইফারগুলোতে বেশিরভাগ সময় কোডেড সিক্রেট থাকে। এই ধরনেরই একটা সাইফার মেসেজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
মেসেজটির বর্ণনা দিয়ে হুম্মাম বলেন, সাইফার মেসেজের মধ্যে উপরোক্ত সাক্ষী চারজনের নাম উল্লেখ করে বলা আছে, কোনোভাবেই তাদেরকে যেন ভিসা না দেওয়া হয়। এই সাইফার মেসেজ এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে একটা খুব বড় অন্যায় হয়েছে। আমার বাবাকে তারা কোনোভাবেই ফেয়ার জাস্টিসের ধারেকাছেও নিতে পারেনি। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটা জুডিশিয়াল মার্ডার ছিল এবং এটার সঙ্গে আওয়ামী রেজিমের সরকার সরাসরি জড়িত ছিল।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমান ফরেন মিনিস্ট্রিকে একটি আইনি নোটিশ পাঠাবো। আমরা তাদের কাছে দাবি করছি, এই সাইফার মেসেজগুলোকে ডি-ক্লাসিফাই (উন্মুক্ত) করে দেওয়া হোক। আমার বাবার ট্রায়ালের সঙ্গে জড়িত যতগুলো সাইফার মেসেজ আছে, প্রতিটাকেই যেন ডি-ক্লাসিফাই করে দেওয়া হয় এবং সেগুলোকে যেন আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, সব গোপন বার্তা হস্তান্তরে এবং প্রকাশের জন্য বর্তমান সরকার ও আদালতের সহযোগিতা চাইছি। এছাড়া আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব। ওইসব গোপনবার্তা হাতে পেলে আমারা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নির্দোষ প্রমাণে আদালতে যাব।
তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ট্রাইব্যুনালে নয়, আইন মন্ত্রণালয়ে লেখা হয়েছিল। ওই রায় ঘোষণার আগেই সেটি 'লিক' হয়েছিল আইন মন্ত্রণালয় থেকে।
'হাসিনার লক্ষ্য ছিল তার বিরোধীদের সরিয়ে দেয়া। গুম, খুন, হত্যা করে টিকে থাকাই ছিল তার উদ্দেশ্য। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও হাসিনার আক্রোশের স্বীকার'- বলে উল্লেখ করেন হুম্মাম।
তিনি বলেন, “আব্বাকে শেখ হাসিনা চাইলে হয়ত একটা গুলিতে হত্যা করতে পারতেন। তার লক্ষ্য কিন্তু এটা ছিল না, তার লক্ষ্য ছিল যে, আব্বার যে রাজনীতিটা আছে, সেটাকে ধবংস করে দেওয়া। আব্বা একজন ন্যাশলিস্ট হিসেবে পরিচিতি ছিলেন।”
সেসময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কীভাবে কাজ করতো—সেটিও স্পষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০টি চার্জের মধ্যে চারটিতে সাক্ষী হাজির করতে পেরেছিল তার বাবার বিরুদ্ধে।
হুম্মাম অভিযোগ করে বলেন, 'বাবার বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। খুব বড় অন্যায় করা হয়েছে। জুডিসিয়াল মার্ডার ছিল সাকা চৌধুরীর ফাঁসি, যার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরাসরি জড়িত।'
তিনি বলেন, 'সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সে সময় উচ্চ আদালতের একজন সিটিং বিচারক সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আসতে চেয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তখনকার প্রধান বিচারপতি এস. কে. সিনহার কাছে ওই বিচারক অনুমতি চেয়েও পাননি।'
'আব্বার মামলা চলাকালীন স্কাইপ কেলেঙ্কোরির কাহিনি বের হয়েছিল। ওই কেলেঙ্কারির অডিওতে শোনা যাচ্ছিল, তখনকার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমের কণ্ঠ। নাসিম বলছিলেন, সাকাকে যদি ঝুলিয়ে দিতে পারি—তাহলে আমাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, ওই জায়গা ফাঁকা আছে।'
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমার কাছে এখনো ভিডিওগুলো আছে। আমি জানি না কে একজন ভিডিওগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়েছিল। যখন রাতের বেলা উনাকে নিয়ে যায় তখন সারা রাত টর্চার করে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পিজি হাসপাতালের একটা ভিডিও, উনাকে যখন বের করে আনছে, সেখানে দেখা গেছে তাকে মেরেছে, তার এখানে-ওখানে রক্ত।
“এত মানুষকে মেরেছে এরা। আমি চাই না ওরকমভাবে কারো ওপর টর্চার হোক। আর এই গভার্নেমেন্ট বোধহয় ওরকমভাবে টর্চার করছেও না। কিন্তু তখন বেশিরভাগ মানুষ চুপ ছিল।”
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী বলেন, “আমরা যখন আব্বার জীবনটা বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন দূতাবাসে দৌঁড়াচ্ছিলাম, আব্বাকে বাঁচাতে আমরা যখন লড়াই করছিলাম, বিদেশিরাও কিন্তু জানত…।