শিরোনাম
◈ স্ত্রী নির্যাতন বেশি হয় বরিশালে, সবচেয়ে কম সিলেটে! ◈ ভারতীয় দলের কোচ হতে চান সৌরভ গাঙ্গু‌লি ◈ জাস‌প্রিত বুমরাহর রেকর্ড ফাইফার, লিডসে ইংলান্ড- ভারত লড়াই হ‌চ্ছে সমা‌নে সমান  ◈ আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কি সত্যিই রাসূল (সা.)-এর বংশধর? ◈ রাজধানীতে দুই ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে লোডশেডিং পরিস্থিতি ◈ ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন হামলা ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’: পেন্টাগনের বিস্তারিত প্রকাশ ◈ নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন কত দূর? ◈ নুরুল হুদার পর এবার সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার ◈ আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকারের, মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ◈ ১৬ জনের স্ক্রিনশট ‘ফাঁস’ করে যা বললেন নিলা ইসরাফিল

প্রকাশিত : ২৩ জুন, ২০২৫, ০২:১২ রাত
আপডেট : ২৩ জুন, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন কত দূর?

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে একশ করার ক্ষেত্রে মোটামুটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ কিন্ত এসব আসনে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আছে মতানৈক্য৷
নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও অধিকাংশ দলই এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে৷

প্রশ্ন হচ্ছে, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের সুবিধা বা অসুবিধাগুলো কী? আর আনুপাতিক হারে নারী আসন ভাগ হলে সেখানে কারা আসন পায়? ভোটের মাঠে গেলে তারা কি টিকতে পারবেন?

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তাব হলো মোট সংসদীয় আসন হবে চারশ৷ এর মধ্যে একশটি হবে নারী আসন৷ ওই একশ আসনে নারী প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচন করবেন৷ কোনো পুরুষ প্রার্থী থাকবেন না৷ তবে বাকি তিনশ আসনেও নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আর সারাদেশকে চারশ সংসদীয় আসনে ভাগ করলে নারীদের একশ আসনে ঘুর্ণন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে৷ প্রথম বছর হয়তো দৈবচয়নের ভিত্তিতে একশ আসন নির্ধারণ করা হলো৷ পাঁচ বছর পর ওই একশ বাদ দিয়ে নতুন একশ আসনে নির্বাচন হবে৷ এভাবে চার টার্মে মোট চারম আসনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে৷''

কমিশন এমন প্রস্তাব দিলেও ব্যক্তিগতভাবে এর সঙ্গে একমত নন কমিশন সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান৷

অন্যদিকে, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংসদে ছয়শ আসন করার কথা বলা হয়েছে৷ কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘‘এর মধ্যে তিনশ আসন থাকবে নারীদের৷ সেখানে শুধু নারীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন৷ তবে সাধারণ আসনেও নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন৷ ফলে সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বেশি হবে৷''

কোন দল কী ভাবছে?

সংসদের নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন একশ করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও সরাসরি নির্বাচন নিয়ে আছে মতানৈক্য৷

গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘নারী আসনের সংখ্যা একশ-তে উন্নীত করার বিষয়ে সবার ঐকমত্য হয়েছে৷ বিদ্যমান মনোনয়ন পদ্ধতিতে আমরা নারী আসনের বিষয়টি বিবেচনার প্রস্তাব দিয়েছি৷ এছাড়া অন্যান্য দল নির্বাচন ও তিনশ আসনে দলীয় মনোনয়নের কথা বলেছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের ৩১ দফায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ছিলই৷ নারী আসন সংখ্যা হবে একশ৷ বেশিরভাগ দল এ বিষয়ে একমত৷ এর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে৷''

সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও একমত৷ দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘তিনশ আসনের সঙ্গে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে আমরা আগের অবস্থানেই আছি৷ তবে সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত৷ আমরা এ বিষয়ে অনেক প্রস্তাবনা পাচ্ছি৷ আলোচনার ভিত্তিতেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে৷''
সংসদে নারীর জন্য আসন সংরক্ষণের পক্ষে নয় চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ৷ দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশন জাতীয় সংসদে নারীর আসন বৃদ্ধি নিয়ে চাপাচাপি করছে৷ দুই কমিশন জাতীয় সংসদের আসন চারশ এবং সংরক্ষিত নারী আসন একশ-তে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে৷ আগামী দিনে যাতে কোনো কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা হতে না পারে, ফ্যাসিবাদ যাতে জেঁকে বসতে না পারে, সে জন্য সংস্কার কমিশন গঠিত হয়৷ কিন্তু এর সঙ্গে নারী আসনের সম্পর্ক কী?''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বিগত দিনে আমরা কর্তৃত্ববাদ ও ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেখেছি। তাহলে নারী আসন বৃদ্ধি করলেই সংকট কেটে যাবে-এমনটা মনে হয় না৷ নারী আসনের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকার প্রয়োজন নেই৷ বরং বর্তমান নিয়মে তিনশ আসনে নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ আছে৷''

তবে তিনশ আসনে ভোট হলে দলগুলোর ভোটের আনুপাতিক হারে একশ আসন নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে--এমন প্রস্তাবের সঙ্গে দলটি একমত বলে জানান গাজী আতাউর রহমান৷

এনসিপি নারীদের জন্য একশ আসন এবং সরাসরি নির্বাচন চায়৷ সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন প্রশ্নে এনসিপির নেতারা বলছেন, বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসারে আসনপ্রাপ্তির অনুপাতে বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের কিছু নারীর জন্য সংসদীয় আসন সীমাবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা থাকবে না। অন্য নারীরাও প্রার্থী হতে পারবেন। কোনো দলের ইচ্ছা বা দয়ার ভিত্তিতে নয়; বরং জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে ভোটারের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হবেন নারীরা৷

বিতর্ক এবং বাস্তবতা

এনসিপির  সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম  আদীব বলেন, ‘‘আমরা সংসদে একশ নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাই৷ এটা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছি৷ আমরা চাই নারীর ক্ষমতায়ন৷''

তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে এনসিপি নিজেদের মধ্যে এখনও আলাপ আলোচনা করছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে কথা হচ্ছে৷ আলোচনায় ঘুর্ণন পদ্ধতি আছে৷ আবার কেউ বলছেন তিনটি আসন নিয়ে নারীদের জন্য একটি আসন করে, সেখানে সরসরি নির্বাচন করা যায়৷ তো  নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে নানা বিতর্ক আছে৷ আমরাও আলোচনা করছি৷ চূড়ান্ত কিছু হয়নি৷''

সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘‘আসলে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তাদের বেশি করে মনোনয়ন দেয়া উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর৷ আলাদা নির্বাচনে নারীর ক্ষমতায়ন হবে বলে আমরা মনে হয় না৷ নারীর সঙ্গে নারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের  যে কথা হচ্ছে, আমি সেটাতে বিশ্বাস করি না৷ আমি চাই সাধারণ নির্বাচনেই নারী অংশ নিক৷ আর আমার দলের যে অবস্থান এ ব্যাপারে আমারও সেই একই অবস্থান৷''

তিনি বলেন, "ঘূর্ণন পদ্ধতিতে যে একশ আসনে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে,  সেটাকে আমার অনেক জটিল মনে হচ্ছে৷ আমার দল ওটার সঙ্গে একমত না৷ আমিও একমত না৷ আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করা, তারা যাতে বেশি সংখ্যক নারীদের মনোনয়ন দেয়৷''

সাধারণ নির্বাচনে নারীর মনোনয়ন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘‘নারীদের সংরক্ষিত  আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে একশ করা যেতে পারে৷ তবে তার জন্য সরাসরি নির্বাচন নয়, আনুপাতিক হারে যেভাবে নির্বাচন করা হয় সেটা করা যেতে পারে৷''

আর বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও সংরিক্ষত আসনে সাবেক নারী সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, "আমরা তো কোটার জন্য  আন্দোলন করিনি৷ নারীরা সংসদে কোটা চায় না৷ যেখানে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৬৩ শতাংশ নারী চান্স পায়, যেখানে নারী তার নিজের যোগ্যতায় সংসদ সদস্য হতে পারে৷''

২০০৮ সালে আরপিওতে ৩৩ শতাংশ নারীকে মনোনন দেয়ার কথা বলা হলেও সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে কার্যকর হয়নি বলেও জানান এই রাজনীতিবিদ৷

তিনি বলেন, ‘‘নারীদের সংরক্ষিত একশ আসনে ঘূর্ণন পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে৷ তাতে কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না৷ এতে পুরুষ নেতাদের নারী আত্মীয়রা মনোনয়ন পাবেন৷ সমস্যা থেকেই যাবে৷''

বিএনপি নেত্রীর প্রসঙ্গে টেনে নিলোফার চৌধুরী বলেন, "বেগম খালেদা জিয়া নারীদের সরাসরি নির্বাচনের কথা বলেছিলেন৷ আমার মনে হয়, এখনও তিনি তার অবস্থানেই আছেন৷ তিনি তো নারীর ক্ষমতায়ন চান৷''

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে,  বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে নারী আসেনে সরাসরি নির্বাচন  ও আসন বৃদ্ধির প্রতিশ্রতি দিয়েছিলো৷


নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘‘আমরা মোট ৬০০ আসনের সংসদ চেয়েছি । নারীদের জন্য ৩০০ আসন সংরক্ষিত থাকবে। সেখানে শুধু নারীরাই নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন। ফলে তারা সংসদে গিয়ে নারীদের কথা বলবেন। আর সাধারণ আসনেও নারীরা দাঁড়াতে পারবেন। নারীদের সংখ্যা তখন সংসদে বেশি হবে৷''

"১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রেখে ঘূর্ণন পদ্ধতিতে নির্বাচনে  আসলে ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না৷ এটাকে আমার স্টুপিড আইডিয়া মনে হয়৷ কারণ এক টার্ম নির্বাচনের পর বসে থাকতে হবে৷ আবার যখন টার্ন আসবে তখন নির্বাচনের সুযোগ পাবে৷'', বলেন তিনি৷

শিরিন হক বলেন, ‘‘যদি একশ আসনকে সারাদেশে নারীদের জন্য সংসদীয় এলাকা হিসাবে ভাগ করে আলাদা নির্বাচন হয় সেটাও বাস্তব সম্মত নয়৷ কারণ তখন নারীর নির্বাচনি এলাকা তিনগুণ বড় হবে সাধারণ আসনের চেয়ে৷ এত বড় নির্বাচনি এলাকার নির্বাচনের খরচ নারী কীভাবে যোগাড় করবেন?”

তিনি বলেন," ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে নারীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রেখে যদি সরাসরি নির্বাচন করা যায় তাহলে সংসদ নির্বাচনে কেন সম্ভব হবে না?”

রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, ‘‘আসলে কোনো ধরনের কোটা ব্যবস্থা, আর সেই কোটায় সরাসরি নির্বাচন নারীর ক্ষমতায়নে কাজে আসবে না৷ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দরকার রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা৷ তা হলো, নারীদের রাজনীতিতে সুযোগ দেয়া আর সাধারণ আসনে তাদের মনোনয়ন বাড়ানো৷''

তিনি বলেন, ‘‘একশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করে যদি ঘূর্ণন পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তাহলে দেখা যাবে একটি আসনে কোনো দলের কোনো প্রভাবশালী নেতা আছেন৷ তার আসনটি নারী আসন হলো। তখন তিনি তার স্ত্রী বা পরিবারে অন্য কোনো নারীর মনোনয়নের ব্যবস্থা করবেন৷ ফলে এখানে পরিবারতন্ত্র হবে , নারীর ক্ষমতায়ন হবে না৷ ছয়শ আসন করে তিনশ নারীকে দিলেও পরিবারের প্রভাবের বাইরে যাওয়া অসম্ভব৷''

"আবার কোটা না করে সাধারণ আসনে ৩৩ শতাংশ নারীর মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করলে দেখা যাবে, যেসব আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নাই সেইসব আসনে রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মনোনয়ন দেবে। আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার সবার আগে,” বলেন তিনি।

নারী আসন যেভাবে এলো

নারীদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের সংবিধানে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। ১৯৭৮ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৩০ এবং মেয়াদ ১৫ বছরে উন্নীত করা হয়৷ ১৯৯০ সালের সংবিধানের দশম সংশোধনীতে মেয়াদ আবার ১০ বছরে নামিয়ে আনা হয়৷ সময়মতো মেয়াদ না বাড়ানোয় ২০০০ সালে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের বিলুপ্তি ঘটে৷

২০০১ সালের অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোনো আসন ছিল না৷ ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের ৪৫টি নারী আসন ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণের বিধান করা হয়৷ ওই বছরের ২৯ নভেম্বর সংরক্ষিত নারী আসন নির্বাচনি বিল পাস হয়৷

একই সঙ্গে আগের ব্যবস্থা পাল্টে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রাপ্ত আসন অনুপাতে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর ফলে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের জন্যই এ আসন পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতাসীন দলই সব আসন পেত। এই আইন অনুসারে অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে এবং নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদের প্রথম দিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন হয়। নবম জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত করা হয় এবং দশম জাতীয় সংসদের জন্য একইভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়৷

নবম জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত  সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ ছিল। এ অবস্থায় ২০১৮ সালে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ আরো ২৫ বছর বাড়ানো হয়।

এদিকে, সংসদে নারী আসন ব্যবস্থার পরির্তন  আনতে হলে নির্বাচন আইন-২০০৪', জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন এবং সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা৷

কারণ  বিদ্যমান সংবিধানের  ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, "তাহারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত (সরাসরি ভোটে নির্বাচিত) সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন।''

যদিও এ পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার প্রয়োজন হয় না। দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে৷

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়