শিরোনাম
◈ ভিত্তিহীন ও এআই-জেনারেটেড তথ্য নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ রিজভীর ◈ রোকেয়া পদকজয়ীদের সংবর্ধনায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস, ওসমান হাদির ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ পদকপ্রাপকদের ◈ আফগানিস্তানকে হারিয়ে যুব এশিয়া কাপে বাংলা‌দে‌শের সুন্দর সূচনা ◈ আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে: তারেক রহমান ◈ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল? ◈ ওসমান হাদির হামলা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নামে 'ভুয়া ফটোকার্ড' ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কতা ◈ 'ফিরে এসো প্রিয় ওসমান হাদি': আসিফ আকবর ◈ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত, ইসির পরিপত্র জারি ◈ ওসমান হা‌দির চিকিৎসায় মে‌ডিকেল বোর্ড গঠন, সর্বশেষ যা জানা গেল ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও নিরাপত্তা নিয়ে যা জানালেন সালাহউদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৩:২২ রাত
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৩:২২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সমাজে বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকলে আমরা কেউই আসলে ভালো থাকতে পারবো না

আরিফ জেবতিক

আরিফ জেবতিক: সন্ধ্যায় হুট করেই হালুয়ার জন্য মন খারাপ হয়ে গেলো। বাসায় কেউ হালুয়া পাঠায়নি। আম্মা ঢাকায় নেই, বউ দেশে নেই, দুই বাচ্চাকে নিয়ে ক্লায়ক্লিশে বাসায় টিকে থাকা আমার জন্য নিজে হালুয়া তৈরির কোনো প্রশ্নই নেই। হালুয়া যে আমি খুব আগ্রহ করে খাই, তেমনও না ব্যাপারটা। কিন্তু এটি আসলে একধরনের অভ্যাস, বছরের পর বছর ধরে চর্চার কারণে শবেবরাতের সন্ধ্যায় হালুয়া বনরুটির একটি ক্রেভিং তৈরি হয়ে আছে ডিএনএতে। তাছাড়া গত কয়েকবছর ধরে আম্মা বিভিন্ন ইসলামিক স্টাডি সার্কেলের সদস্য হওয়ায় আমাদের বাসায় এসব বেদাত নন বেদাত, জের, জবর, পেশ মুক্ত সৌদি কোরআন পড়া, সৌদি আরবের সাথে হজ্ব হলে কেন সৌদি আরবের সাথে একই দিন ঈদ হবে না, এরকম বিবিধ নতুন বিতর্কের পীঠস্থান হয়েছে (সুরা ফাতিহার পরে জোরে আমীন বলা হবে কি হবে না, নামাজের সময় হাত নাভির উপর নাকি বুকের উপর এই বিতর্কগুলো এখনও শুরু হয়নি, তবে হবে হবে করছে)। 
সামাজিক এই পরিবর্তন আমি আগ্রহের সাথে পর্যবেক্ষণ করি। এই পর্যায়ে বাসায় হালুয়া বানানোর চর্চা অদৃশ্য হয়ে গেছে বেশ কয়েকবছর ধরেই। কিন্তু আমরা যে এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে থাকি, সেটা বেশ বড়। অনেকগুলো পরিবারের বাস। প্রতিবছর প্রতিবেশিদের বাড়ি থেকে হালুয়া রুটি বেশ আসত আসরের নামাজের পরপর। ধীরে ধীরে এর পরিমাণ কমছিল। আগে ১০ বাড়ি থেকে এলে ৫ বছর পরে সেটি ৩ বাড়ি থেকে আসায় ঠেকেছিল। কিন্তু এবার কারো বাড়ি থেকেই আসেনি। মানে আরেকটি সামাজিক পরিবর্তন পূর্ণতা পোেল। আমাদের বিশাল এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের প্রতিটি পরিবার থেকে শবেবরাত বিলুপ্ত হয়ে গেলো। কিন্তু একটা ব্যাপার কি খেয়াল করে দেখেছেন? শবেবরাত বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রতিবেশিদের সাথে আমাদের শেষ সামাজিকতা, শেষ সম্প্রীতির সুতোও ছিড়ে গেলো। আমাদের সামাজিক বিলিবণ্টনের উৎসব দুইটি। কোরবানিতে মাংস বিলি করা আর শবেবরাতে হালুয়া বিলি করা। কোরবানির মাংস বিলির মাঝে যতটা না শুভেচ্ছা জানানোর ভাব থাকে, তার চাইতে বেশি থাকে দয়াদাক্ষিণ্য। 
কোরবানির মাংস আজকাল আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বিলি করা হয় কম। বাড়ির গেটে লাইন ধরিয়ে কিছু গরিবকে দেওয়া হয়। সেখানে সম্প্রীতি কম, ভালোবাসা কম বরং দেওয়ার দেমাগটাই বেশি চোখে পড়ে ইদানীং। সে তুলনায় শবেবরাত ছিল অনেকটাই আনন্দময়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হালুয়া রুটি ভর্তি ট্রে নিয়ে এবাড়ি ওবাড়ি ছুটোছুটি করছে, দেখতেও ভালো লাগত। সেটার বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এখন আমাদের সমাজে নতুন নতুন বেশকিছু উৎসব চালু হয়েছে, যেগুলো পুরোটাই ব্যক্তি ও পরিবার কেন্দ্রিক। পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন এসব উৎসবে আমরা নিজেরা সেজেগুজে কোথাও গিয়ে গানটান শুনি, পান্তা-ভর্তা খাই আর ফেসবুকে ইন্সটাগ্রামে ছবি পোস্ট করি। যাদের বন্ধু সার্কেল বড়, তাঁরা বন্ধুবান্ধবের সাথে এখানে ওখানে উদযাপন করি। কিন্তু এই দিনগুলোতে আমাদের পাশের বাড়ির লোকটির সাথে আমাদের যোগাযোগ স্থাপন হয় না। আর ঈদ, আমাদের চিরায়ত উৎসব সেটি তো ভিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে নিজের জেলায় গিয়ে ঘুমানোর মহোৎসব হয়তো শেকড়ে থাকা মানুষদের সাথে সংযোগ হয়, কিন্তু সারা বছর ঢাকায় যাদের আশেপাশে থাকি, তাঁদের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ খুব কম। শবেবরাত গেছে, যাক। কিন্তু আমাদের সামাজিক যোগাযোগের নতুন ধরনের উৎসব প্রয়োজন। এমন উৎসব যেখানে আমরা প্রতিবেশিদের সাথে আরো বেশি সংযুক্ত হতে পারব। কম আয়াসে, কম ঝামেলায় আমরা পরস্পরকে বলতে পারব, ইউ কেয়ার ইয়্যু, উই লাভ ইয়্যু। মানুষ সামাজিক জীব। অথচ এই নাগরিক জীবনে আমরা ক্রমাগত পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছি। এই বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকলে আমরা কেউই আসলে ভালো থাকতে পারবো না। 
লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়