শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৪৮ রাত
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গুগলের দিনগুলো : সিলিকন ভ্যালিতে ১০০ দিন  

রাগিব হাসান

রাগিব হাসান: চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, তুমি শুনছো? ‘হ্যালো, আমি গুগল থেকে বলছি। রাগিব হাসানের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ গাড়ি চালাচ্ছিলাম তুষারাচ্ছন্ন এক প্রান্তরে। জানুয়ারির এক বরফে-ঢাকা দিন। ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের ক্যাম্পাসের পাশেই আরবানা নামের শহরে আমার আর জারিয়ার ছোট্ট একটা বাসা, আমাদের প্রথম সংসার। কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব ক্যাম্পাসের ঠিক মাঝখানে সেখানে সাধারণত বাসেই যাই। কিন্তু বাসটা মিস করে ফেলেছি; এদিকে দরকারি একটা মিটিং প্রফেসরের সঙ্গে। রাস্তায় গুচ্ছের বরফ জমে আছে, ড্রাইভ করতে ইচ্ছে করছে না। তারপরও বেরিয়েছি পুরোনো ঝরঝরে গাড়িটা নিয়ে। গাড়ির উপরে কম করে হলেও চার ইঞ্চি বরফ জমে ছিলো। সেটাকে সাফ করে কোনোমতে গাড়িটা বের করা গেছে। সাবধানে চালাচ্ছি প্রচণ্ড পিচ্ছিল রাস্তার উপর দিয়ে। এমন সময় এলো ফোনটা। সাংঘাতিক বেআইনি জেনেও ফোনটা ধরে ফেললাম, রাস্তাঘাট ফাঁকাই আছে। আশা করি পুলিশ দেখবে না। কিন্তু প্রথম বাক্যটা শুনেই গেলাম চমকে। তাড়াতাড়ি পথের পাশেই একটা গলি বের করে গাড়ি থামালাম। এ যে স্বপ্নের গুগল থেকে ফোন!

সময়টা ২০০৭ সালের জানুয়ারি। পিএইচডি করছি ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা-শ্যাম্পেইনে। গুগলে ইন্টার্নশিপের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম মাস কয়েক আগে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা সাধারণত ছুটি পায় সামার সেমিস্টার বা গ্রীষ্মকালীন তিন মাসে। কেউ প্রফেসরের অধীনে গবেষণা করে, আর কেউ স্বল্পকালীন চাকরি করে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। অধিকাংশ প্রযুক্তি কোম্পানি এই সময়ে প্রচুর ইন্টার্ন নেয় এই ইন্টার্নশিপ বা শিক্ষানবিশির জন্য। পূর্ণকালীন চাকরির সমান বেতন দেওয়া লাগে না, দীর্ঘমেয়াদি কমিটমেন্টের ঝামেলাও নেই, আর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা মেধাদের আকর্ষণ করা যায় এই কারণে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালানোটা কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনক বটে। শিক্ষার্থীদের জন্যও মহাসুযোগ নানা কোম্পানিতে হাতে-কলমে কাজ শেখার, আর বাস্তব জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে বড় মাপের কাজ করতে পারার। কিন্তু গুগলের ইন্টার্নশিপ বলে কথা সারা বিশ্বের সব শিক্ষার্থীর পরম আরাধ্য। তাই প্রতিযোগিতাও হাড্ডাহাড্ডি। ইন্টার্নশিপ শুরু মে মাসে, কিন্তু তার জন্য আগের বছরের নভেম্বর থেকে আবেদনের কাজ শুরু হয়। আবেদন করার পর সিভি দেখে পছন্দ হলে পরের ধাপে ফোনে ইন্টারভিউ হয়। সেখানে নানা প্রশ্ন করা হয়, আর সেসব প্রশ্ন হয় এমন যে মুখস্থবিদ্যা দিয়ে তার জবাব দেওয়ার জো নেই। অনেক প্রশ্নের সঠিক জবাব বলেও কিছু নেই, বরং প্রশ্নকর্তা দেখতে চান, জটিল সমস্যা দিলে কীভাবে তার সমাধান করার চিন্তা করছে শিক্ষার্থীটি; ধাপে ধাপে চিন্তা করতে পারে কি না সেটাই যাচাই করা হয়।

আগের সব সামারে আমার ইউনিভার্সিটির বিশ্ববিখ্যাত সুপারকম্পিউটার সেন্টারে কাজ করেছি, তাই এবার ইচ্ছা হয়েছিলো বাইরে অ্যাপ্লাই করার। মাইক্রোসফট, গুগল, ইয়াহু  এরকম কয়েক জায়গায় অ্যাপ্লাই করেছি। ফেইসবুক তখনও (২০০৭ সাল) এতোটা জনপ্রিয় হয়নি, কাজেই সেখানে অ্যাপ্লাই করিনি। গুগল থেকে একসময় সাড়া পেয়ে ফোনে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা ধোঁয়াটে একটা জবাব দিয়েছিল হ্যাঁ-না কিছুই বলেনি সে-সময়। তাই তুষারাচ্ছন্ন প্রান্তরে গাড়ি চালানোর সময় এই অপ্রত্যাশিত ফোনটা চমকে দিলো বটে। গাড়ি রেখে কথা বলতে শুরু করলাম। ‘অভিনন্দন, রাগিব। আমি গুগলের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগ থেকে বলছি। আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমরা আপনাকে আগামী গ্রীষ্মের জন্য ইন্টার্নশিপের অফার দিচ্ছি। তিন মাস আপনি গুগলের একটা গ্রুপের সঙ্গে কাজ করবেন, গুগলের হেডকোয়ার্টার সিলিকন ভ্যালির মাউন্টেইন ভিউতেই।’ বিস্তারিত আরও অনেক কিছুই বলেছিলো সেই এইচআরের কর্মীটি, কিন্তু আমার মনটা অন্যদিকে চলে গেছে। তর সইছে না, বাসায় ফোন করে জারিয়াকে খবরটা দেওয়ার জন্য। চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, তুমি শুনছো? স্বপ্নের তিন মাস আসছে, অচিরেই।

নোট : এটা ২০০৭  সালের কথা যখন আমি পিএইচডি ছাত্র ছিলাম। গুগলে ইন্টার্নশিপ শেষে ফুল টাইম জব অফার পেয়েও আমি গুগলে যাইনি। কারণ আমার নেশা ও পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকেই বেশি পছন্দ। একথা বারবার বলে দেওয়ার কারণ হলো, কেউ যেন মনে না করেন আমি এই ২০২৪ সালে গুগলে যোগ দিচ্ছি, হা হা (যদিও দুয়েকজন প্রথম লাইন পড়েই হয়তো অভিনন্দন জানাবেন)। লেখক: শিক্ষক ও গবেষক। ফেসবুকে ২৪-২-২৪ প্রকাশিত হয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়