শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও) ◈ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে আইভী ◈ ‘মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ জবাব দিলেন আসিফ নজরুল ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার রিপোর্ট দাখিল সোমবার ◈ জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায় : ডা. জাহিদ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল ◈ যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়, নিরাপত্তা জোরদার, বাড়তি সতর্কতা ◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:০১ রাত
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:০১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলা বাঙালির মাতৃভাষা, প্রশ্ন হচ্ছে, বাঙালি কে?

গরীব নেওয়াজ

গরীব নেওয়াজ: আমাদের দেশের খুবই নামকরা এক পণ্ডিত ব্যক্তি একদিন এক সেমিনারে বললেন, বাঙালি কোনোদিনই নিজেদেরকে শাসন করেনি, বাঙালি চিরদিনই বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। অন্য আর একজন ভিন্ন এক আলোচনায় বললেন, সিরাজদৌলা বাঙালি ছিলেন না। প্রথমোক্ত পণ্ডিতকে এরপর একদিন এক ঘরোয়া পরিবেশে পেয়ে বললাম, আপনি যে বলেছিলেন বাঙালি কোনোদিন শাসন ক্ষমতায় ছিল না, তারা চিরকালই বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত হয়েছে--এ কথার ব্যাখ্যা কী। তিনি বললেন, এটা তো অতি সাধারণ কথা, বহিরাগত গুপ্ত বংশ, পালবংশ, সেনবংশ, তারপর তুর্কি, পাঠান, মুঘল, ইংরেজ ইত্যাদিরা একের পর এক বাঙালিদের শাসন করেছে। আমি সবিনয়ে জানতে চাইলাম, একটু বলবেন বাঙালি কে। তিনি বললেন, কেন আপনি আমি আমরা সবাই বাঙালি। আমি বললাম, দেখুন গুপ্ত, সেন, তুর্কি, পাঠান, মুঘলরা যদি বাঙালি না হয়, সিরাজদৌলা যদি বাঙালি না হয়, তাহলে আপনি আমি কেউই তো বাঙালি নই। এবার তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। আমি বললাম, দেখুন আমরা কেউই এখানকার আদি অধিবাসী নই। প্রথমে এখানে আসে জাভা অঞ্চলে উদ্ভূত অস্ট্রিক জাতি, তারপর আসে দ্রাবিড়রা। 

অস্ট্রিক-দ্রাবিড়ের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে এক নতুন জাতি। আমাদের দেশে কোল, ভীল, সাঁওতাল, শবর, হাড়ি, ডোম, গারো, চণ্ডাল ইত্যাদি যেসব অন্ত্যজ জাতি বাস করে তাদেরকেই বলা যায় এদেশের আদিম অধিবাসীদের বংশধর। এরপর উত্তর-পূর্ব অঞ্চল দিয়ে মঙ্গোলীয়রা এবং আফগানিস্তানের পথ ধরে আর্যরা এখানে আসে। আর্যদের পরপরই পারসিক ও শক জাতিরা এখানে আসে। ক্রমে-ক্রমে তুর্কি, ইরানি, আফগান, মুঘল, আরবি-সহ মধ্যপ্রাচ্েযর বিভিন্ন দেশের এবং পর্তুগিজ-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে এসে বসবাস শুরু করে। এক ইংরেজ ছাড়া যারাই এখানে এসেছে, তারাই এ মাটিকে নিজের করে নিয়েছে, মিশে গিয়েছে এদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে। স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত কেউই তা পারেনি। বিভিন্ন নরগোষ্ঠীর রক্তের ধারা এমনভাবে আমাদের মধ্যে  সংমিশ্রিত হয়েছে যে, একই বাঙালির দেহের বিভিন্ন অংশ ভিন্ন-ভিন্ন জাতের মানুষের তথা রেসের পরিচয় বহন করছে। হয়তো তার হাতে আছে দ্রাবিড়ের ছাপ, আর কপালে মঙ্গোল, মুখে আর্য, মাথায় পারসিক, কোমরে অস্ট্রিকের ছাপ রয়েছে। এত বেশি সংকর জাতি পৃথিবীতে আর একটিও নেই। ইউরোপ-আমেরিকা বা মধ্য-এশিয়ায় একই ধরনের (ককেশাস) মানুষ, চীন-জাপান-কোরিয়া-সহ পূর্বের দেশগুলোতে একই রেসের (মঙ্গোল) মানুষ, আফ্রিকার অধিকাংশ এলাকায় একই জাতের (নিগ্রো) মানুষ, এমনকি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলেও একই ধরনের মানুষ বাস করে। শুধু আমরাই পৃথক, নির্দিষ্ট কোনো এক জাতের মানুষ নই আমরা। যত দূরের ও যত বেশি সংখ্যক রক্তের সংমিশ্রণ ঘটে, তত উৎকর্ষ মানুষ সৃষ্টি হয়। এর বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা পরে একসময় আলোচনা করব। আমাদের ভাষাও তো এই একই প্রক্রিয়ার ফসল একটি সংকর ভাষা।

ফল কথা হচ্ছে, বাইরের থেকে এসে যারাই এ মাটিকে আপন করে এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে বাঙালি জাতি গঠনে অবদান রেখেছে তারাই বাঙালি হয়েছে। গুপ্ত, সেন, তুর্কি, আফগান, মুঘল ইত্যাদি সবাই এখানে এসে যেহেতু মিশে গিয়েছে কাজেই তাদের কারও শাসনকেই বিদেশিদের শাসন বলা যাবে না। ওই সময় বাঙালি জাতির গঠন প্রক্রিয়া ঐ পর্যায়েই ছিল। এবং এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বহু বিহারি ও রোহিঙ্গা বাঙালি হয়ে যাচ্ছে। হয়তো দেখা যাবে দুই-এক পুরুষ পর তাদের মধ্য থেকেই বিশিষ্ট বাঙালি কবি-সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়েছে। আবার ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং করাচি, দিল্লি-সহ বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী অনেক বাঙালির বাঙালিত্ব খারিজ হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ শ' বছর পরে বাঙালি জাতির আজকের এই গঠন থাকবে না। 

আপনি আমিও একদিন কোনো এক জায়গা হতে এখানে এসেছি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চেয়ে বড়ো বাঙালি আর কে হতে পারে। শোনা যায়, কবিগুরুর পূর্ব পুরুষ কাশ্মীর হতে এবং বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ ইরাক হতে এসেছিলেন। সিরাজদৌলা ছিলেন আজ থেকে ১১/১২ পুরুষ পূর্বে। তাঁর কবর এ মাটিতে, তাঁর বংশধররাও এখানেই মিশে গিয়েছে। ১১/১২ পুরুষ পূর্বে আপনি নিজে বাঙালি ছিলেন তা কি বলতে পারবেন। আপনি আমিও তো এই প্রক্রিয়ায় কোনো এক জায়গা হতে এসে এখানকার মাটিকে আপন করে নিয়ে এখানকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে বাঙালি হয়েছি। দুইদিন আগে বা দুইদিন পরে। কাজেই সিরাজদৌলা বাঙালি ছিলেন না, বা বাঙালি চিরকাল বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, এধরনের আত্মঘাতী কথা বলা ঠিক নয়, তাতে নিজের অস্তিত্বই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এসব কথা শুনে সে পণ্ডিত ব্যক্তিটি লা-জওয়াব হয়ে গেলেন। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়