শিরোনাম
◈ আ.লীগ বা সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে পারে: আসিফ নজরুল ◈ ভারত বলছে তিনটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, পাকিস্তানের অস্বীকার ◈ যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়, নিষিদ্ধ করতে হবে আ.লীগকে: নাহিদ ইসলাম ◈ সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে পুলিশ (ভিডিও) ◈ লাহোরে পাল্টা আঘাত হেনে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে ভারত ◈ পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হলেন আমেরিকান রবার্ট প্রিভোস্ট ◈ নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ: আসিফ মাহমুদ ◈ আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে: নাহিদ ইসলাম ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে হাসনাতের নেতৃত্বে বিক্ষোভ, সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ◈ ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নিয়ে যা বলল পাকিস্তান

প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০২:৩৭ রাত
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০২:৩৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একাত্তরের বিজয় আগামীর সাম্যের সংগ্রামের বিজয়ের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে 

আজিজুর রহমান আসাদ

আজিজুর রহমান আসাদ: ডিসেম্বরেই মার্কিন-পাকিস্থান নেতৃত্ব বুঝে যায় যে তাদের সামরিক পরাজয় অবধারিত। বোঝা যায়, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অনিবার্য, সময়ের ব্যাপার মাত্র। শেষ কৌশল হিসেবে মার্কিন সপ্তম নৌ-বহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে জাতিসংঘে ‘যুদ্ধ বিরতি’ প্রস্তাব উথাপন করা হয়, যা মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এই দুই ধরনের কৌশল ব্যর্থ হয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ ভূমিকায়। এরপর সিয়াইএর হাতে থাকে, একটি মাত্র উপায়। আপাতত পিছু হটা, এবং এই অঞ্চলে তাদের ‘অপারেটিভ’ বাঙালি রাজাকার আলবদরদের রক্ষা করা যাতে তারা আগামীতে এই অঞ্চলে সমাজতন্ত্র বিরোধী ভূমিকায় কাজে লাগে। রাজাকার আলবদর সংগঠকদের বিদেশে অবস্থান নিতে সহায়তা করা হয় এবং ‘গোপন অভিযান’ চালানো হয় বাংলাদেশে। এই গোপন অভিযানের প্রথম পদক্ষেপ, আলবদর বাহিনী দিয়ে ‘বুদ্ধিজীবী’ হত্যা, চূড়ান্ত পরাজয়ের আগেই। কেন বুদ্ধিজীবী হত্যা? কারণ বাঙালি বুদ্ধিজীবীরাই ছিলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মতাদর্শগত শত্রু। এরাই এই সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের চিন্তার ধারক, যারা পুঁজিবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক হেজিমনির বিরুদ্ধে সত্যিকারের সৈনিক। 

এরপরের ইতিহাস সবাই জানি, কিন্তু বলি না। সিয়াইএ এবং আইএসাই’র পৌরোহিত্যে বাংলাদেশে ‘ছাত্রশিবির’ সংগঠিত করা, সাম্প্রদায়িক আমলাদের পুনঃক্ষমতায়ন, রাজাকার আলবদর নেতৃত্ব সামাজিক ও রাজনৈতিক পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য, মাদ্রাসায়ন এবং ইসলামীকরণ, জঙ্গি সংগঠন, বাঙালি সংস্কৃতির প্রায় সকল প্রতীকের প্রতি হামলা, জামায়াত, হেফাজত পৃষ্ঠপোষকতা, বামাতিকরণ ও সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ অস্বীকার, ওয়াজ সংস্কৃতি, ব্লগার হত্যা, অর্ধসহস্র মডেল মসজিদ, ধর্মজীবী শ্রেণি ও এদের রাজনীতির বিকাশ ইত্যাদি। আজকের বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ দেখছেন, যা রাজাকার আলবদরের রাজনীতির ধারাবাহিকতাও, এর দ্বিতীয় সূচনাও এই ডিসেম্বরেই, ১৯৭১ সালে। আমরা সামরিকভাবে বিজয়লাভ করেছি, কিন্তু একইসঙ্গে বাঙালির মানবতাবাদী লোকসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চর্চা এবং সমতাবাদী পরার্থপর রাজনীতিকে হারিয়েছি। হারিয়েছি সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক হেজিমনি ও মার্কিন নয়াঊদারবাদী ‘গণতন্ত্র’ ও ‘উন্নয়নের’ কাছে। আসলে মার্কিন ও রাজাকার আলবদরের রাজনীতির হেজিমনি এখন প্রধান্যে, বাংলাদেশে। 

রাষ্ট্রক্ষমতায় যারাই থাকুক বা আসুক, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি মূলত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও রাজাকার আলবদরের রাজনীতির ধারাবাহিকতাকে প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল একটি সাম্য ও শান্তির সমাজ। এই সমাজের জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধটি এখনো চলমান, নীরবে, কারখানায়, প্রবাসে, শ্রমজীবীদের শ্রমে ও নিঃশ্বাসে। ওরা আসছে, চুপি চুপি। ওদের জন্য দরজা জানালাগুলো খুলতে হবে। না হলে বুঝবেন কী করে, যে ওরা আসছে। ১৯৭১ এর বিজয় আমাদের আগামীর সাম্যের সংগ্রামের বিজয়ের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আগামীর সংগ্রামের জন্য আমাদের ডিসেম্বরের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে, বারে বারে, বিজয় ও পরাজয়ের দ্বান্দ্বিকতা বুঝতে হবে, শিক্ষা নিতে হবে, ডিসেম্বর থেকে। জয় বাংলা।

লেখক: গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়