খালিদ খলিল: ‘মাল’ মানে কী? ‘মাল’ শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, ফারসি থেকে এসেছে আবার আরবি থেকেও এসেছে। সংস্কৃতে ‘মাল’-এর বেশ কয়েকটি অর্থ আছে। মাল অর্থ উন্নত ক্ষেত্র বা জমি। যেমন, মালভূমি। আবার মাল মানে কুস্তিগির বা মল্লযোদ্ধা। আবার ফারসি ‘মাল’ অর্থ মদ। আরবি ‘মাল’ অর্থ ক্রয়বিক্রয়ের দ্রব্য, ব্যবসায়ের জিনিস। পণ্যদ্রব্য। এমনকি আদালতেও অস্থাবর সম্পত্তি আটক করাকে বলা হয় মালক্রোক। মূল্যবান ধনসম্পদ রাখার কক্ষকে বলা হয় মালখানা।
আমি শব্দের উৎপত্তিতে খারাপ কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তবে একটি মানুষকে ‘মাল’ বলা অবশ্যই খারাপ তা সে মেয়েই হোক আর ছেলেই হোক। মেয়েদের ‘মাল’ বলার রেওয়াজ খারাপভাবে বেড়ে গেলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। এই সময় অনেকে হানাদার খান সাহেবদের মাল সাপ্লাই দিতো আবার মুরগি সাপ্লাইও দিত। বলা হতো ‘বেগ সাহেবের জন্য ভালো মাল পাঠাবেন। রোজ অন্তত একটা।’ ‘মাল’ বলতে এখানে বাঙালি মেয়েদের বোঝানো হয়েছে। সেই নোংরা রেওয়াজ এখনও রয়ে গেছে। এমনকি অনেকে না বুঝে যেখানে সেখানে যে কাউকে মাল বলেন। যেমন, ভাই আপনি আসলেই একটা জটিল মাল। ভাষার এই অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক। বাংলা ভাষার মতো সুললিত ও সুন্দর ভাষা পৃথিবীতে খুব কমই আছে।
‘মাল’ নিয়ে সংগীতে একটি সুমধুর রাগ আছে যার নাম ‘মালকোষ’। বাংলা ছন্দের নাম মালঝাঁপ। ‘মাল’ শব্দের সংযোগে একটি জোকস দিয়ে শেষ করতে চাই। সনদপত্রে এক ছাত্রের নাম লেখা হয়েছে : ‘শ্রী হরিবাল পাল’। উক্ত ছাত্র যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর দরখাস্ত করলো। তার দরখাস্তের ভাষা ছিল নিম্নরূপ, ‘হুজুরের নিকট আমার আকুল আবেদন এই যে, তিনি যেন ‘হরিবাল’ এর ‘বাল’ কাটিয়া ‘লাল’ করিয়া, ‘পাল’ তুলিয়া ‘মাল’ করিয়া দিতে আজ্ঞা হন। কারণ আমার নাম, ‘হরিলাল মাল’।