শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভের মুখে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির! ◈ ইসরায়েলে ফাত্তাহ-১ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান: আইআরজিসি ◈ ইরান কখনো আপস করবে না: খামেনি ◈ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান, প্রস্তুত গুলশানের বাড়ি ◈ ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বিদেশে যেভাবে কাজ করে! ◈ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা 'বিবেচনা' করছেন ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের ঘাঁটি থেকে বের হয়েছে আমেরিকার বোমারু বিমান ◈ দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস ◈ ইসরা‌য়ে‌লের হু‌শিয়া‌রি: যুদ্ধাপরাধ বন্ধ না করলে সাদ্দামের মতোই ইরা‌নের স‌র্বোচ্চ ‌নেতার জন্য ফাঁসির মঞ্চ প্রস্ত‌ত ◈ ইসরাইলে এখন পর্যন্ত যে হামলা হয়েছে তা সতর্কতামূলক, শিগগিরি শাস্তিমূলক অভিযান শুরু হবে: নতুন সেনাপ্রধা‌নের কড়া বার্তা  ◈ ইরান কি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করতে পারবে, করলে বিশ্বে এর প্রভাব কেমন হবে?

প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৩৫ রাত
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার লিখবেন কীভাবে?

রাগিব হাসান: নবীন গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার একটি ভীতিকর অংশ হলো গবেষণালব্ধ ফলাফলকে গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার আকারে লেখা। আমার পিএইচডি বা মাস্টার্স ছাত্রদের হাতে ধরে ধরে সেটা শিখাই। এই পোস্টে কীভাবে রিসার্চ পেপার লেখা শুরু করতে হবে, তাই নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখছি। রিসার্চ পেপারের মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষণায় কী পেয়েছেন, সেটাই সংক্ষিপ্ত আকারে জানানো। খেয়াল রাখবেন, আপনি হয়তো বছর খানেক কাজ করেছেন, তাই সবকিছুর খুঁটিনাটি জানেন ঠোটস্থ ভাবে, কিন্তু পাঠকের সেই গভীর জ্ঞান নাও থাকতে পারে। কাজেই রিসার্চ পেপারের শুরুটা করতে হবে গবেষণার বিষয়টির প্রেক্ষিত বা ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আলোচনা করে।

পেপারের শুরুতেই থাকে সারাংশ। এই অংশটি ৫/৬ বাক্যের বেশি হওয়া উচিত নয়। এই অংশের কাজ হলো গবেষণাপত্রটির সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা খুব অল্প জায়গায়। যেমন, সমস্যাটা কী, তার সমাধান করলে লাভ কী, আপনি কী করেছেন, এবং এই পেপারে কী তথ্য/ফলাফল/প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে, সেটা। অনেকেই এই অংশটি অতি দীর্ঘায়িত করে ফেলেন। সেটা ঠিক নয়। অনেক কনফারেন্স বা জার্নালে অবশ্য শব্দসীমা বেঁধে দেওয়া থাকে, তার চেয়ে বেশি দেয়া যায় না। আপাতত এই অংশটিতে সর্বোচ্চ ৬ বাক্য থাকবে, এটাই লক্ষ্য স্থির করবেন।

এবার পেপারের মূল অংশ। পেপারের শুরুতে সাধারণত ভূমিকা সেকশন থাকে, শেষে থাকে উপসংহার। ভূমিকাতে মূল সমস্যা নিয়ে প্রেক্ষিত নিয়ে বলতে হবে। স্টানফোর্ডের ইনফোল্যাবের প্রফেসর জেনিফার উইডোমের এই নিয়ে দারুণ একটা ফরমুলা আছে, সেটা এরকম। ভূমিকাতে ৫টি অংশ থাকবে। [১] সমস্যাটা কী? [২] সেটা সমাধান করা কেনো দরকার (কী লাভ হবে এটা করে)? [৩] সমস্যাটা সমাধান করা কেনো কঠিন? [৪]  আপনি কী করছেন সেটা সমাধানে? এবং [৫] অন্যরা কী করেছে, তার চাইতে আপনার পদ্ধতির সুবিধা কী কী? কাজে ইন্ট্রোডাকশন লেখার সময়ে ৫টা প্যারা লিখবেন অন্তত, উপরের ৫টা পয়েন্ট নিয়ে।

এর পরে থাকতে পারে ব্যাকগ্রাউন্ড বা মোটিভেশন অংশ, যেখানে এই পেপারের বিষয়ে কিছু প্রাথমিক ধারণা সংক্ষেপে দেয়া হবে। মূলত কনসেপ্ট বা ধারণাগুলা সংক্ষেপে লিখে সেসব বিষয়ের নানা পেপারের সাইটেশন দিতে হবে। এবারে আসবে আপনার পেপারের টেকনিকাল বা কারিগরি অংশটি। পেপার কীসের উপরে, তার উপরে নির্ভর করবে এখানে কী থাকবে। এই অংশে সিস্টেম ডিজাইন/আর্কিটেকচার থাকতে পারে, থিওরির অংশ থাকতে পারে, এক্সপেরিমেন্টাল মেথডলজি থাকতে পারে ইত্যাদি। অবশ্যই চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে হবে। পরের অংশে থাকবে আপনার এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট বা ফলাফল ও তার বিশ্লেষণ। এখানে ফলাফল উপস্থাপন (ছক বা চিত্র) করাই যথেষ্ট নয়, বরং তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই ফলাফল ব্যাখ্যা করা। ডিসকাশন বা আলোচনা অংশে অনেক জোর দিতে হবে। ফলাফল ভালো হলে তো বটেই, খারাপ হলে সেটার সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও দিতে হবে।

রিলেটেড ওয়ার্ক বা এই বিষয়ে অন্য কে কী কাজ করেছেন, সেটার অবস্থান নিয়ে একটু দ্বিমত আছে। কেউ কেউ পেপারের সব শেষে সেটা দিতে পছন্দ করেন, আবার কেউ কেউ পেপারের শুরুতে। পেপারের বিষয়ের উপরেও অনেক ক্ষেত্রে এটা নির্ভর করে। তবে এই অংশের মোদ্দা কথা হলো অন্য কে কী কাজ করেছে তা উল্লেখ করা এবং বিনয়ের সাথে তাদের কাজের সাথে আপনার কাজের পার্থক্য বা সুবিধাগুলা উল্লেখ করা (বিনয়ের সাথে করাটা গুরুত্বপূর্ণ, অমুকের কাজ ‘জঘন্য’ এই টাইপের কিছু কখনোই লিখতে যাবেন না)। পার্থক্যগুলা ছক আকারে দিতে পারলে ভালো হয়। সবশেষে আসে উপসংহার। এই অংশে থাকবে এই পেপারে কী পড়লেন পাঠক, তার উপরে কিছু কথা। এই অংশে এই পেপারে কী কাজ দেখানো হয়েছে তা ছাড়াও এই কাজের ভিত্তিতে কী সুবিধা পাওয়া যাবে এবং ভবিষ্যতে আপনি আর কী করতে পারেন সেই বিষয়ে বলা চলে। এবং সবশেষে bibliography/reference এই অংশটি তো থাকছেই, যেখানে আপনার সাইট করা সব পেপারের তথ্য দিতে হবে। ব্যাস, এই নিয়মগুলা মেনে চললেই লিখতে পারবেন রিসার্চ পেপার। মনে রাখবেন, পাঠক কিন্তু আপনার চাইতে কম জানেন এই বিষয়টা, কাজেই আপনার কাছে জলবৎ তরলং জিনিষও আসলে বুঝিয়ে বলতে হবে। 

উল্লেখ্য এই লেখায় লেখা পদ্ধতি মূলত টেকনিকাল রিসার্চ পেপার লেখার কৌশল। সোশাল সায়েন্স বা অন্যান্য নন-টেকনিকাল ফিল্ডের পেপার লেখার সময়ে মূল অংশের কাঠামো একটু আলাদা হবে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই শুরুতে আবসট্রাক্ট আর ইন্ট্রোডাকশন এবং শেষের অংশের গঠন একই থাকে।)  রিসার্চ পেপার আসলে গল্প বলাÑআপনার রিসার্চকে সহজে বুঝিয়ে বলা। কীভাবে শুরু করবেন তার হদিস এখনো না পেলে এক কাজ করুন, আপনার মা-বাবা বউ ভাই বোন বন্ধু, এমন কেউ যে এই বিষয়ে কিছুই বোঝেনা, তাকে ১০ মিনিটে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন। তার পর কীভাবে বোঝালেন, সেটাকেই ভাষায় লিখেন উপরের কাঠামো অনুসারে।  লেখাটি আমার ‘গবেষণায় হাতে খড়ি’ বইটির অংশ। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়