শিরোনাম
◈ সৌদি আরবে ‘হুরুব’ আতঙ্কে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ◈ চীন নারী ফুটবল দল পাঠাতে চায় বাংলা‌দে‌শে, পুরুষ ক্রিকেট দল‌কে চী‌নে আমন্ত্রণ ◈ জাপা‌নি ক্লা‌বের কা‌ছে হে‌রে  এএফ‌সি চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে রোনাল‌দোর আল নাস‌রের বিদায় ◈ ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণামূলক প্রেম ও ধর্ষণের অভিযোগে চীনা অধ্যাপক বরখাস্ত ◈ ভারতীয় যুদ্ধবিমান তাড়ানোর দাবি পাকিস্তানের, সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ◈ অনুমোদন ছাড়া হজ পালনে কড়া শাস্তি: সৌদিতে ২০ হাজার রিয়াল জরিমানা ও ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ◈ বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর ◈ শেহবাজ-জয়শঙ্করকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন, যে কথা হলো.. ◈ যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ সংক্রান্ত চুক্তি সই: যৌথভাবে খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ কাজে লাগাতে বিনিয়োগ তহবিল গঠন ◈ বাংলাদেশ-আলজেরিয়া কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে

প্রকাশিত : ০১ মে, ২০২৫, ১০:৫৯ দুপুর
আপডেট : ০১ মে, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নিবন্ধনের আবেদন ৬৫ দলের, কার্যকর কমিটি নেই কারও, কারও নেই কার্যালয় বা সাইনবোর্ড

এল আর বাদল: কোনো দলের নেই কার্যকরী কমিটি, কোনো দল আছে কাগজে কলমে। আবার কোনো দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় তো দূরের কথা, সাইনবোর্ডটিও পর্যন্ত নেই। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশন বা ইসিতে এখন পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ৬৫টি রাজনৈতিক দল।

এর মধ্যে অনেক রাজনৈতিক দলই গঠন হয়েছে গত নয় মাসে। তাদের মধ্যে কিছু রাজনৈতিক দল রয়েছে যারা কেবলই নামসর্বস্ব। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মার্চে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করলে এসব দল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে।

এমনই একটি দলের নাম বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া তথ্য অনুযায়ী দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. নুর ইসলাম শিকদার।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা জানতে চাওয়া হলে মি. শিকদার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ঝড়ে আমার পার্টির সাইনবোর্ড উড়ে গেছে। নতুন করে সাইনবোর্ড বানাতে অর্ডার দিছি।

নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা এমন নতুন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। কারও কারও দেয়া তথ্যমতে, দল নিবন্ধনের জন্য ইসির দেয়া শর্ত পূরণ করতে পারেনি অনেকেই।

নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাছাই শেষেই নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে এত সংখ্যক দলের যাচাই বাছাই শেষে নিবন্ধন দিতে কত সময় লাগবে, সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে।

যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, আবেদনের পর আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে যাচাই বাছাই শেষে নিবন্ধন দেয়ার কথা বলছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে আমাদের একটা চেকলিস্ট রয়েছে। নিবন্ধনের আগে আমরা দেখবো নতুন আবেদনকারী দলগুলো তাদের শর্ত পূরণ করছে কি-না"।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৫০টি। সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু দল এখন সক্রিয় নেই।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, দল নিবন্ধন দেয়ার পর আর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধিত দলগুলোর কার্যক্রম নিয়ে কোন তদারকি না করার কারণে নাম সর্বস্ব দলগুলো বাড়ছে।

 --- শর্ত পূরণ ছাড়াই আবেদন, নেই কার্যালয়ও ---

আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন দিতে গত মার্চে গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন।

দলগুলোকে ২০শে এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে বলা হয়। যদিও পরবর্তীতে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী জুন পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়ায় নির্বাচন কমিশন।

গত ২০শে এপ্রিল পর্যন্ত ইসিতে নিবন্ধনের জন্য যে ৬৫টি দল আবেদন করেছে তাদের মধ্যে একটি বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ।

দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা বিবিসি বাংলাকে জানান, বাংলাদেশকে বেকারমুক্ত করতে তিনি এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এবারই প্রথম দলটি নিবন্ধনের আবেদন করেছেন।

রাজা বিবিসি বাংলাকে জানান, বর্তমানে সারাদেশে তার দলের আটটি জেলা ও ৭২টি উপজেলায় কমিটি রয়েছে।নিবন্ধনের যে সব শর্ত রয়েছে তার কোনোটিই এখনো পূরণ করতে পারেনি নতুন আবেদন করা এই দলটি। তাহলে এই শর্ত পূরণ করে কি নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব?

জবাবে তিনি জানিয়েছেন, এখন শর্ত পূরণ না করতে পারলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শর্ত পূরণের চেষ্টা করবেন।

নতুন আবেদন করা বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের সভাপতি মো. নুর ইসলাম শিকদার বিবিসি বাংলাকে জানান, ফরিদপুর বোয়ালমারির একটি সুপার মার্কেটের দোতলায় তার পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল। কিন্তু সেটি এখন আর নেই। ঝড়ের কারণে তার পার্টির ব্যানার সাইনবোর্ড সব উড়ে গেছে।

তিনি জানান, আগামী কিছুদের মধ্যে তিনি কেন্দ্রীয় নতুন কার্যালয় প্রস্তুত করবেন। বাংলাদেশে জাস্টিস পার্টি বা বাজাপা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাভেদ মো. সালেহউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানান, তার দল আগেও দুইবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও নিবন্ধন দেয়া হয়নি।

দেশের কোন কোন জেলা উপজেলা-উপজেলায় তাদের কমিটি ও অফিস রয়েছে জানতে চাওয়া হলে মি. সালেহউদ্দিন জানান, আট থেকে ১০টি উপজেলায় দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। তবে সেটি কোন কোন জেলায় তা তিনি জানেন না। এটি জানেন তাদের সাংগঠনিক সম্পাদক।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, নতুন আবেদন করা এসব দলের বেশিরভাগই নাম সর্বস্ব। ভুল তথ্য দিয়ে এসব দলগুলোর অনেকেই ইসিতে আবেদন করেছে বলে অভিযোগ আছে।

--- যে প্রক্রিয়ায় দল নিবন্ধন দেয় ইসি ---

২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটিএম শামছুল হুদার নির্বাচন কমিশন ভোটে অংশ নিতে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধান চালু করে।

ওই বছরই প্রথম দফায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে। প্রথমত, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়;

দ্বিতীয়ত, ওই সব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের পাঁচ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি;

তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় জেলা অফিস থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় অফিস থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিবন্ধনের শর্তগুলো পূরণ করে তখন বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বিবিসি বাংলাকে জানান, নিবন্ধনের আবেদন করার পর প্রথমেই নির্বাচন কমিশন দলগুলোর গঠনতন্ত্র দেখে। গঠনতন্ত্র সংবিধান বা রাষ্ট্রের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক কি না সেটি পর্যবেক্ষণ করে। পরে ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস পরিদর্শন করে নিজস্ব কর্মকর্তারা মাধ্যমে।

সাবেক এই নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, দলগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ শেষে ইসির কোন চাহিদা থাকলে বা কোনো শর্তে ঘাটতি থাকলে একটি নির্দিষ্ট সময় দেয়া আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলোকে।

পরে যে সব দল সব শর্ত পূরণ করে শুধু তাদেরকেই নিবন্ধন দেয়া হয়। পরে ওই দলগুলোর নামে গেজেট করা হয় এবং তাদেরকে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "যারা আমাদেরকে সব তথ্য দেবে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী, মাঠ পর্যায়ে তথ্য যাচাই বাছাইয়ে যে দল সব শর্ত পূরণ করবে তাদেরকেই নিবন্ধন দেয়া হবে।

--- কবে নিবন্ধন পাচ্ছে নতুন দলগুলো?---

হাসিনা সরকার পতনের পর গত বছরের অগাস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গত আট মাসে অন্তত ২২টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে অন্যতম জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।

এই দলটিসহ ৪৬টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আবেদনের সময় বাড়াতে ইসিকে চিঠি দিয়েছে। পরবর্তীতে আগামী ২২শে জুন পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি সংখ্যক রাজনৈতিক দল ইসিতে আবেদন করতে যাচ্ছে।

এসব দলের গঠনতন্ত্র, কমিটি, মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় ও সদস্য সংখ্যার যাচাই বাছাই করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হলে এর আগে নতুন দলের নিবন্ধন দেয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরাও।

নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এবার ইসির জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করার জন্য নির্দিষ্ট একটা রোডম্যাপ করতে হবে। হাতে যেহেতু সময় কম তাই এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা করেই কাজ করতে হবে।"

এবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা রাজনৈতিক দলের কোনো কোনোটি গত তিনটি নির্বাচনের আগে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলো।

তাদের মধ্যে কয়েকটি দলের অভিযোগ, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা নিবন্ধনের আবেদন করলেও তখন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সায় না থাকায় তখন অনেক দলকে নিবন্ধন দেয়নি নির্বাচন কমিশন।

যে কারণে পাঁচই অগাস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত আট মাসে নতুন করে ছয়টি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এবার আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি তত দ্রুতই নিবন্ধনের কাজ শেষ করতে চাই। পারলে আমরা এই কাজ দুই মাসের মধ্যেই শেষ করতে চাইবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়