শিরোনাম
◈ ছাত্রলীগ পরিচয়ে নির্যাতনের অংশীদার হতেন ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা’, দিলেন অনেকের পরিচয়: আবদুল কাদেরের ফেসবুক পোস্ট ◈ সি‌লেট স্টে‌ডিয়া‌মে হ‌বে বাংলা‌দেশ - নেদারল্যান্ডস সিরিজের সব ম‌্যাচ ◈ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে সরকার পতন: এক বছরে বৈষম্য কতটা দূর হলো? ◈ ইয়েমেন উপকূলে শরণার্থীবোঝাই নৌকাডুবি, ৫৪ লাশ উদ্ধার ◈ ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী নীতি আ‌মে‌রিকার  রাজ‌নৈ‌তিক ঝু‌কি বাড়া‌চ্ছে: অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত ◈ প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনডিএ: কেন, কিভাবে, কতটা যৌক্তিক? ◈ ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতির অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ: আশিক চৌধুরী ◈ যশোরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপির ৬ নেতা, কর্মীকে বহিঃস্কার ◈ জুয়ার আসর থেকে ইউনিয়ন জামাতের সভাপতি ও ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ১৪ ◈ ৬০০০ রানের মাইলফলকে জো রুট

প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর, ২০২৩, ০১:০৯ রাত
আপডেট : ০২ অক্টোবর, ২০২৩, ০১:০৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডিভাইড অ্যান্ড রুল

জাকির তালুকদার

জাকির তালুকদার: উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতার দায়ভার ব্রিটিশদের কাঁধে তুলে দিয়ে আমাদের হিন্দু, মুসলমান নেতা, বুদ্ধিজীবী, ইতিহাসবিদরা নিজ নিজ ধর্মের পাণ্ডাদের কুখ্যাতি ঢেকে রেখেছেন অদ্যাবধি। ইংরেজরা এই সাম্প্রদায়িকতা কাজে লাগিয়েছে সেকথা ঠিক। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা তারা দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তৈরি অবস্থাতেই পেয়েছিল বলে আমার ধারণা। একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম রবীন্দ্রনাথও এমনটাই মনে করতেন। জয়া চ্যাটার্জি সুনির্দিষ্টভাবে বলেন পলাশীর পরে লেখাপড়াজানা হিন্দু ভদ্রলোকদের কারণে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব। সেটি ঠিক ধর্মীয় কারণে নয়। উৎপত্তিটা নিম্নবর্গের হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমানদেরও মানুষ মনে না করা। আরেকজন জানালেন বাংলায় আনুষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতার শুরু ১৭৯৩ সালে। 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালুর দিন থেকে। এখানেও কারণটি সরাসরি ধর্ম নয়। জমিদারি, শিক্ষা এবং বিত্ত। রবীন্দ্রনাথ সরাসরি না বললেও শিক্ষিত ভদ্দরলোকদের কূপমণ্ডুকতা, অন্যদের তাচ্ছিল্য করা এবং অপাংক্তেয় করে রাখাকেই সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে দায়ী করেছিলেন। আর সেই সময় শিক্ষিত ভদ্রলোক মানে হিন্দু-বাঙালিই বটে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ বঙ্কিমের আমলেই ঘটেছে। তবে তা হিন্দু বাঙালি জাতীয়তাবাদই রয়ে গিয়েছিল শত বছর। বঙ্কিমের আনন্দমঠ থেকে দীক্ষা নিয়ে গড়ে উঠেছিল বাংলার বিপ্লবী দল। তাদের আত্মত্যাগ অসামান্য। এই তো কয়েকদিন আগে পেরিয়ে গেল বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মদিন। চট্টগ্রাম পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের শহীদ প্রীতিলতা। ক্লাব আক্রমণ কেন? 

অপমানের প্রতিবিধান করা। সেই ক্লাবের ফটকে লেখা থাকত No entry for natives and dogs. কুকুর এবং দেশিয় লোকদের প্রবেশ নিষেধ। এমন অপমানজনক সাইনবোর্ড কতদিন সহ্য করা যায়? সেই অপমান মুছে ফেলতেই প্রীতিলতার আত্মাহুতি। লাল সালাম। এদিকে মীজানুর রহমান (মীজানুর রহমানের ত্রিমাত্রিক পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক হিসাবে খ্যাত এবং বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম ধারক হিসাবে শ্রদ্ধেয়) এর ‘কৃষ্ণ ষোলোই’ বইতে পাচ্ছি আরেক রকম অপমানের কথা। উল্লেখ্য মীজানুর রহমান তাঁর জীবনের প্রথম ১৭ বছর কাটিয়েছিলেন কলকাতায়। ছেচল্লিশের দাঙ্গা শুরুর দিন সকালে দুধ আর খবরের কাগজ কিনতে গিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি। জীবন হাতে নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে এখানে-ওখানে আশ্রয় নেওয়া আর আহত হয়েও নিহত না হওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে চারদিন পরে বাড়ি ফিরতে পারা মীজানুর রহমান কলকাতার দাঙ্গার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীও। 

তার সেই দিনগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বই ‘কৃষ্ণ ষোলোই’। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে লেখকের মাকে এবং তাদের মহল্লার বিষ্ণুচরণ ঘোষ মহাশয়কে। বিষ্ণুচরণ ঘোষ বন্দুক হাতে মীজানুর রহমানদের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে সেই বাড়ি আক্রমণ করতে আসা উগ্র হিন্দুদের ঠেকিয়ে রেখেছিলেন চারদিন ধরে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন বাঙালি মুসলিম পরিবারটিকে। অপমানের কথা বলতে গিয়ে এত কথা বলতে হলো এই কারণে কেউ যাতে মীজানুর রহমানকে সাম্প্রদায়িক মনে না করেন। সেই মীজানুর রহমান অপমানিত বোধ করতেন হ্যারিসন রোডের ‘দিলখোশ কেবিন’ এর সাইনবোর্ড দেখে। লেখা ছিলÑ ‘কেবলমাত্র হিন্দু মহাশয়দের জলযোগের উত্তম ব্যবস্থা’। ইউরোপিয়ান ক্লাবে সাইনবোর্ডে লেখা ছিল কারা কারা ঢুকতে পারবে না। আর দিলখোশ কেবিনে লেখা ছিল কারা শুধু ঢুকতে পারবে। একটিতে একটি বিশাল জাতিকে ছোট করা। আরেকটিতে একটি পুরো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ছোট করা। অপমানিত মুসলমানরা অবশ্য সেখানে আক্রমণ চালাতে যায়নি। লেখক: কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়