শিরোনাম
◈ বিদেশ পালানোর চেষ্টায় থাকা সাবেক এমপি সরওয়ার জাহান গ্রেপ্তার ◈ তেল আমদানি এখনো পুরনো দামে, যুদ্ধ দীর্ঘ হলে পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা হবে: সালেহউদ্দিন আহমেদ ◈ ট্রাম্পের আকস্মিক জি-সেভেন সম্মেলন ত্যাগ: ইরান-ইসরায়েল নয়, আরও বড় কিছু ঘটছে? ◈ জুলাই মাসের মধ্যে `জাতীয় সনদ' তৈরি করতে পারবো: আলী রীয়াজ ◈ ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বয়কট করল জামায়াতে ইসলামী ◈ নেতানিয়াহুর ঔদ্ধত্যে ইসরায়েলের সামরিক অহংকার চূর্ণ, ইতিহাসে ফিরছেন আহমদ চালাবির ছায়া:হামিদ মীর ◈ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জি-৭ নেতাদের বিবৃতি: ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান, ইরানকে ‘সন্ত্রাসের উৎস’ আখ্যা ◈ ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ২১ মুসলিম দেশ ◈ ভয়াবহ যুদ্ধের ই‌ঙ্গিত দি‌য়ে  ইরা‌নের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছাড়তে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ ইসরায়েল ইরানে পরমাণু বোমা ফেললেই, পাকিস্তান পরমাণু হামলা চালাবে নেতানিয়াহুর দেশে, এবার কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?

প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০২৩, ০১:৫৭ রাত
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০২৩, ০১:৫৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খেলা ও রাজনীতি পছন্দ-অপছন্দের পেছনে অনেক কারণ থাকে 

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন: প্রথমেই বলে রাখি, আমি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল খেলা দেখি নাই। দেখি নাই মানে টাইমিং মিলে নাই তাই দেখি নাই। ঘুম থেকে উঠে স্কোর দেখে আর আগ্রহ জন্মায় নাই খেলার বাকিটুকু দেখার। তবে ফেসবুক স্ক্রল করে বুঝলাম বাংলাদেশের মানুষের বিশাল অংশ ভারতের পরাজয়ে ব্যাপক খুশি। কিন্তু এর মানে এই না এরা সবাই অস্ট্রেলিয়া সাপোর্টার। এর মানে মনে হলো এরা ভারতের পরাজয় কামনাকারী (সবাই সম্ভবত হেট্রেড হেটার্স না, অনেকে আছে নানা কারণে অপছন্দ করে, তাই ভারতের জয়কে উদযাপন করে না এই টাইপের)। ক্রীড়া মানুষের ভেতরের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, প্রতিযোগিতার মনভোব, দেশাত্ববোধ, স্থানীয়তা অনেক গুলো ফ্যাক্টর মিলে একধরনের পছন্দ-অপছন্দ তৈরি করে। 

এই যেমন কৈশোরে আমি পাকিস্তান দলকে খুবই অপছন্দ করতাম। হয়তো পাকিস্তানিদের প্রতি আমাদের একধরনের কালেকটিভ হেট্রেড আছে যার পেছনে দুই দেশের রক্তাক্ত ইতিহাস প্রভাব বিস্তার করে থাকতে পারে। কিন্ত বয়স বাড়ার সঙ্গে নিজের ভেতর সহিষ্ণুতা যত বাড়লো ততই আমি পাকিস্তানের খেলা উপভোগ করতে লাগলাম। খেয়াল করলাম, দেশ হিসাবে পাকিস্তানের অনেক নীতিকে অপছন্দ করেও খেলা উপভোগ করা যায়। ওয়াসিম আকরামের বোলিং দেখার আনন্দ যেন অন্যরকম অনুভূতি। একইভাবে ভারত দলের প্রতি টেন্ডুলকার থাকাকালীন আমি অপছন্দ কাজ করতো। সবসময় টেন্ডুলকার খারাপ করুক, এটা কামনা করতাম। কারণ আমার পছন্দের খেলোয়াড় ‘লারা’। 

লারা-টেন্ডুলকার মানেই ক্রিকেট বিশ্ব দুই ভাগ আর আমি লারার পক্ষে। পরে বুঝলাম, লারা খেলার এক্সাইটমেন্ট কিন্তু খেলাটাকে টেন্ডুলকারের মত রিলিজিয়াসলি সে নেয় না। তারপর থেকে টেন্ডুলকারকেও ভালো লাগতে শুরু করলো। কিন্তু আইসিসিতে ভারতের আধিপত্য, ক্রিকেট খেলায় অতিমাত্রায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ (এই দেশে খেলতে যাবো, ওই দেশে যাবো না), ক্রিকেটে উগ্র জাতীয়তাবাদি চেতনা ইনফিউজ করা সব মিলিয়ে ভারত নিয়ে আমার অবস্থান তারা ভালো খেলুক, কিন্তু কাপ না জিতুক। বলতে পারেন এক অদ্ভুত বৈপরিত্য। এখানে ‘ভালো খেলুক’ এটা হচ্ছে ক্রিকেটের জয়। আর কাপ না জিতুক সেটা হচ্ছে খেলাকে উগ্র জাতীয়তাবাদি উপাদানে যাতে ব্যবহার করতে না পারে সেই অবস্থান। নিরেপক্ষভাবে বললে, অস্ট্রেলিয়ার এই দল থেকে ক্রিকেটিয় দক্ষতায় ভারতের দল শক্তিশালী। তাই ফাইনালে ভারতের পরাজয় এক অর্থে ফেভারিট দল জিতেছে, এমন না বরং ভারত চাপে কলাপস করেছে, এমন। হয়তো এক অর্থে ঠিকই আছেÑ ভারতের ক্ষমতাসীনরা এটাকে উগ্র জাতীয়তাবাদে ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে না। শুধু ক্রিকেটিয় কারণ হিসাবে দেখলে এই বিশ্বকাপে সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি, বোলার শামী-দু’জনই ভারতের। হয়তো দেশের মাটি, দর্শক এসব এডভান্টেজ ছিলো কিন্ত তবুও বলতে হয়Ñ ভারতের পরাজয় ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ কিন্তু এটাকে হেট্রেড হিসাবে দেখার কিছু নাই। বরং ভারতের নিজের জন্যই রিয়েলিটি চেকÑ কীভাবে নার্ভ চেক রাখতে হয় বড় ইভেন্টে। আমাদের ভাতৃপ্রতিম প্রতিবেশি হিসাবে ভারতের সঙ্গে আমাদের কালচারাল সিমিলারিটি আছে। তাই ভারতের প্রতি আমাদের একটা রিজিওনাল সমর্থন কাজ করার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে এটার উলটো দেখার কারণ সম্ভবত মানুষ আসলে খেলাকে এখনো উপভোগের পর্যায়ে নিতে পারেনি। উপমহাদেশে  অন্য সেক্টর ডেভেলপ না করায় আমরা খেলাকে রাজনীতি, ইতিহাস, অর্থনীতি সব বৈরিতার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। 

এই যে আমরা প্রতিবেশিকে বাদ দিয়ে আমাদের কলোনিয়াল প্রভুদের অফসুট অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করছি, এটা সম্ভবত ইংগিত দেয়Ñ আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস সবকিছু ভারত এমনভাবে অকিউপাই করে রাখছে যে তাদের প্রতি প্রতিবাদ করার অসামর্থ্য আমাদের অনেকের ভেতর জমতে জমতে ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। তাই ভারতের পরাজয়কে আমরা খেলা হিসাবে দেখছি নাÑ দেখছি আধিপত্যবাদের পরাজয় হিসাবে এবং এর জন্য আমরা অস্ট্রেলিয়ার মতো নাক উচু ও আমাদের ‘খুব বেশি বন্ধু না’ এমন দেশের সমর্থনকে আসলে দেখছি। অতিরিক্ত আধিপত্যবাদ মানুষকে মনের অজান্তেই অপেক্ষাকৃত কম আধিপত্যবাদীর দিকে ঠেলে দেয়। সম্ভবত একই কারণে আমেরিকা সারাবিশ্বে এতো অপকর্ম করার পরেও এক শ্রেণি আমেরিকাকে তার ভোট ও ভাতের অধিকারের ত্রাতা ভাবছে। সম্ভবত দেশিয় আধিপত্যবাদীদের প্রতিনিয়ত এক্সপেরিয়েন্স করা প্রবল চাপ থেকে আমেরিকার সূক্ষ্ম বৈশ্বিক আধিপত্যবাদিতাকে তারা একধরনের মুক্তি হিসাবে দেখছে। 

ঠিক যেমন ভারতের পরাজয় সবার কাছে ক্রিকেটিয় পরাজয় না, আধিপত্যকে রিজেক্ট করার প্রয়াস। বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক একটা টুর্ণামেন্টকে ‘টু মাচ ইন্ডিয়ানাইজেশন’ করায় শুধু  উপমহাদেশ বলে না, বিশ্বের নানা দেশেও মানুষকে দেখলাম ভারতের পরাজয় কামনা করতে। ভারতের আয়োজকদের এটাও ভাবা উচিত। খেলা ও রাজনীতি দুটোরই পছন্দ-অপছন্দের পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে এবং সেইসব কারণের অনেকগুলো একইরকম। তাই সূক্ষ্মভাবে খেলার সমর্থন ও অসমর্থন কেন করে এটা বুঝলে রাজনীতিও বুঝা যায়।

লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব মেইন, যুক্তরাষ্ট্র

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়