রাজধানীর মূল প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ছাত্র সমাবেশ ডেকেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। একই সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দুই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। সমাবেশে বড় জমায়েত করে শক্তি দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছে দু’পক্ষই। ইতিমধ্যে সমাবেশকে সামনে রেখে সারা দেশের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে আসার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রদলের ভূমিকা, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার্থীদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার বার্তা দেবে সংগঠনটি। ওদিকে, সমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করবে এনসিপি। সূত্র: মানব জমিন
ছাত্রদলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাঠ দখল রাখতে চাইছে বিএনপি। ছাত্রদলের সমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীদের জমায়েত করে সেই শক্তি প্রদর্শন করতে চাচ্ছে দলটি। প্রতিনিয়তই জেলা, থানা, ওয়ার্ড এবং মহানগর নেতাকর্মীদের সঙ্গে চলছে বৈঠক। ইতিমধ্যে সারা দেশে নেতাকর্মীদের ঢাকায় সমাবেশে অংশ নেয়ার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংগঠনের শক্তির বিশেষ বার্তা দিতে চায় ছাত্রদল। এরইমধ্যে এ কর্মসূচি পালনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। সমাবেশকে সামনে রেখে গত বুধবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে সমাবেশ সফল করার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে সারা দেশের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেন তারেক রহমান। সূত্র জানান, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ছাত্র সমাবেশ করতে উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্রদল। এজন্য জেলা, মহানগরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক গঠন করা হয়েছে প্রায় ৯০টি সাংগঠনিক টিম। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়ে বড় শোডাউন করার পরিকল্পনা করছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। এটি ছাত্রদলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে। সারা দেশের কয়েক লাখ নেতাকর্মী এই সমাবেশে যোগ দেবে। ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে সারা দেশের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আগামীকাল রোববার বেলা ২টায় শাহবাগে ছাত্রদলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া, সাবেক ছাত্র নেতারাও এই সমাবেশে অংশ নেবেন। একই সময়ে দুই জায়গায় সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটতে পারে বলেও রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে। সমাবেশে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে এজন্য নেতাকর্মীদের ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রদল। সেগুলো হলো- ছাত্র সমাবেশে কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসা যাবে না।
সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র কর্তৃক নির্ধারিত জায়গায় সকল ইউনিটকে বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করতে হবে। কাঁটাবন মোড় থেকে আজিজ সুপার মার্কেট ও পিজি হাসপাতালের মাঝের গলি দিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত এম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনের চলাচলে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। সমাবেশের দিনে ছাত্রদলের কোনো ইউনিটের গাড়ি কোনো অবস্থাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত শোডাউন ও মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিটের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিষ্কার করে সমাবেশস্থল ত্যাগ করতে হবে। নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমাদের সমাবেশের জায়গা আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য ছেড়ে দিয়েছি। এই সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ।
ওদিকে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এনসিপি’র ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করেছে। গত ১লা জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে মাসব্যাপী পদযাত্রা শুরু করেছিল দলটি। ৬১টি জেলায় এই পদযাত্রা করেছে। এনসিপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পদযাত্রার মধ্যদিয়ে তারা জনগণের কাছে ফিডব্যাক নিয়েছে এবং নিজেদের মতামতসহ সবকিছু কম্বিনেশন করেছে। এটার শেষ পর্যায় হলো সমাবেশ। এসব জেলায় জনগণের ফিডব্যাক নিয়ে ইশতেহার প্রস্তুতির কাজ চলছে। আজকের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করা হবে।
এই কর্মসূচি শেষ হবে আগামীকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মধ্যে। ইতিমধ্যে সমাবেশের প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। সমাবেশে অংশ নিতে সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।
এনসিপি’র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, সমাবেশটা জুলাই পদযাত্রার অংশ। সমাবেশে আসার জন্য মানুষকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। আশা করছি, আমাদের ডাকে জনগণ সাড়া দেবে। আর সমাবেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কেন ঘটবে? বিএনপি এবং ছাত্রদলও আমাদের অভ্যুত্থানের বন্ধু। জামায়াত এবং শিবিরও আমাদের অভ্যুত্থানের বন্ধু। সেখানে কেন এগুলো হবে? এদেশে কিছু সুশীল আছে এবং মুজিববাদী ও বামপন্থিরা আছে- এগুলো তারা জনগণের মধ্যে রটায়। রটিয়ে জনগণের মধ্যে একটা ভীতি সৃষ্টি করতে চায়।