জান্নাতুল ফেরদৌস : ফজলুর রহমান বাবুÑ একজন অভিনেতা। গানও গান তিনি। দক্ষ ও সুনিপুণ অভিনেতা হিসেবেই পরিচিত। সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেন। বিশেষ করে টিপিক্যাল চরিত্রগুলোতে তার বিকল্প খুব বেশি অভিনেতা নেই। চার দশক ধরে তিনি অভিনয় করছেন। অসংখ্য মঞ্চ থেকে শুরু করে টেলিভিশনে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় অভিনয় করেছেন। গায়ক হিসেবেও ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন। শতাধিক টেলিভিশন নাটক, একইসঙ্গে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও বহু টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। ১৯৭৮ সালে ফরিদপুরে ‘বৈশাখী নাট্য গোষ্ঠিতে’ যোগদানের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের শুরু করেন। একইবছর, প্রথমবারের মতো জাতীয় নাট্য উৎসবে অভিনয় পরিবেশন করে। ঢাকায় এসে তিনি মামুনুর রশীদের ‘আরণ্যক নাট্যদল’ মঞ্চ দলে যোগ দেন। মঞ্চে তার অভিনয়কৃত উল্লেখযোগ্য নাটক হলো নঙ্কার পালা, পাথার এবং ময়ূর সিংহাসন। এই গুণী অভিনেতা ১৯৬০ সালের ২২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।
ফজলুর রহমান বাবু ১৯৯১ সালে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত প্রথম টেলিভিশন সোপ অপেরা হলো ‘মৃত্যুক্ষুধা’। এটি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত মৃত্যুক্ষুধা অবলম্বনে নির্মিত এবং পরিচালনা করেছেন আবু জাফর সিদ্দিকী। বাবু তার হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু তার দানব এবং জয় জয়ন্তীর মতো মঞ্চ নাটকে তিনি গম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে টেলিভিশন এবং থিয়েটারে কাজ করে গেছেন তিনি। কিন্তু থিয়েটার অভিনয় ছেড়ে দেন যখন তার টেলিভিশনের কাজে মাসে পঁচিশ দিন তিনি ব্যস্ত থাকছেন। ২০০০ এবং ২০০১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বাবু প্রথম আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে কাজ করেন, মঞ্চ নাটক ‘বিহঙ্গ’ নাটকে। এছাড়া বাবু তৌকির আহমেদ পরিচালিত দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই সিনেমার গল্পকার, সংলাপ রচয়িতা ও চিত্রনাট্যকার হলেন হুমায়ূন আহমেদ। বাবু মনপুরা সিনেমায় দুইটি গান গাওয়ার মাধ্যমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বাবু তার প্রথম একক সঙ্গীত অ্যালবাম ইন্দুবালা (২০০৯)। এছাড়া তিনি মিশ্র সঙ্গীত অ্যালবাম মনচোর (২০০৮) এর চারটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
তিনি নাট্যধর্মী শঙ্খনাদ, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে ও ফাগুন হাওয়ায় চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে এবং গহীন বালুচর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুকাভিনয়শিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০২১ সালে (নোনা জলের কাব্য) চলচ্চিত্র অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০২১ সালে ‘খাচার ভিতর অচিন পাখি’ অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা সমালোচক মেরিল পথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সমূহ হলো দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭), মনপুরা (২০০৯), অজ্ঞাতনামা (২০১৬), এবং হালদা (২০১৭)।