শিরোনাম
◈ ভারতের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও জুলাইয়ে বাংলাদেশি রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪% ◈ কলকাতার বাণিজ্যমেলায় বাংলাদেশি স্টল, মিলছে সাড়া! ◈ বাংলাদেশে চাল রপ্তানির তোড়জোড় ভারতীয় সরবরাহকারীদের ◈ এবার বাংলাদেশ হয়ে আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করতে চায় ভারত: আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ◈ যুদ্ধবিমান নিয়ে হাজির ট্রাম্প,ঘোল খাওয়ালেন পুতিন! ভিডিও ◈ ফারুকীর সর্বশেষ অবস্থা জানালেন তিশা ◈ প্রধানমন্ত্রী হলে থাকা যাবে না দলীয় প্রধানের পদে, জুলাই সনদের খসড়ায় আরও যা আছে ◈ হাসনাত-সারজিসসহ ৫ নেতার শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার ◈ দেশে আরেকটা বিপ্লব হতে পারে : রেজা কিবরিয়া ◈ ফরিদপুরে অসুস্থ গরু জবাই করে পালিয়ে গেল কসাই!

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:৩০ রাত
আপডেট : ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সত্যিই কি এই লোকটি কোরআনের আয়াত পড়ে মানুষকে সুস্থ করে তুলছেন? (ভিডিও)

চাল-চলন, কথা-বার্তা, পোশাক-আশাক— দেখলেই বুঝা যায় তিনি একজন আরব। বাক প্রতিবন্ধীর মুখে তিনি আঙুল ঢুকিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করছেন—সঙ্গে সঙ্গে মুখে কথা ফুটছে! বধিরের কানের কাছে কোরআন তেলাওয়াত করতেই সে শুনতে পাচ্ছে! অসুস্থ কারো মাথায় হাত রেখে কোরআন তেলাওয়াত করতেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে! যে ব্যক্তি এই বিস্ময়কর কাণ্ড ঘটাচ্ছেন তার নাম মালা আলি কুর্দিস্তানি। তার এসব কর্মকাণ্ডের ভিডিও বিভিন্ন সময় সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি তাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠেছে- সত্যিই কি তিনি আধ্যাত্মিক কোনো ক্ষমতা রাখেন, যার মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারেন?

তিনি মূলত ইরাকের কুর্দিস্তানের মানুষ। নিজের ফেসবুক পেজটির নাম দিয়েছেন ‘মালা আলি কুর্দিস্তানি’। এই নামেই তিনি পরিচিত। তবে পেজের ইন্ট্রোতে বলেছেন, ‘আমার নাম ড. আলি মাহমুদ হাসান। আমি ২৮ বছর ধরে ভেষজ চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ।’ তবে কুর্দিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তার আসল নাম মোল্লাহ আলি কালাক।

ফেসবুকে তার ফলোয়ার ৫৮ লাখের বেশি। ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে বাস্তব জগতেও তার হাজার হাজার অনুসারী রয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের মুখে আছেন তিনি। কারণ তার প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দাবি করা হয়, তিনি কোরআনের আয়াত ব্যবহার করে অসুস্থ, জ্বিনে আক্রান্ত এবং অক্ষম মানুষদের সুস্থ করে তোলেন।

তার এই কর্মকাণ্ড শুরু হয় ইরাকের কুর্দিস্তান প্রদেশের ইরবিল শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তার নিজ গ্রাম কালাক থেকে। সেখানে তিনি একটি হিলিং সেন্টার বা রোগ নিরাময় কেন্দ্র খোলেন। দাবি করা হয় তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসাও করতে পারেন। এই চিকিৎসায় তিনি উটের মুত্রকে উটের দুধের সঙ্গে মিলিয়ে রোগীকে খাওয়াতেন। চিকিৎসার জন্য তিনি রোগীকে চাবুকও মারতেন। এসবের ভিডিও ভাইরালও হয়।

কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম রুদাউ ইংলিশ জানায়, সরকার বারবার তার নিরাময় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিয়েছিল। তার বেআইনি চিকিৎসা কার্যক্রমের কারণে কর্মকর্তারা তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করে ও আদালতে হাজিরার নোটিশ দিয়েছিলেন। এক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগেও তাকে গ্রেফতার করা হয়।

যখন কুর্দিস্তানে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দায়ের হয় এবং সাজার সম্ভাবনা তৈরি হয় তখন তিনি সৌদি আরব চলে যান। সেখান থেকে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি একটি ভিডিও পোস্ট করেন মালা আলি, যেখানে দাবি করেন, তিনি সৌদি আরবের পবিত্র শহর মদিনায় এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সুস্থ করেছেন; যিনি কিনা দশ বছর ধরে অন্ধ ছিলেন!

ভিডিওতে দেখা যায়, মালা আলি নিজের জিহ্বা দিয়ে তর্জনী আঙুল চেটে তা ওই ব্যক্তির দুই চোখে ছোঁয়ান। এরপর কোরআনের একটি সূরা পাঠ করেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বৃদ্ধ ব্যক্তি দাবি করেন যে, তার দৃষ্টি ফিরে এসেছে।

ওই ভিডিও প্রকাশের চারদিন পর সৌদির স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত একটি ভাইরাল ক্লিপে সেই একই ব্যক্তি (সৌদি পুলিশের তথ্যানুসারে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত) মালা আলিকে “মিথ্যাবাদী” বলে অভিহিত করেন।
 
ভিডিওটি একটি মসজিদে ধারণ করা হয়- যেখানে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার সাথে বসে থাকা কেউ জিজ্ঞেস করেন, তিনি কীভাবে সুস্থ হয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, “আমি তাকে (মালা আলিকে) বলিনি যে আমি অন্ধ... আল্লাহর কসম, সে একজন মিথ্যাবাদী।” তারা দুজনেই বলেন, ‌‌‌‘‘একমাত্র আল্লাহই মানুষের সুস্থতা দান করতে পারেন এবং তারা প্রার্থনা করেন যাতে আল্লাহ মালাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।''

যদিও মালা আলির প্রকাশিত আগের ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তিনি দশ বছর ধরে অন্ধ।
 

ভিডিও প্রকাশের পরপরই মালা আলিকে গ্রেফতার করা হয়। মদিনা পুলিশের বরাতে কুর্দিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম রুদাউ জানায়, মালা আলিকে গ্রেফতার করা হয়েছে “পাকিস্তানি লোক আমদানি” এবং “তাদের সুস্থ করার দাবি” করার অভিযোগে। এখানে পাকিস্তানি বলতে ভিডিওতে দেখানো বৃদ্ধের কথাই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পুলিশ বলছে, তিনি সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য পাকিস্তানকে থেকে ওই বৃদ্ধকে নিয়ে এসেছেন।

কিছুদিনের মধ্যেই সৌদি পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্তি পান মালা আলি। এরপর নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন, তার চিকিৎসা কোনো সাজানো নাটক না। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে তিনি “অসত্য” বলে অভিহিত করেন। একইসঙ্গে কুর্দি সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে যারা তার গ্রেফতার নিউজ করেছিলে তাদের ক্ষমা চাইতে বলেন। যদিও তিনি গ্রেফতারের ঘটনা অস্বীকার করেননি।

মালা একই দিনে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে বলেন, তিনি স্থায়ীভাবে উপসাগরীয় অঞ্চলে চলে গেছেন। কারণ কুর্দিস্তান অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ তাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

সৌদিতে গ্রেফতারের পর জামিন পেলে তিনি সেখান থেকেও চলে যান এবং অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও পোস্ট করেন এবং তাতে দাবি করেন, আমি যে কাজ করি সেটা বিজ্ঞানসম্মত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- আমাদের কুর্দিস্তানে বিজ্ঞানকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। আমার মতো এমন অনেক আলেম আছেন কিন্তু মুসলিম উম্মাহ আমাদের কোনো মূল্যায়ন করে না।

রুদাউ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি থেকে তিনি চলে যান তুরস্কে। ইস্তাম্বুলে একটি হেল্থ ক্লিনিক খোলেন। সেখানেও হাজার হাজার মানুষ তার কাছে যান। কিন্তু তার কাজে বাধ সাধে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা অভিযোগ আনেন, বিনা লাইসেন্সে তিনি এই বেআইনি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার ক্লিনিকে তুর্কি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তবে ওই সময় মালা আলি সেখানে ছিলেন না।

২০২১ সালের নভেম্বরে মালা আলি পাকিস্তানে যান। তিনি দেশটির যেখানেই গেছেন সেখানেই হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। শুধু সাধারণ মানুষই নন, পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদরা এবং বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তার সঙ্গে কোলাকুলি করেন এবং খুবই হৃদ্যতার সঙ্গে বৈঠক করেন। দেশটির জাতীয় সংসদের স্পিকার আসাদ কায়সার মালা আলিকে পাকিস্তানি টুপি পরিয়ে স্বাগত জানান।
 
মালা আলি কুর্দিস্তানিকে নিয়ে পাকিস্তানে এত বেশি মাতামাতি নিয়ে ডন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি আলোচনা প্রকাশ করা হয়। সেখানে স্পিকারের এই কাণ্ডের বিষয়ে ডন নিউজের অ্যাংকর বলেন, যে ব্যক্তি সবাইকে টুপি পরিয়ে (প্রতারিত করছেন) বেড়াচ্ছেন তাকেই টুপি পরিয়ে দিলেন স্পিকার!

 পাকিস্তানে তার এসব কর্মকাণ্ড দেখে তুরস্কের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ'র আঙ্কারা ব্যুরো চিফ নুর ওজকান টুইট করেন। এতে তিনি বলেন, তথাকথিত 'হিলার' মালা আলি কুর্দিস্তানি সৌদি আরবে গ্রেফতারের পর পালিয়ে তুরস্কে আসেন এবং ইস্তাম্বুলে তার অফিসে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়। তিনি এখন তিনি পাকিস্তানে গিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন।

ডন নিউজের ওই অ্যাংকর বলেন, মালা আলি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশেও গেছেন। তবে পাকিস্তানে যেভাবে সবার চোখে ধুলে দিয়েছেন সেটা আর কোথাও পারেননি।

ডন নিউজের নিউজের ওই অ্যাংকর কুর্দিস্তানে অবস্থানকারী একজন পাকিস্তানির বরাতে বলেন, সেখানে মালা আলির অনেক অনুসারী আছে তবে ইরবিলের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন তিনি প্রতারক।

২০১৭ সালে মালা আলি অদ্ভুত একটি কথা বলে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিনে ধরেছে। তিনি ট্রাম্পকে তার পায়ের তলায় মেরে সুস্থ করতে পারেন। উৎস: সময়নিউজটিভি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়