শিরোনাম
◈ ক্লাব বিশ্বকাপ - মেসির ফ্রি কিকের গো‌লে পোর্তোর বিরু‌দ্ধে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ ইশরাক স্বেচ্ছায় না সরলে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন নির্বাচন: বিএনপিকে সরকারের বার্তা ◈ অবশেষে ৫ যুগ পর রাজধানী থেকে সরছে গোল্ডলিফ-বেনসনের কারখানা! ◈ ইসরায়েলে মাইক্রোসফট কার্যালয়ের কাছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত, ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী ◈ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণপ্রার্থীসহ কমপক্ষে ৯২ জন নিহত ◈ গ্লোবাল সুপার লিগ খেল‌তে  ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছে রংপুর রাইডার্স ◈ অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩: ইরা‌নের এক রা‌তের হামলায়  তেল আবিবে অন্তত ৫০ ইহুদিবাদী নিহত ◈ ইরানে হামলার সিদ্ধান্তের আগে দুই সপ্তাহ সময় নিলেন ট্রাম্প (ভিডিও) ◈ পর্যটনে সেরা ১০ মুসলিমবান্ধব অমুসলিম দেশ ◈ ৫ সচিবকে এবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৮:১২ সকাল
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৮:১২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যন্ত্রণাময় এই পৃথিবীতে!

জসিম মল্লিক: [১] মাঝে মাঝে মনটা কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। আউলা ঝাউলা লাগে। সবকিছু খাপছাড়া মনে হয়। জগতের সবকিছু বিষময় লাগে। কোনো কিছুতে মন বসে না। কোনো কিছু ভালো লাগে না। খেতে ভালো লাগে না, পড়তে ভালো লাগে না, সিনেমা দেখতে ভালো লাগে না, বেড়াতে ভালো লাগে না, গল্প করতে ভালো লাগে না। এমনকি প্রিয় গানও বেসুরো হয়ে কানে বাজে। এর পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ হয়তো নাই। কিন্তু তবুও মন বিক্ষিপ্ত লাগে। তখন ভালো ভালো কথাও ভালো লাগে না। সংসার অসহ্য লাগে, বাজার করতে অসহ্য লাগে, চারপাশের মানুষজনকে অসহ্য লাগে। ঠিক সেই রকম মুহূর্তে লেখার টেবিলে বসে বসে ঝিমোই। ডেক্সটপের সাদা স্কিৃনের দিকে তাকিয়ে থাকি। ফেসবুক লগ অন করি। কিন্তু কিছুই মন দিয়ে দেখি না। সুন্দর সুন্দর নারী-পুরষের ছবিও আর সুন্দর লাগে না, সুন্দর লেখাও হৃদয়ঙ্গম হয় না। সব ঝাপসা লাগে। কম্পিউটারের সামনে বসা মানেই তো লেখা নয়, এটা একটা অভ্যাসের মতো। সব লেখকদেরই মনে হয় এমন দৈন্য দশা হয়। বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যন্ত্রণাময় সময় পার করেন। কিন্তু কিছুই লিখতে পারেন না বা কিছুই লেখেন না। 

[২] ঘুম ভেঙে হয়তো একটা ম্যাসেজ আশা করছি হোয়াটসঅ্যাপ বা ম্যসেঞ্জারে, বিশেষ কারো রিপ্লাই কিন্তু সেই  রিপ্লাই আসে না, ম্যাসেজ সীনও হয় নাই তখন মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। কেনো ম্যাসেজ এলো না! নানা শঙ্কা কাজ করে। কোনো বিপদ হয়নি তো! কিন্তু জানার কোনো উপায় নেই। তখন খুবই হেল্পলেস লাগে। দ্রুত লিখে দ্রুত উত্তর পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ সেটা ঘটেনা বলে হতাশা ভর করে। একসময় পত্রমিতালী করতাম। একশর মতো পত্র মিতা ছিল আমার। চিঠি লিখে এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম। কবে আসবে চিঠির উত্তর। কবে ডাকপিয়ন সাইকেলের ঘন্টি বাজিয়ে সুগন্ধি মাখা এনভেলাপ এনে হাতে দেবে! সেই মুহূর্তের আনন্দের কোনো তুলনা নাই। ডাকবিভাগ কী থাকবে শেষ পর্যন্ত। পার্সেল আদান প্রদান ছাড়া চিঠির আবেদন কি শেষ হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম জানেই না ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি আদান প্রদানের কি তীব্র আবেদন ছিল। এখন চ্যাটবক্সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সবাই। সোশ্যাল মিডিয়া দূরের মানুষকে কাছে এনে দিয়েছে। নৈকট্য তৈরী করতে সাহায্য করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপদ যেমন আছে বিপদমুক্তিও আছে। শঙ্কা যেমন আছে আনন্দও আছে। অপেক্ষা যেমন আছে উপেক্ষাও আছে। 

[৩] কিছু মানুষ আছে খুবই নির্লিপ্ত। আবেগের মুল্য দিতে পারে না। আমার মধ্যেও নির্লিপ্ততা আছে। উদাসীনতা আছে। এটা আমার স্বভাবের অংশ। এটা আমি সবসময় কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করি। তবে আমার উদাসীনতা কোনোভাবেই উপেক্ষা না। আমি কাউকে উপেক্ষা করি না। আমি  নিজেও উপেক্ষা জিনিসটা একদম নিতে পারি না। আজকের পৃথিবীতে সবকিছু এতো দ্রুত ঘটছে। এতো দ্রুত সবকিছু ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ভাইরাল হচ্ছে যে কোনো একটা ঘটনায় মনোনিবেশ করা যাচ্ছে না। আপনজন বিয়োগে শোক পর্যন্ত করার সময় নাই। শোকের আয়ূ দ্রুত কমে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এতো এতো ট্রাজিক ঘটনা ঘটছে, আপনজন চলে যাচ্ছে, ভালোবাসার মানুষ চিরবিদায় নিচ্ছে, রোগে শোকে কাতর পৃথিবী। একটা থেকে আর একটা ঘটছে প্রতিনিয়ত। চোখের পানি শুকোতে না শুকোতেই অন্য একটা ঘটনা সামনে চলে আসছে। অচিন্তিনিয় সব ঘটনা, হৃদয় বিদীর্ণ করা শোক গাঁথা। কিন্তু কোনোটারই স্থায়িত্ব নাই। তাই আবেগটাও ক্রমশঃ ফিকে হয়ে আসছে। এসব যখনই ভাবি তখনই মনটা এলোমেলো হয়ে যায়। 

[৪] কি এক পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। এই যে যুদ্ধে গাজায় হাজার হাজার নারী শিশু মারা যাচ্ছে তাও আমাদের হুদয়কে স্পর্শ করছে না। পৃথিবী নির্বাক তাকিয়ে দেখছে। এতো অন্যায়, এতো ক্ষমতার দাপট পৃথিবীজুড়ে। অথচ মানুষ কত অসহায়। অন্যায়ের প্রতিবাদের সাহসটুকু হারিয়ে ফেলছে মানুষ। শুধ তো যুদ্ধই নয়, পৃথিবী জুড়ে শুধু অন্যায়। ঘরে বাইরে সমাজে রাষ্ট্রে সর্বত্র্য অন্যায়।  এতো অন্যায়, অনাচার, অনিয়ম, দুঃখ কষ্ট, শোক সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের নাই। এতোকিছু একসাথে মানুষ ধারন করতে পারে না। মানুষ দুঃখ কষ্ট, শোক ভুলে যায়, ভুলতে পারে বলেই বাঁচে, টিকে থাকে। আমরা সবাই কষ্ট ভুলে থাকতে চাই। মা বাবার মৃত্যু বা প্রিয় সন্তানের মৃত্যুও আমরা সহ্য করি, প্রিয়তম স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যু সহ্য করি। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ভুলে যায় ঠিকই কিন্তু হারিয়ে যায় না। যখন নির্জনতা বা একাকীত্ব গ্রাস করে তখন আপনজনরা সামনে চলে আসে। আমার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। আপন মানুষদের জন্য, যাদের ভালোবেসেছি বা যেসব আপজন হারিয়েছি তাদের জন্য একটা কষ্টকর অনুভূতি, একটা যন্ত্রণা অহর্নিশ আমাকে ভোগায়, আমাকে এলোমলো করে দেয়। আউলা ঝাউলা করে দেয়।

টরন্টো ১১ ডিসেম্বর ২০২। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়