গরীব নেওয়াজ: প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের সবচেয়ে বড়ো শত্রু কে? লুসাকার চিড়িয়াখানার তথ্য দিয়ে আগেই দেখিয়েছি, পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জীব হচ্ছে মানুষ। সেখানে যে তথ্য দিয়েছি তা হচ্ছে, লুসাকার বিশাল চিড়িয়াখানায় বহু জীবজন্তুর ঘর আছে। প্রত্যেক ঘরের ওপর লেখা রয়েছে সে ঘরে থাকা জীবের নাম। একটি ঘরের ওপরে লেখা রয়েছে, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জীব’। জীবটি সে ঘরে ঢুকে দেখতে হয়। ঘরে ঢুকে দেখবেন সেখানে কোনো জীব নেই। সেখানে আপনার সামনে রয়েছে বিশাল একটা আয়না। তার মধ্যে দেখুন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জীবটি।
আসলে মানুষের চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কোনো জীব নেই, মানুষের চেয়ে মানুষের বড়ো শত্রু আর কেউ নেই। সৃষ্টির শুরু হতে আজ পর্যন্ত মানুষ যতো মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষ যতো মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, শোষণ-পীড়ন করেছে তা আর কেউ করেনি। সম্পদ, প্রভুত্ব, হিংসা-বিদ্বেষ, নারী, ধর্ম বিশ্বাস ইত্যাদি স্বার্থের জন্য মানুষ রক্তের হোলি খেলায় মেতেছে। যুদ্ধ করে দেশের পর দেশ জয় করেছে, লুটতরাজ করেছে, জুলুম করেছে, আর নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে রক্তের বন্যা বয়ে দিয়েছে। এই সভ্য মানুষ আমেরিকা দখল করে উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পাঁচ কোটি, আর দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে দশ কোটি মানুষ হত্যা করেছে। দেশ জয় করতে গিয়ে এক চেঙ্গিস খানচার কোটি মানুষ হত্যা করেছে। হালাকু খান, অশোক, তৈমুর লং, হিটলার অগণিত মানুষ হত্যা করেছে। এরকম অসংখ্য ঘাতক রয়েছে ইতিহাসের প্রতিটি পাতায়।
ধর্মের দিক দিয়ে দেখতে গেলে হাবিল-কাবিল হতেই এই হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে। আর নৃবিজ্ঞানের দিক দিয়ে বলতে গেলে এই প্রজাতির মানুষ ছাড়াও অতীতে আরও অনেক ধরনের মানুষ উদ্ভব হয়েছিল। আমাদের এই হোমো-সেপিয়েন্স-সেপিয়েন্স প্রজাতির মানুষ বা তাদের পূর্বসূরীর হাতে অন্য অনেক ধরনের মানুষ নিধন হয়েছে। যুগে-যুগে দেশে-দেশে মানুষ যে কত লক্ষ-কোটি মানুষকে হত্যা করেছে তার অংশ বিশেষের ফিরিস্তি দিতে গেলে বিশাল কয়েকটি বই লিখতে হবে। আজ পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিদিন মানুষ মানুষের হাতে নিহত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, অত্যাচারিত হচ্ছে। এতো নিষ্ঠুরতা, এতো নৃশংসতা-বর্বরতা আর কারও মধ্যে নেই।
এই মানুষই নানাভাবে মানুষকে বন্দি করে হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে দাস বানিয়ে গরু-ছাগলের মতো দাস বেচাকেনার হাঁটে নিয়ে গিয়ে বেচাকেনা করেছে। ঘরের নারীকেও বন্দি করে অসহনীয় অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জীবন্ত নারীকে স্বামীর চিতায় তুলে দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। লক্ষ-লক্ষ নারীকে ডাইনি বলে পুড়িয়ে ও নানাভাবে হত্যা করেছে। মানুষ একমাত্র জীব যে ধর্ষণ করে ধর্ষিতাকে হত্যা করে। আবার নারীও যখন সুযোগ পায়, তখন সেও কোনো ছাড় দেয় না। দেখা যাচ্ছে, মানুষের জিনেই সমস্যা রয়েছে। বাঘ সিংহ ক্ষুধার্ত না হলে পাশ দিয়ে হরিণ বা মানুষ যেই যাক না কেন তার দিকে ফিরেও তাকাবে না। কিন্তু মানুষের ক্ষুধার কোনো শেষ নেই। সারা পৃথিবীর সম্পদ কুক্ষিগত করলেও তার ক্ষুধা মিটবে না। এ ধরনের একটা নিকৃষ্ট, লোভী ও নিষ্ঠুর জীবকে কেন যে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয় তা বুঝি না। এটা আত্মপ্রবঞ্চনা বা আত্মতুষ্টি ছাড়া আর কিছু না। ফেসবুকে ৮-১০-২৩ প্রকাশিত হয়েছে।