শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও) ◈ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে আইভী ◈ ‘মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ জবাব দিলেন আসিফ নজরুল ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার রিপোর্ট দাখিল সোমবার ◈ জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায় : ডা. জাহিদ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল ◈ যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়, নিরাপত্তা জোরদার, বাড়তি সতর্কতা ◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ

প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৩২ রাত
আপডেট : ০৪ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৩২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গরিবের ইলিশকাহন!

মনজুরুল হক

মনজুরুল হক: ইলিশ মাছ কেনা এখন মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টকর, আর গরিব মানুষের জন্য অসম্ভব হয়ে গেছে। এই কথাটি শতশত বার পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে। কেন লেখা হচ্ছে? কারণ ইলিশ মাছ পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগেও গরিবের অবলম্বন ছিলো। সে সময়কার গরিব মানুষ গরু-খাসির মাংস কিনতে পারতো না। তাদের অবলম্বন ছিলো ইলিশ আর চুনোপুঁটি। সেই সহজলভ্য সস্তা ইলিশ এখন ধনীদের বিলাস সামগ্রী। মধ্যবিত্তের ঐতিহ্য বিলাস। কেন এমন হলো? অর্থনীতির সূত্রানুযায়ী পণ্যের উৎপাদন কমলে মূল্য বাড়ে। আবার পণ্যের অতি ব্যবহারেও মূল্য বাড়ে। অর্থাৎ চাহিদা অনুপাতে দাম বৃদ্ধি ঘটে। 

[১] ইলিশের ক্ষেত্রে সেসব কিছু হয়নি। বরং পঁচিশ বছর আগের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে। তারপরও ইলশের দাম নাগালের বাইরে। মতলববাজরা এর পেছনে ব্যাখ্যা হাজির করেÑ [১] ইলিশের ব্যবহারের বহুমুখীনতা বেড়েছে। [২] ইলিশ কম আমদানি হচ্ছে। [৩] ভারতে ও ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এর সঙ্গে দালাল মিডিয়ার কেউ কেউ ব্যাখ্যা দেয়। [৪] ইলিশের দাম আগেও বেশিই ছিলো। এই চারটি ব্যাখ্যাই ধাপ্পাবাজি। স্রেফ গোঁজামিল। দাম বাড়ার মূল কারণকে আড়াল করার মেঠো বজ্জাতি। নিশ্চিন্ত শয়তানি। [২] বছরে তিনবার ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। বিশেষ করে অক্টোবর-নভেম্বরে। মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একটি ইলিশ একবারে গড়ে দশ থেকে বারো লক্ষ ডিম ছাড়ে। সে অনুপাতে ইলিশের উৎপাদন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি।

[৩] এবার নম্বর ধরে খণ্ডন করা যাক। [এক] মোটেও ইলিশের বহুমুখীনতা বা ব্যবহার বাড়েনি। বরং ইলিশ বিশেষ কিছু মানুষ ছাড়া বাকিদের কেনার সামর্থ্য নেই। [দুই] ইলিশের আমদানিও এতোটুকু কমেনি। বরং গত কয়েক বছরের তুলনায় উৎপাদন ৩০ শতাংশ বেড়েছে। [তিন] ভারতে কতো টন ইলিশ যাচ্ছে? দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ ভারতে যাওয়ার পরও বাজারে ইলিশের সামান্যতম ঘাটতি নেই। সেটা প্রত্যেকটা বাজারে গেলেই বোঝা যাবে। [চার] ইলিশের দাম আগেও বেশি ছিলো বলেছে যে মিডিয়া, তাদের রিপোর্টার নিউজ এডিটররা সঠিক বলছেন? তাদের ইতিহাস বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। [৪] এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে ভারতের বাজারে কীভাবে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ’ টাকায় ইলিশ বিক্রি করছে? বাংলাদেশের বাজারে কেন বাচ্চা ইলিশ ৫শ’ থেকে ১২শ’, আর মাঝারি বা বড় ইলিশ ১২শ’ থেকে ২ হাজার টাকা? খুব সিম্পল কারণ-বাজার সিন্ডিকেটের চালবাজি। যে দেশে সামান্য ডিমের ব্যাপারিরা সরকারকে জিম্মি করে দাম বাড়িয়ে এক সপ্তাহেই কয়েক হাজার কোটি কামিয়ে নেয়, সে দেশে ইলিশের মতো একটা ঐতিহ্যবাহী মাছকে টার্গেট করবে জানা কথা। অনেক আগে থেকেই ইলিশকে দুঃষ্পাপ্য করে ফেলা হয়েছিলো। এই সরকারের আমলে সিন্ডিকেট জামাই আদর পেয়ে ঘাড় ছেড়ে মাথায় চড়ে বসেছে। তারা চাইলে যেকোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট ঘটিয়ে হাজার কোটি বাগিয়ে নিচ্ছে।

[৫] ইলিশ প্রসঙ্গে সরকার কেন আসছে? আসছে এ কারণে যে সরকার গত একবছর ধরে আগামী নির্বাচন নিয়ে এতোটাই ব্যতিব্যস্ত যে তাদের এসব দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই। কে কোথায় সিন্ডিকেট করে কোন পণ্য থেকে কত হাজার কোটি হাতিয়ে নিলো, অত সুক্ষ্ম বিষয় ভাবার টাইম নেই সরকারের। গত পনের বছরে আওয়ামী লীগ সরকার এতো নিপীড়ন-নির্যাতন, শোষণ-বঞ্চনা, অনাচার-অবিচার করেছে, এতো বেশি দুর্নীতি করেছে এবং স্টেকহোল্ডারদের করতে দিয়েছে, তারা ক্ষমতাচ্যুত হলে তাদের পরিণতি কী হবে সেসব ভেবেই তারা শঙ্কিত। তাদের প্রধান তিনটি শক্তিশালী বেনিফিশিয়ারি তাদের হাতে আছে বলে তারা অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি করতে পেরেছে। যেকোনোভাবে সরকার বদল হলে ওই তিন বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠির অনেকেরই পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। কী ভয়াবহ পরিণতি হবে সেটা তারা আন্দাজ করতে পারছে বলেই ওই বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠি প্রকাশ্যে বর্তমান সরকারকে চিরস্থায়ীঁভাবে ক্ষমতায় রাখার ঘোষণাও দিয়েছে।

[৬] ইলিশ মাছসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেটকে সরকার ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে রেখেছে। মাছের মধ্যে ইলিশই দীর্ঘদিন কোল্ডস্টোরে সংরক্ষণ করা যায়। বাজার সিন্ডিকেট মোকাম থেকে তিন-চারশ টাকা দরে ইলিশ কিনে কোল্ডস্টোরে জমা করে। তারপর সারা বছর অল্প অল্প করে বাজারে ছেড়ে চড়া দামে বিক্রি করে। কাঁচাবাজারে খুচরা ব্যাপারিরাও বরফ দিয়ে প্রায় সাত-আট দিন ইলিশ বিক্রয়যোগ্য রাখতে পারে। এখন বাম্পার উৎপাদন হলেও বাজার সয়লাব হয়ে স্বাভাবিক নিয়মে বাজারে ইলিশের যোগান অতিরিক্ত হতে দেয় না। তাহলে দাম করবে কীভাবে? কমছে না। কমবেও না। আজকে যদি এক ছটাক ইলিশও রপ্তানি না হয় তার পরও বাজারে ইলিশের দাম কমবে না। [৭] আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে কোল্ডস্টোরে শুধু আলু রাখা হতো। যখন থেকে ইলিশ রাখার কায়দা শিখেছে, তখন থেকেই ইলিশ বাজার সিন্ডিকেটের অস্ত্র হয়ে উঠেছে। ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেও ভরা মৌসুমে বাজারে তো বটেই, রাস্তাঘাটে, অলিতে-গলিতে ইলিশ নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতো। সে সময় যোগান বেড়ে গেলে দাম কমে যেতো। সারা বছর না পারলেও ভরা মৌসুমে গরিব মানুষও ইলিশ কিনতে পারতো।

[৮] বিশ্বে যত ইলিশ ধরা পড়ে তার ৭০ ভাগই বাংলাদেশে। বাকি ৩০ ভাগ ইলিশ উৎপাদন করে মিয়ানমার ও ভারত। এই হিসাবে ভারত কিংবা মিয়ানমারে ৩০ শতাংশ উৎপাদন হওয়ার পর দাম সাধারণের নাগালে থাকলেও ৭০ শতাংশ উৎপাদনের দেশ বাংলাদেশে থাকে না। এর পেছনে যে নিরেট শয়তানি-বজ্জাতি সেটা বুঝতে রকেট সায়েন্স লাগে না। [৯] আগেই বলা হয়েছে কেন সরকার বাজার সিন্ডিকেটকে চটায় না, কেন সরকার বাজার সিন্ডিকেটকে লুটপাট করতে দেয়। তাই কেন বাঙালির পাত থেকে ইলিশ হাওয়া হয়ে গেছে তা নিয়ে হা-পিত্যেশ করে লাভ নেই। যতোদিন সরকারের ছত্রছায়ায় লুটেরা ডাকাত বাজার সিন্ডিকেটের ক্ষমতা থাকবে ততোদিন ইলিশসহ অন্যান্য সকল পণ্যের দাম গরিব মানুষের নাগালের বাইরেই থাকবে। আড়ৎদারের দাদন, জালের সূতোর দাম বেশি, নৌকার তেলের চড়া দাম, বছরের তিন-সাড়ে তিন মাস মাছ ধরা নিষেধ এসব ঠুঁটো যুক্তি। মূল কথা ওই বাজার সিন্ডিকেট। যাদের মাথার ওপর সরকারের প্রশ্রয়ের হাত। প্রতিকার হিসাবে তপ্ত ঘিলুর বিশেষজ্ঞরা এটা-ওটা নানান উপায় বয়ান করে কিন্তু কেউই মূল জায়গা সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার কথা বলে না। অর্থাৎ উজির-নাজির-মন্ত্রী-সান্ত্রী-লেঠেল-কোতওয়াল সব একজোট। লেখক ও ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়