ডা. নুরুল মোমিন খান: খতনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে মিডিয়ায় মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে। বহু মানুষ তার সন্তানের খতনা স্তগিত করে দিয়েছেন প্যানিকে। বাংলাদেশে বেশি খতনা করে হাজামরা, তারা যেসব দুর্ঘটনা ঘটায় সেগুলো রহস্যময় কারণে মিডিয়া কভার করে না, যেমনটা বাড়িতে নরমাল ডেলিভারিতে বিপদ ঘটালে খবর হয় না। আমার এই চিকিৎসক জীবনে কয়েক হাজার খতনা করেছি, আমার অভিজ্ঞতা বলে, বহু বড় সার্জারির চেয়ে কঠিন হয় ঠিকঠাক মতো চামড়া কাটা এবং সারিয়ে তোলা, হাজাম দিয়ে বাড়িতে খতনা বা চেম্বারে চিকিৎসকরা খতনা করে বিপদ বাধিয়েছে, জটিলতা করেছে এরকম বহু ঘটনা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা দিয়ে ঠিক করেছি আমি।
যেসব বিপদ বাধিয়ে নিয়ে আসে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো রক্তপাত থামাতে না পারা, চামড়া ঠিকঠাক না কাটা, ইনফেকশন, পঁচন, ব্যান্ডেজ জড়িয়ে খুলতে না পারা, প্রশ্রাব আটকে যাওয়া। এছাড়া লিঙ্গের মাথা কেটে ফেলা, কারো কারো আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটা। মেডিকেল সায়েন্স অনুসারে চামড়া ঠিকমতো পরিষ্কার রাখলে যে চামড়া কাটা হয় তা কাটার কোনো দরকার নেই বরং অবান্তর সুড়সুড়ি থেকে বাঁচায় যেটুকু কেটে ফেলা হয়। খতনায় মূলত সমস্যা হয় বাচ্চার প্যানিক, লোকাল এনেস্থিসিয়া দিয়ে খতনা করার সময় বাচ্চার ভয়ে নড়াচড়া এক ঝামেলা তৈরি করে ঠিকঠাক খতনা করতে, এজন্য একটু ঘুম পাড়িয়ে নিতে হয়, আর ঘুম পাড়ানি ঠিকঠাক না হলে মৃত্যু।
বড় হাসপাতালে পর পর দুটি মৃত্যু মানুষকে ভীষণ প্যানিকে রেখেছে, এখন এক শ্রেণি ভাবছে হাজামই ভালো। ভাইয়েরা হাজামরা মেডিকেল সায়েন্স কিছু বুঝে না। দুর্ঘটনাগুলো কী পরিমাণ হয় সরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে গিয়ে দেখে আইসেন কয়েকবার। আমার ছোটভাই মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিল। আমি সাধারণত লোকাল এনেস্থিসিয়া দিয়ে করি। তবে প্যানিকে থাকা বাচ্চাদের সাব-অপটিমাল ডোজে কিছু ওষুধের ককটেল দিয়ে রাখি, যাতে বাচ্চা তাকিয়ে থাকে, হালকা নড়াচড়া করে, আমার কাজে অসুবিধা না হয়, কিছুক্ষণ পর বাচ্চা বাসায় চলে যায়। ফুল এনেস্থিসিয়া দেওয়ার কোনো যুক্তি আমি পাই না।। দশ বছর বয়স হলো আমার দৃষ্টিতে অপটিমাম বয়স খতনার। লেখক: এমবিবিএস, এফআইপিএম (ভারত)
আপনার মতামত লিখুন :