শিরোনাম
◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে? ◈ এবার থাইল্যান্ড থেকে ভারতগামী বিমানে ১৬ টি সাপ, এরপর যা ঘটল ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তা

প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:২৭ রাত
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:২৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জঞ্জালের শহরে আপনাকে মনে পড়ে

মুনীর হাসান

মুনীর হাসান: ১৯৭০ সালে জার্মানি থেকে বাবা আমাদের প্রথম সাদা-কালো টিভি আনেন। চট্টগ্রাম শহরের কাপাসগোলা নামের একটা জায়গায় একটি বেড়ার ঘরে আমরা থাকতাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়, একদম ছাই। শুধু ফ্লোরটা ছিল। রাউজানে গ্রামের বাড়িতে এ খবর শুনে অনেক কান্নাকাটি করেছি, ভেবেছি টেলিভিশনটা গেছে। পরে শুনলাম আগুন লাগার কয়েকদিন আগে দাদা বাড়ির দামি জিনিসপত্রগুলো আন্দরকিল্লায় নানার বাড়িতে রেখে এসেছেন। স্বাধীনতার পর আমরা নানার বাড়ির একটা ফ্লোরে আস্তানা গাড়ি। এটি আন্দরকিল্লা রাজাপুর লেনে। তখন শুরু হলো কীভাবে টেলিভিশন দেখা যায় তার প্রচেষ্ঠা। লম্বা বাঁশের ওপরে এন্টেনা লাগানো হলো। 
কোনোদিন দেখা যেতো। কোনোদিন না। কিন্তু দিন পাল্টে গেলো ১৯৭৬ সালে যখন চট্টগ্রাম কেন্দ্র হলো। তখন থেকেই প্রতিদিন রাতে আমাদের বাসার ড্রয়িং রুমে পাড়ার সব লোক এসে টিভি দেখতো। কোনো কোনো দিন মা তাদের চা বিস্কিট খাওয়াতেন। আস্তে আস্তে আমরা সৈয়দ শামসুল হকের ম্যাগাজিন ৭৬, ফজলে লোহানির যদি কিছু মনে না করেন- এর ভক্ত হয়ে উঠলাম। স্যাটারডে নাইট মুভি দেখতাম। সে সময় দেখে ফেলেছি সাউন্ড অব মিউজিক, ক্রেনস আর ফ্লাইং মতো সিনেমা। ১৯৮৫ সালে আমাদের বাসায় রঙ্গিন টিভি কিনলেন মা। তখনও টিভির সামনেই কাটে ম্যালা সময়। এরই মধ্যে ভিন্ন ধর্মী একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হলেন একজন স্মার্ট লোক। চমৎকার কথা বলেন। অনুষ্ঠানটা হয় একটা বিষয় নিয়ে। যেমন কথা। একটা পর্ব সাজানো হয়েছে কথা নিয়েই। নাট্যাংশ, গান, কথা বলা সবই ঐ কথা নিয়ে। দলে দলে লোক ঐ উপস্থাপকের প্রেমে পড়ে গেলো। 
তার প্রতি সম্মান আরও বেড়ে গেলো যখন জানা গেলো, ঐ লোকটি আসলে অনুষ্ঠানটি করেন প্রাণের তাগিদে, পরিবর্তনের লক্ষ্যে। নতুবা তখন তাঁকে দিনরাত খাটতে হয় তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানোর জন্য। সে সময় আমাদের বস্ত্রশিল্প বলতে গেলে আঁতুর ঘরে। আমার নেতা নুরুল কাদের ততোদিনে দেশ গার্মেন্টস দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এক নতুন দুয়ার। শুধু তাই নয় ১৩০ জন তরুণ-তরুণীকে কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছেন এবং তাদেরকে আটকেও রাখেননি। ওরা সবাই দেশ গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। সবাই ব্যস্ত। দিন রাত খুব পরিশ্রমে কাটে। তার মধ্যেও আমাদের আনিসুল হক এই অনুষ্ঠানটি করেন। ঈদের আনন্দমেলা করেন। হ্যাঁ। ততোদিনে আনিসুল হকের নাম আমরা জেনে গেছি। তাঁর অনুষ্ঠান দেখার জন্য বসে থাকি টিভির সামনে। ওনার কাছ থেকে কয়েকটা জিনিস শিখে ফেলেছি। প্রথমটা পর্দায় দেখা যায়। একটা মাত্র বিষয় নিয়ে ৫০ মিনিটের অনুষ্ঠান বানানো যায়। এর আগের যতো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান টিভিতে ছিল তার সবই ছিল নানা কিছু, নানা বিষয় নিয়ে। এরকম একটা অনুষ্ঠান প্রতিপক্ষে কেমন করে করেন এটা যখন ভাবতে গেলাম টের পেলাম- এটা তখনই সম্ভব যদি হোমওয়ার্কটা ঠিক করে করা যায়। তখন থেকে হোমওয়ার্ক ঠিকমতো করার চেষ্টা করি। ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে চলে আসি হাল জমানায়। ঐ মানুষটিকে দেখি উদ্যোক্তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নানা আন্দোলন সংগ্রামে। প্রথমে বিজিএমইএ দিয়ে গার্মেন্টস শিল্ল, পরে এফবিসিসিআই দিয়ে পুরো বাণিজ্য-আকাশ জুড়ে তার পদচারণা। তারপর তো, আমাদের প্রাণের নেত্রী তাকে সবুজ ঢাকা করার দায়িত্বই দিয়ে দিলেন।
যে কাজগুলো কোনোদিন হবে না বলে ঢাকাবাসী মনে করতো, উত্তরের মেয়র হয়ে আনিসুল হক তা শুরু করলেন। সবাই বললো, প্রথম প্রথম সবাই এমনটা করে। কিন্তু যেদিন তিনি তেজগাঁও ট্রাকস্টান্ডে সারাদিন ঘেরাও হয়ে থাকলেন। বললেন, আমাকে আপনারা মেরে ফেলতে পারেন। কিন্তু এ রাস্তাতে ট্রাকস্ট্যান্ড থাকবে না সেদিনই আমরা বুঝতে পারি ঢাকা শহর একজন আনিসুল হকের জন্য অপেক্ষা করেছিল। কচ্ছপের মতো কোনো কিছু নিয়ে আমার লেগে থাকাটা জোর পায় তার এই ঘটনা থেকে। জেনে যায় জগতের সবচেয়ে বড় আপাত বাক্য হলোÑ লেগে থাকো। তেজগাঁর ওই রাস্তা দিয়ে আমাকে প্রায়শ যেতে হয়। প্রতিবারই আমার তাঁকে মনে পড়ে। কারণ ওই রাস্তা আবার বেহাত হয়ে যাচ্ছে। 
কারওরান বাজারে পেট্রোবাংলার অফিসের সামনে দিয়ে প্রগতি বিল্ডিংয়ের দিকে আসার সময় প্রতিদিন ওনার কথা মনে পড়ে। কারণ ট্রাকগুলো আবার জায়গা দখলে নিয়েছে। তাদের অন্য জায়গাতে নেওয়ার কোনো মানবিক আনিসুল হক নেই। মনে পড়ে প্রথম আলোর অদম্য মেধাবী অনুষ্ঠানে তাঁর বলা কথা, বিওয়াইএলসির অনুষ্ঠানে তার ৮৪ হাজার টাকার গল্প। প্রথম আলোর এক আড্ডাতে তাঁর ময়মনসিংহ থেকে চালের ট্রাক নিয়ে রাতের বেলায় ঢাকাতে আসার গল্প। সব মনে পড়ে। সব। তাঁর সঙ্গে কোনো কাজ করা হয়নি। কিন্তু গত বছর তাঁর নামে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটা কোহর্ট করেছি। আনিসুল হক কোহর্টের নারী উদ্যোক্তাদের আমি দেখেছি তাঁর নাম কীভাবে তাদের উজ্জীবিত করে। বড় মানুষেরা এমনই হোন। বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। দেখতে দেখতে সেও আজ ছয় বছর হয়ে গেলো। জঞ্জালের এই ঢাকায় আপনাকে অনেক বেশি দরকার ছিল। আল্লাহ আপনাকে বেহেস্ত নসীব করুন। ফেসবুক থেকে

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়